রেজাউল কবির রাজিব, টঙ্গী ইজতেমা ময়দান থেকে: লাখো মুসল্লীর জিকির আজগার ও তাবলীগ মুরব্বীদের গুরুত্বপূর্ণ বয়ান প্রচারের মধ্য দিয়ে ধর্মীয় ভাবগম্ভীর পরিবেশে গতকাল শনিবার বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় দিন অতিবাহিত হয়েছে। আগামীকাল রোববার জোহরের নামাজের আগে যে কোন সময় বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের আখেরী মোনাজাতের মধ্য দিয়ে বিশ্ব তাবলীগ জামাতের এই বিশাল মুসলিম মহা সমাবেশ বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব শেষ হবে।
মাঝে ৪দিন বিরতি দিয়ে ১৬ জানুয়ারি থেকে শুরু হবে ৩দিন ব্যাপী বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব।
আখেরী মোনাজাতে অংশ নিতে গতকাল সন্ধ্যা থেকেই দূর দূরান্ত থেকে মুসল্লিরা ট্রেন, বাস, ট্রাক, লঞ্চ, নৌকাযোগে ও পায়ে হেঁটে দলে দলে ইজতেমাস্থলে আসতে শুরু করেছেন। মুসল্লীদের আখেরী মোনাজাতে অংশ নিতে ইজতেমা ময়দানে আসার এ স্রোত মোনাজাতের আগ পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে বলে জানান ইজতেমা আয়োজক কমিটি।
গতকাল শনিবার ইজতেমা মাঠে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ১৬০ একর এলাকা বিস্তৃত বাঁশ ও চটের সামিয়ানার নিচে লাখো মুসল্লী তাদের নির্দিষ্ট খিত্তায় সুশৃঙ্খলভাবে অবস্থান নিয়ে এবাদত বন্দেগী করছেন। ইজতেমা ময়দানের সামিয়ানার নিচে ঠাই না পেয়ে লাখো মুসল্লী ইজতেমা ময়দানের চারিদিকে নিজস্ব ব্যবস্থায় তাবু ও প্লাষ্টিকের কাগজের সামিয়ানা টাঙ্গিয়ে ইজতেমার ইবাদত বন্দেগিতে শরীক হয়েছেন।
বিএনপির ডাকা টানা অবরোধের কারণে মুসল্লীদের যাতায়াতে নানাবিদ দুর্ভোগ হলেও ইজতেমা মাঠে আগত মুসল্লীদের আগমন বিলম্ব হলেও নির্দিষ্ট তাবলীগ জামাত বন্দী মুসল্লীরা ইতিমধ্যে ইজতেমা ময়দানে এসে পৌঁছেছেন।
প্রথম পর্বের আখেরী মোনাজাতে রাষ্ট্রপতি, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সংসদ সদস্য, সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা, সরকারি-বেসরকারি উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা ও ইসলামী দেশসমূহের কূটনীতিক বৃন্দ সহ ভিআইপিরা মঞ্চের পাশে ইজতেমা ময়দানে বিশেষ মঞ্চে মোনাজাতে অংশ নিবেন বলে জানা গেছে। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেত্রী মোনাজাতে অংশ নিবেন বলে জানা গেছে। তবে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া মোনাজাতে অংশ নিবেন কিনা এ ব্যাপারে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কোন সূত্র থেকে আভাস পাওয়া যায়নি।
বয়ানঃ ইজতেমার ময়দানে বয়ানে বিশ্বের ইসলামী চিন্তাবিদ ও বুজুর্গরা বলেন, দ্বীন ও ইসলামের দাওয়াত আল্লাহ পাকের অসীম রহমতে অনুগ্রহে তাবলীগ জামাতের মাধ্যমে সারা দুনিয়ায় দ্বীন ইসলামে পুনরুজ্জীবিত করে নরনারীর মধ্যে দাওয়াত পৌঁছে দেয়ার কাজে হযরত মোহাম্মদ (সা:) উম্মতের জিম্মাদার হিসাবে ঈমানিয়াত, ইবাদত, মোয়ামেলাত ও আখলাক অনুশীলনে জানমাল আল্লাহর রাস্তায় ছেড়ে দিয়ে জিন্দেগীতে কিছু সময় দাওয়াত, তালিম, জিকির, নামাজে মশগুল হওয়া প্রয়োজন। বাংলা, আরবি, ফার্সি, উর্দ্দুসহ কয়েকটি ভাষায় তাবলীগ জামাতের মুুরুব্বীদের এসব বয়ান তরজমা করে মুসল্লীদের মাঝে শোনানো হচ্ছে।
