স্টাফ রিপোর্টারঃ আজ শুক্রবার (৯জানুয়ারি) থেকে শুরু হচ্ছে এবারের বিশ্বইজতেমার প্রথম দফা। ইতোমধ্যে শীত ও ২০দলীয় অবরোধ উপেক্ষা করে লাখ লাখ মুসল্লী বাস, ট্রাক, পিক-আপ, প্রাইভেটকার, লঞ্চে করে যিনি যেভাবে পেরেছেন এসে টঈীর বিশ্ব ইজতেমার ময়দানে এসে উপস্থিত হয়েছেন।
মঙ্গলবার রাত থেকেই ইজতেমা ময়দানে দেশি-বিদেশি মুসল্লীরা আসতে শুরু করেছেন। বৃহস্পতিবারও নানা বাহনে করে মুসল্লিদের কাফেলা ময়দানে আসছেন। তারা ইজতেমা ময়দানে এসে নিজ নিজ খিত্তায় (নির্ধারিত স্থান) অবস্থান নিচ্ছেন। আখেরি মোনাজাতের দিন পর্যন্ত মুসল্লিদের এ আগমন অব্যাহত থাকবে। ১১জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে এ দফা শেষ হবে।
বৃহস্পতিবার সকালে টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানে গিয়ে দেখা গেছে রাতের কনকনে শীত ও কুয়াশা উপেক্ষা করে বিভিন্ন জেলার হাজার হাজার মুসল্লী ট্রাক, পিক-আপে করে টঙ্গীর ইজতেমাস্থলে পৌঁছেছেন। তাদের কাঁধে ও মাথায় প্রয়োজনীয় মালামালের ব্যাগ, বস্তা, লাগেজ, কাপড়ের পুটলি নিয়ে নিজ নিজ জেলার খিত্তায় অবস্থান নিচ্ছেন।
বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে ইজতেমাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এসময় তার সাথে স্থানীয় সাংসদ জাহিদ আহসান রাসেল উপস্থিত ছিলেন। পরিদর্শন শেষে সন্তোষ প্রকাশ করে তিনি জানান, ইজতেমা মাঠের বিদ্যুতের ঘাটতি হবে না। বিদ্যুতের জন্য সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তিনটা ফিডার থেকে ইজতেমা মাঠে সংযোগ দেয়া হয়েছে। ইমারজেন্সি সাপোর্ট হিসেবে সার্বক্ষণিক স্ট্যান্ডবাই জেনারেটরের রাখা হয়েছে। আশাকরি বিদ্যুতের ঘাটতি হবে না।
রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক বৃহস্পতিবার বিকেল তিনটার দিকে ইজতেমা ময়দানে মুসুল্লীদের জন্য হামদর্দের ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প উদ্বোধন করেন। এসময় স্থানীয় সাংসদ জাহিদ আহসান রাসেল, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদ প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।
রেল মন্ত্রী মুজিবুল হক বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়া ধর্মের নামে রাজনীতি করে। ধর্মের প্রতি আসলে খালেদা জিয়ার কোন দরদ নাই। ধর্মের জন্য তার কোন রকম আন্তরিকতা নাই। তিনি মুখোশপরা তথাকথিত রাজনৈতিকদের মাধ্যমে এ দেশের মুসলমানদের বিভ্রান্ত করে যাচ্ছেন। রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক বৃহস্পতিবার বিকেল তিনটার দিকে ইজতেমা ময়দানে মুসুল্লীদের জন্য হামদর্দের ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প উদ্বোধন করতে এসে এসব কথা বলেন। এসময় স্থানীয় সাংসদ জাহিদ আহসান রাসেল, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদ প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।
রেলমন্ত্রী বলেন, আমাদের ৩৩৪ টি ট্রেন রয়েছে। সকল ট্রেন নিয়মিত চলাচল করছে। বুধবার দুটি জায়গায় নাশকতামূলক কর্মকান্ড হয়েছে- জয়পুরহাট ও কুলাউড়ায়। ওরা আমাদের রেলের ফিসপ্লেট তুলে নিয়েছে। এজন্য ট্রেন লাইনচ্যুত হয়েছে। নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড যারা করে তারা বিএনপিতে নেত্রী খালেদা জিয়ার উস্কানিতে করে থাকে। বিএনপি ও জামায়াতের সন্ত্রাসীরা ধ্বংসাত্মক ও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে রেলের অনেক ক্ষতিসাধন করেছে। কোটি কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট করেছে। তারপরও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমরা অনবরত নিয়মিত ট্রেন পরিচালনা করে যাচ্ছি। যাতে কোথাও বিঘ্ন না ঘটে। যাত্রীরা অনায়াসে গন্তব্যে আসা যাওয়া করতে পারে। এ ব্যাপারে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত আছে। আমাদের জিআরপি আরএনবি সবসময় প্রস্তুত আছে। যেখানে নাশকতা যেখানে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড সেখানেই প্রতিহত করা হবে।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই মন্নুনগর এলাকায় হামদর্দ ফ্রি-মেডিক্যাল ক্যাম্প ছাড়াও ইবনে সিনা, টঙ্গী ঔষধ ব্যবসায়ি কল্যাণ সমিতিসহ বেশ কিছু ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্পে বিনা মূল্যে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
