ডেস্ক রিপোর্টঃ টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে বিশ্ব ইজতেমা ময়দান প্রস্তুত। শুক্রবার (৯ জানুয়ারি) থেকে এখানে শুরু হচ্ছে, বিশ্ব ইজতেমা। রোববার শেষ হবে এবারের ইজতেমার ১ম পর্ব। ইজতেমায় অংশ নিতে ইতোমধ্যে হাজার হাজার মুসল্লি ময়দানে আসতে শুরু করেছেন। তবে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের ডাকা চলমান অনির্দিষ্টকালের অবরোধের কারণে মুসল্লিদের ইজতেমায় আসতে চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে।
ইজতেমা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে একেবারে শেষ পর্যায়ের কাজ চলছে। যেটুকু বাকি আছে, তা বৃহস্পতিবারের (৮ জানুয়ারি) মধ্যেই শেষ হবে বলে জানা গেছে। ১৬০ একর জমির ওপর মুসল্লিদের জন্য টানানো হয়েছে বাঁশ আর চটের তৈরি প্যান্ডেল। প্রতিদিন স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে শত শত মুসল্লির অংশগ্রহণে সুবিশাল প্যান্ডেল তৈরির কাজসহ সব কাজের শেষ সময়ের প্রস্তুতির কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। কেউ বাঁশ, খুঁটি বাঁধছেন। কেউবা চট টানাচ্ছেন। কেউবা বৈদ্যুতিক লাইন টানায় ব্যস্ত।
সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের সদস্যরা বরাবরের মতো মুসল্লিদের পারাপারের সুবিধার্থে তুরাগ নদের ওপর ৭টি ভাসমান বেইলি ব্রিজ তৈরির কাজ শেষ করেছেন। সব মিলিয়ে এবারের বিশ্ব ইজতেমার প্রস্তুতি কাজ একেবারে শেষ পর্যায়ে। শুক্রবার ফজরের নামাজের পর থেকে আম বয়ানের মধ্য দিয়ে এবারের বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব শুরু হবে।
ইজতেমা ময়দান ঘুরে দেখা গেছে, দেশ-বিদেশের বিভিন্ন এলাকায় দাওয়াতি কাজ শেষ করে ইজতেমা ময়দানে আসছেন দেশি ও বিদেশি মুসল্লিরা। প্রথম পর্বের ইজতেমায় দেশের ৩৪ জেলা থেকে মুসল্লিরা আসবেন। সে জন্য স্থাপন করা হয়েছে ৩৪টি খিত্তা। আর বিদেশি ও প্রবাসী মুসল্লিদের জন্য স্থাপন করা হয়েছে, পৃথক প্যান্ডেল। সেখানে থাকবে কেন্দ্রীয়ভাবে রান্না করা খাবার পরিবেশনের ব্যবস্থা।
ইজতেমার মুসল্লিদের নিরাপত্তার ব্যাপারে টঙ্গী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইসমাইল হোসেন জানান, মুসুল্লিদের নিরাপত্তার জন্য পোশাকে ও সাদা পোশাকে, পুলিশ, গোয়েন্দা এবং র্যাব সদস্যদের সমন্বয়ে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। র্যাব ও পুলিশের পক্ষ থেকে স্থাপন করা হয়েছে ওয়াচ টাওয়ারও।
ইজতেমার মাঠের প্রস্তুতির কাজ তদারকির দায়িত্বে থাকা তাবলীগের গিয়াস উদ্দিন বলেন, সব কাজ করা হচ্ছে, মোশাআরার (পরামর্শ) মাধ্যমে। বাংলাদেশের বাইরে থেকে আসা মুসল্লিদের সংখ্যা এবার বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। গত বছর প্রায় ১৭ হাজার বিদেশি মুসল্লি ইজতেমায় অংশ নিয়েছিলেন। এবার তা ২০ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে।
তাদের থাকার জন্য ইজতেমা মাঠের উত্তর-পশ্চিম পাশে টিন-চট দিয়ে বিশেষ কামরা তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। বিদেশি মুসল্লিদের জন্য তুরাগ নদের তীরে রান্নার চুলা ও রন্ধনশালা নির্মাণের কাজও শেষ হয়েছে।
তিতাস গ্যাসের টঙ্গী অঞ্চলের ব্যবস্থাপক মো. আব্দুল আহাদ বলেন, তাদের চারজন প্রকৌশলীসহ ১৩ জনের দল ইজতেমা ময়দানে বিদেশি মেহমানদের রন্ধনশালায় গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে কাজ করছেন।
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মুজিবুর রহমান কাজল জানান, ১১টি উৎপাদন নলকূপের মাধ্যমে প্রতিদিন তিন কোটি লিটারেরও বেশি নিরাপদ পানি নিশ্চিত ও সরবরাহের সব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ওজু-গোসলের হাউজ ও টয়লেটসহ প্রয়োজনীয় স্থানে নিরাপদ পানি সরবরাহ করা হবে।
এছাড়াও বহুতল পাকা দালানে চার হাজারের বেশি টয়লেট ইউনিট রয়েছে। এর মধ্যে নষ্ট ও ক্ষতিগ্রস্ত অজু গোসলখানা এবং টয়লেটগুলো ইতোমধ্যে সংস্কার করা হয়েছে। এছাড়া মশক নিধনে ২০টি ফগার মেশিন থাকবে।
ডেসকোর সূত্র জানায়, ইজতেমা এলাকায় সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবরাহের সব প্রস্তুতিও শেষ হয়েছে। উত্তরা, টঙ্গী সুপার গ্রিড ও টঙ্গী নিউ গ্রিডকে মূল ১৩২ কেভি সোর্স হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছে, যাতে যেকোনো একটি গ্রিড অকেজো হলেও সামগ্রিক বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত না হয়।
ইজতেমা এলাকায় ৪টি জেনারেটর এবং ৫টি ট্রলি-মাউন্টেড ট্রান্সফরমার তৈরি রাখা হবে। এছাড়া ৫টি অস্থায়ী বিদ্যুৎ ক্যাম্প নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে প্রায় ২০০ কর্মকর্তা-কর্মচারী সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করবেন।
গাজীপুরের পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদ বলেন, ইজতেমার নিরাপত্তায় পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সাদা পোশাকে পুলিশ থাকবে। টহল পুলিশ থাকবে। ওয়াচ টাওয়ার থেকে পর্যবেক্ষণ করা হবে। র্যাবের পাশাপাশি পুলিশেরও স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকবে।
সার্বক্ষণিক যোগাযোগের জন্য একটি সেন্ট্রাল কন্ট্রোল রুমের অধীনে পাঁচটি সাব-কন্ট্রোল রুম থাকবে। দুর্ঘটনা ও ভিআইপি বহনের জন্য ৩টি হলিপ্যাড থাকবে। ইজতেমার নিরাপত্তায় ১০ হাজারের মতো পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন বলেও জানান তিনি।