বয়ানের তাৎক্ষণিক অনুবাদঃ বিশ্ব ইজতেমায় বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের তাবলিগ মারকাজের শুরা সদস্যগণ ও বুজর্গরা বয়ান পেশ করছেন। মূল বয়ান উর্দূতে হলেও বাংলা, ইংরেজী, আরবি, তামিল, মালয়, তুর্কি ও ফরাসি ভাষায় তাৎক্ষণিক অনুবাদ করে মুসল্লীদের শোনানো হচ্ছে। বিভিন্ন ভাষাভাষি মুসল্লীরা আলাদা আলাদা বসেন এবং তাদের মধ্যে একজন করে মুরুব্বী মূল বয়ানকে তাৎক্ষণিক অনুবাদ করে শুনান। মূল বক্তা বয়ানের একটি নির্দিষ্ট অংশ শেষ করার পর অনুবাদের জন্য বিরতি দেন। অনুবাদ শেষ হলে তিনি আবার বয়ান শুরু করে। এভাবেই ইজতেমা ময়দানে তাবলীগ জামাতের মুরব্বীদের বয়ান চলছে।
আইনশৃংখলা জোরদার: গাজীপুরের পুলিশ সুপার হারুন অর-রশিদ জানান, ইজতেমা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে ইজতেমার আগে, ইজতেমা চলাকালীন সময়, দুই পর্বের মধ্যে ইজতেমা শেষে ১৮ থেকে ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা পাঁচ সেক্টরে বিভক্ত হয়ে দায়িত্ব পালন করবে। ইজতেমা চলাকালীন সময় ময়দানের চতুর্দিকে থাকছে বিভিন্ন আইনপ্রয়োগকারী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সমন্বয়ে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা বলয়। সেই সাথে থাকছে স্টাইকিং ফোর্স, চেক পোস্ট, ওয়াচ টাওয়ার এবং ইন্টারনেটের ওয়াইফাই সুবিধাসহ মিডিয়া সেন্টার।
নিরাপত্তা জোরদার করতে র্যাবের কমিউনিকেশন উইংয়ের পক্ষ থেকে ১৮টি প্রবেশপথসহ চারপাশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বসানো হয়েছে ৬৫টি ক্লোজসার্কিট সিসি ক্যামেরা। এছাড়াও থাকছে মেটাল ডিটেক্টর, বাইনোকুলার ও নাইটভিশন গগলস। র্যাবের ইন্টেলিজেন্সের সদস্যরা সন্ত্রাসী কর্মকান্ডসহ ইজতেমা মাঠে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটতে পারে সে ব্যাপারে কড়া নজরদারি রাখছেন। প্রতিটি খিত্তায় বিশেষ টুপি পরিহিত ও সাদা পোশাকধারী ২জন করে গোয়েন্দা সদস্য অবস্থান করছেন। তারা কোন প্রকার সন্ত্রাসী তৎপরতার ইঙ্গিত পেলে বিশেষ সিগনালের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের তাৎক্ষণিক অবহিত করবেন।
এছাড়াও তারা ইজতেমা মাঠসহ আশপাশের কোথায় কি হচ্ছে না হচ্ছে প্রত্যক্ষ করার জন্য ল্যাপটপ কম্পিউটারের স্ক্রিনে সার্বক্ষণিক নজর রাখছেন। ১৬ টি গাড়িসহ ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদের সতর্কাবস্থায় রাখা হয়েছে। নিরাপত্তার স্বার্থে বিভিন্ন স্থানে বসানো র্যাবের ৯টি ও পুলিশের ৫টি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার থেকে পর্যবেক্ষক দল সার্বক্ষণিক বিশ্ব ইজতেমা ময়দানের পর্যবেক্ষণ করছেন। এছাড়াও র্যাবের পর্যবেক্ষণ পোস্ট দল, ইন্টামিডিয়েট পোস্ট দল, নৌ টহল, হেলিকপ্টার টহল, স্টাইকিং রিজার্ভ, বোম্ব স্যুইপিং দল, চিকিৎসা সহায়তা কেন্দ্র, একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ ও ২টি সিসি টিভি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু করা হয়েছে।