র্যাবের ব্রিফিংঃ
বৃহস্পতিবার দুপুরে বিশ্ব ইজতেমায় র্যাবের কন্ট্রোল রুমের সামনে র্যাবের মহাপরিচালক বেনজির আহমেদ ইজতেমার প্রস্তুতি নিয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিং দেন। এসময় তিনি বলেন, ইজতেমা উপলক্ষে তাদের সকল প্রস্তুতি রয়েছে। র্যাব বাংলাদেশব্যাপী বিস্তৃত রয়েছে। ইজতেমার ব্যাপারে আমাদের ব্যাপক প্রস্তুতি রয়েছে। যদি কোথাও কারো হেল্পের প্রয়োজন হয়, আমরা সেখানেই হেল্প করব। অবরোধে গাড়ি চলাচলের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে র্যাব ডিজি বলেন, যেখানেই প্রয়োজন হবে সেখানেই আমরা সাহায্য করব। প্রয়োজনে আখেরী মোনাজাতের পর প্রয়োজনে আমরা আশপাশের যে বাস টার্মিনাল গুলো রয়েছে সেখানে মুসল্লিদের বিনা পয়সায় গাড়ী দিয়ে পৌঁছাবার চেষ্টা করব। আমাদের সামর্থ অনুযায়ী তথা আমাদের যে রিসোর্স রয়েছে সেটা দিয়ে তাদেরকে সহায়তা করার চেষ্টা করব।বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজি দ্বীন মোহম্মদ নুরুল হক ইজতেমাস্থলের টঙ্গী সরকারি হাসপাতাল ও ফ্রি-মেডিক্যাল ক্যাম্প পরিদর্শন করেন।
বৃহস্পতিবার সকালে পুলিশের ব্রিফিংঃ
ইজতেমায় আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে টঙ্গীর টেশিস কারখানার দক্ষিণে শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় পুলিশের এক ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়। এসময় পুলিশের ডিআইজি এসএম মাহফুজুল হক নুরুজ্জামান, অতিরিক্ত ডিআইজি শফিকুল ইসলাম, গাজীপুরের পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দেলোয়ার হোসেন প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন। ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, ইজতেমার নিরাপত্তা জোরদার করতে আমরা পাঁচ স্তরে নিরাপত্ত ব্যবস্থা নিয়েছি। অপরাধীদের চিহ্নিত করতে প্রচলিত ব্যবস্থার বাইরে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। ইজতেমা এলাকাকে পাঁচটি জোনে ভাগ করে প্রায় ১২হাজার আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছে । নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছে চেকিং ব্যবস্থা। সাদা পোশাকেও টহল দিচ্ছে, ওয়াচ টাওয়ার থেকেও ইজতেমা এলাকা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে, র্যাবের পাশাপাশি পুলিশেরও স্ট্রাইকিং ফোর্স রয়েছে। সার্বক্ষণিক যোগাযোগের জন্য একটি সেন্ট্রাল কন্ট্রোল রুমের অধীনে পাঁচটি সাব কন্ট্রোলরুম থাকবে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই র্যাবের হেলিকপ্টার ইজতেমা এলাকা টহলদেয়া শুরু করে।
ইজতেমাস্থলে প্রতিদিন ১০টি মোবাইল কোর্ট
গাজীপুরের নির্বাহী মেজিস্ট্রেট শরিফুল ইসলাম জানান, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, বিশুদ্ধ খাবার নিশ্চিত করণসহ ইজতেমাস্থল ও আশে-পাশের অঞ্চলকে পাঁচ ভাগে ভাগ করে ওইসব অঞ্চলে মোবাইল কোর্ট হচ্ছে। এসব অঞ্চলে প্রতিদিন দু’পালায় ৫টি করে ১০টিমোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছেন গাজীপুর জেলা প্রশাসন।
জরুরী টেলিফোন নম্বর:
জেলা প্রশাসন কন্ট্রোল রুম-(১)- ৯৮১৩৪০১, জেলা প্রশাসন কন্ট্রোল রুম-(২)-৯৮১৩৪০২, পুলিশ কন্ট্রোল রুম-৯৮১৩৪০৩, মিডিয়া সেন্টার-৯৮১৩৪০৮, র্যাব কন্ট্রোল রুম-(১) ৯৮১৫১১২, র্যাব কন্ট্রোল রুম-(২) ৯৮১৫১১৩, র্যাব কন্ট্রোল রুম-(৩) ৯৮১৫১১৪,স্বাস্থ্য বিভাগের কন্ট্রোল রুম- ৯৮১৩৪০৬, ৯৮১৭৫১৪, ৯৮১৭৫১৫, ৯৮১৭৫১৬, তথ্যকেন্দ্র ইজতেমা কর্তৃপক্ষ- ৯৮১৬৩৭০-৭৪, ফায়ার সার্ভিস কন্ট্রোল রুম-৯৮১৬৩৬৯, বিদ্যুৎ বিভাগের কন্ট্রোল রুম-৯৮১৬৩৭৯।