৫ মুসল্লীর মৃত্যু: বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বে আসা ৫ মুসল্লীর মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার রাত ১১টার দিকে ইজতেমা মাঠেই অসুস্থ হয়ে মারা যান জাহাঙ্গীর আলম (৭০)। তিনি ঢাকার দক্ষিণ বাড্ডার মাহদুদুল হাসানের ছেলে। একই দিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে মারা যান মো. আবদুস সালাম (৫০)। তিনি গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার কিত্তনীয়া এলাকার মহর আলীর ছেলে। রাত ১২টা ৪০ মিনিটের দিকে মারা যান নাটোরের নলডাঙ্গা এলাকার মৃত নাদের মন্ডলের ছেলে কফিল উদ্দিন (৬৫)। শনিবার সকাল ৯টা ৫০ মিনিটে অসুস্থ হয়ে পড়েন রিয়াছত আলী (৭০)। তাৎক্ষণিক টঙ্গী হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানেই তার মৃত্যু হয়। রিয়াজ উদ্দিন কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম থানার বাসিন্দা। তার বাবার নাম আক্কাস আলী। সকাল ৯টা ২০ মিনিটের দিকে মারা যান কিশোরগঞ্জের ভৈরব এলাকার খাইরুল কবীর (৬০)। মৃত ৫ মুসল্লীর মধ্যে ৪জন মৃত মুসল্লীর বাদ জোর নামাজে জানাযা শেষে নিজ নিজ গ্রামের বাড়িতে লাশ পাঠানো হয়েছে বলে জানান মৃত ব্যক্তিদের তালিকার দায়িত্বে থাকা মুরুব্বী আদম আলী।
১২০ জোড়া যৌতুক বিহীন গণবিবাহ: আজ ইজতেমার মূল মঞ্চের পাশে কনের অভিভাবক ও বরের উপস্থিতিতে যৌতুক বিহীন ১২০ জোড়া যৌতুক বিহীন গণবিবাহ পড়ানো হয়েছে। কাকরাইল মসজিদের খতিব হাফেজ জুবায়ের এই বিবাহ কার্য সম্পন্ন করেন। বিবাহ শেষে রীতি অনুযায়ী মঞ্চে সৌদি খেজুর ও মিষ্টি বিতরণ করা হয়। যৌতুকবীহিন এসব বিবাহ পড়ানোর সময় বর মঞ্চের পাশে সারিবদ্ধ হয়ে বসেন আর ইজতেমার একজন মুরুব্বীর তত্ত্বাবধানে কনেগণ তাদের অভিভাবক নিয়ে নির্দিষ্ট একটি স্থানে বিবাহের জন্য কবুল ইয়াত করেন। ইজতেমা শেষে বর ও কনের পিতা জামাতবন্দী হয়ে তিন চিল্লায় (১২০দিন) তাবলীগের দাওয়াতি কাজে মেহনত করার জন্য বের হয়ে পড়বেন বলে জানান ইজতেমা আয়োজক কমিটি। এসময়ের মধ্যে দাম্পত্য জীবন সম্পর্কে শরীয়তের বিধি-বিধান শিক্ষা লাভ করে যৌতুক বিহীন বিবাহ সম্পন্নকারী বর-কনেরা সংসার জীবন শুরু করবেন বলে ইজতেমার বিবাহ সংক্রান্ত দায়িত্বশীল মুরুব্বীরা জানান।
চিকিৎসা সেবা: ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের অনেকে আকশ্মিক বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘ লাইনে দাড়িয়ে ফ্রি চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। গতকাল ইবনে সিনা ও হামদর্দসহ ফ্রি চিকিৎসা কেন্দ্র এলাকা ঘুরে দেখা গেছে মুসল্লীরা দীর্ঘ লাইনে দাড়িয়ে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করছেন। চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোর মধ্যে ইবনে সিনা ও হামদর্দ ক্যাম্পের সামনে সবচে বেশি দীর্ঘ লাইন লক্ষ্য করা গেছে। মুসল্লীদের স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের জন্য ময়দানের আশপাশে ও মন্নু নগর এলাকায় র্যাব’র ফ্রি-মেডিক্যাল ক্যাম্প, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন ফ্রি চিকিৎসা ক্যাম্প, গাজীপুর সিভিল সার্জন অফিস, হামদর্দ ওয়াক্ফ, ইবনে সিনা, ইন্টার ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, আঞ্জুমান মফিদুল ইসলাম, টঙ্গী ওষুধ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতি, বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক কলেজ, হোমিওপ্যাথিক অনুশীলন কেন্দ্র, বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক পরিষদসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রায় অর্ধশত ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পে চিকিৎসকরা বিনামূল্যে মুসল্লীদের চিকিৎসা সেবা ও ঔষধপত্র দিচ্ছেন। অসুস্থ্য মুসল্লীদের অধিকাংশই অতিরিক্ত শীত ও ঠান্ডা জনিত সর্দি, কাশি, ডায়রীয়া, পেটের পীড়া, আমাশয় ও শ্বাসকষ্টের রোগী। ইজতেমায় মুসল্ল¬ীদের মাঝে অনেককেই ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্পগুলোতে আসতে দেখা গেছে। এ ছাড়া রাত ৯টা থেকে সকাল পর্যন্ত টঙ্গী হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে শতাধিক মুসল্লিকে। ইজতেমায় আসা ৭ মুসল্লী টঙ্গী হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
পানি সরবরাহ: দিনদিন ইজতেমায় দেশী বিদেশী মুসল্লীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেওয়ায় ২০০৭/০৮ অর্থ বছর থেকে সরকারী অর্থায়নে ইজতেমা মাঠে পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা কার্যক্রম অন্যান্য বছরের চাইতে এবার আরো বেশি উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। এ পর্যন্ত জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর বিশ্ব ইজতেমা মাঠে ১৩টি উৎপাদক গভীর নলকূপের মাধ্যমে দৈনিক ৭০ লাখ গ্যালন পানি সাড়ে ১২ কিঃ মিঃ পাইপ লাইনের মাধ্যমে বিভিন্ন অজুখানা, টয়লেট, গোসল খানায় সার্বক্ষণিক পানি সরবরাহ করছে। এছাড়াও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন প্রতিদিন কয়েক লাখ গ্যালন পানি মুসল্ল¬ীদের মাঝে শতাধিক পাইপ লাইনের মাধ্যমে সরবরাহ করছে বলে জানান গাজীপুর সিটি অঞ্চলের পানি সরবরাহে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলী।
বিদ্যুৎ সরবরাহ: ইজতেমা ময়দানে স্থাপিত ডেসকোর নিয়ন্ত্রণ কক্ষ সূত্রে জানা যায়, ইজতেমা ময়দানে পিক-আওয়ারে বর্তমানে ৩মেগাওয়ার্ট বিদ্যুতের প্রয়োজন হচ্ছে। ৩টি ফিডার ও ১১টি ট্রান্সফর্মারের মাধ্যমে ইজতেমা ময়দানে নিরবচ্ছিন্নভাবে এই বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। লোডশেডিং এর কোন সম্ভাবনা নেই বলে জানান টঙ্গী ডেসকো অফিস কর্তৃপক্ষ।
বিদেশী মুসল্লী: বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে বিশ্বের শতাধিক দেশ থেকে প্রায় ২০ সহস্রাধিক মুসল্লী ইজতেমার প্রথম পর্বে ইতিমধ্যে অংশ নিয়েছেন বলে জানান, বিদেশী মেহমানদের অবস্থানের তাবু ‘তাশকিল কামরার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। এর মধ্যে সৌদি আরব থেকে সর্বাধিক মুসল্লী ইজতেমায় যোগদান করেছেন। বিদেশী মুসল্লীরা আলাদাভাবে ইজতেমা ময়দানের উত্তর পশ্চিম কর্ণারে স্থাপিত বিশেষ বিদেশী মেহমান খানা ‘তাশকিল’ কামরায় অবস্থান করছেন। বিদেশী মুসল্লীদের মধ্যে কেউ অসুস্থ্য বা অন্য কোন দূর্ঘটনার শিকার গতকাল পর্যন্ত হননি বলে জানা গেছে।
আখেরি মোনাজাতের প্রস্তুতি : ইজতেমা মাঠের বিদেশি নিবাসের পূর্বপাশে বিশেষ মোনাজাত মঞ্চেই রোববার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে ১টার মধ্যে শুরু হবে আখেরি মোনাজাত। এর আগে হবে হেদায়তি বয়ান। আখেরি মোনাজাত ও হেদায়তি বয়ান করবেন ভারতের মাওলানা সা’দ।
আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে বাংলাদেশ রেলওয়ে চট্টগ্রাম, সিলেট, আখাউড়া, কুমিল্লা ও ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন রেল রুটে বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া আখেরি মোনাজাতের আগে এবং পরে সব ট্রেন টঙ্গী জংশন স্টেশনে যাত্রা বিরতি করবে বলে জানিয়েছেন টঙ্গী রেল স্টেশনের স্টেশন মাস্টার মো. হালিমুজ্জামান।
মুসল্লীদের যাতায়াতে র্যাব-এর ফ্রি বাস সার্ভিস : এদিকে ঢাকার মহাখালী আন্তজেলা বাস টার্মিনাল থেকে টঙ্গীর ইজতেমা ময়দান পর্যন্ত মুসল্লীদের যাতায়াতে ফ্রি বাস সার্ভিস চালু করেছে র্যাপিট এ্যাকশন বেটালিয়ান র্যাব।
যানজট নিয়ন্ত্রণ : আগামীকাল রোববার আখেরী মোনাজাতে অংশ নিতে আসা মুসল্লীদের অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য দক্ষিণে আন্তর্জাতিক হযরত শাহ্ জালাল বিমানবন্দর, পশ্চিমে উত্তরা-১১ নং সেক্টর, উত্তরে বোর্ড বাজার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, চৌরাস্তা পর্যন্ত ও পূর্বে পূবাইল এলাকা পর্যন্ত যানবাহন বিশেষভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে বলে গাজীপুর জেলা ট্রাফিক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে। গাজীপুরের ট্রাফিক বিভাগের সহকারী পুলিশ সুপার মো. সাখাওয়াত হোসেন জানান, শনিবার রাত ২টার পর থেকে রোববার আখেরি মোনাজাতের সময় পর্যন্ত ভোগড়া বাইপাস মোড় থেকে কুড়িল বিশ্বরোড, সাভারের বাইপাইল থেকে আব্দুল্লাহপুর পর্যন্ত অ্যাম্বুলেন্স ও পুলিশের গাড়ি ছাড়া সাধারণ যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। তবে মোনাজাতের দিন রোববার সকাল থেকে গাজীপুরের ভোগড়া বাইপাস মোড় এলাকা থেকে ইজতেমাস্থল পর্যন্ত মুসল্লিদের সুবিধার্থে ৪০টি ইজতেমার স্টিকার লাগানো বাস চলাচল করবে বলে জানান তিনি।
পকেটমার : এদিকে বিশ্ব ইজতেমা ও আপপাশ এলাকা থেকে শুক্রবার রাত থেকে সকাল পর্যন্ত পকেটমার ও ছিনতাইসহ নানা অভিযোগে ৩০ জনকে আটক করা হয়েছে। এদের মধ্যে টঙ্গী থানা পুলিশ ২৫ জনকে এবং র্যাব সদস্যরা ৩জনকে আটক করে।
টঙ্গী থানার অফিসার্স ইনচার্জ মোঃ ইসমাইল হোসেন জানান, শুক্রবার দিবাগত রাত সকাল সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ইজতেমা ময়দান এবং এর আশপাশ এলাকায় অভিযান চালিয়ে পকেটমার ও ছিনতাইকারীসহ বিভিন্ন অপরাধে ২৫ জনকে আটক করা হয়েছে। এদিকে র্যাব-১ অ্যাডজুটেন্ট সিনিয়র এএসপি কামরুল হাসান জানান, ইজতেমা ও আশপাশ এলাকা থেকে তিন পকেটমার-ছিনতাইকারীকে আটক করা হয়েছে।
ভ্রাম্যমাণ আদালত : এছাড়াও ইজতেমা মাঠের আশপাশ এলাকা থেকে পাঁচটি ভ্রাম্যমান আদালত অভিযান চালিয়ে খাদ্য দ্রব্য আইনে ভেজাল খাদ্য দ্রব্য প্রস্তুত, সংরক্ষণ ও বিক্রির অপরাধে ১০টি মামলা এবং ১৩ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, এবারের দুই পর্বের বিশ্ব ইজতেমা গত ৯জানুয়ারী থেকে শুরু হয়েছে। আগামীকাল রোববার ১১ জানুয়ারি প্রথম পর্বের মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হবে ৩দিনব্যাপী ইজতেমার প্রথম পর্ব। মাঝে ৪দিন বিরতি দিয়ে ১৬ জানুয়ারী শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে ৩দিনব্যাপী দ্বিতীয় পর্বের বিশ্ব ইজতেমা। আগামী ১৮ জানুয়ারি রবিবার আখেরী মোনাজাতের মাধ্যমে সমাপ্তি ঘটবে এবারের দুই পর্বের বিশ্ব ইজতেমা।