স্টাফ রিপোর্টার: ইন্টারনেটে অতিরিক্ত সময় কাটালে জীবন হয়ে উঠতে পারে অতিষ্ঠ। বাড়তে পারে মানসিক চাপ ও যন্ত্রণা। অনেক ক্ষেত্রে তিক্ত বিরক্ত হয়ে কেউ কেউ স্ট্যাটাস লিখে জানিয়ে দেই, ‘মাস খানেক ফেসবুকে বসছি না। সবাই ভালো থাকবেন’। তবে বিজ্ঞানভিত্তিক কিছু বিষয় মেনে চললে জীবন আবার ফিরবে স্বাভাবিক ছন্দে।
শোয়ার সময় কাছে রাখবেন না ফোন
অধিকাংশ মানুষ মোবাইল ফোন পাশে রেখে রাতে ঘুমিয়ে পড়েন। এ অভ্যাসটা শরীরের জন্য খুব ক্ষতিকর। শোয়ার আগে ফোনটার দিকে একবার তাকিয়ে দেখুন, নীল আলোক তরঙ্গ বের হচ্ছে। এই আলো আপনার মস্তিষ্কের মেলাটোনিন হরমোন নিঃসরণে ব্যাঘাত ঘটায়। যেটি আপনার আরামের ‘ঘুম হারাম’ করে দেয়। তৈরি করে শারীরিক ও মানসিক হরেক সমস্যা।
মস্তিষ্কের পিনিয়াল গ্রন্থি থেকে হরমোন মেলাটোনিন নিঃসৃত হয়। অন্ধকার মেলাটোনিন নিঃসরণে সহায়ক। এ হরমোন মানুষকে ঘুমে আচ্ছন্ন করে, শরীরের তাপমাত্রা কম রাখে। আর ফোনের অনুজ্জ্বল নীল আলো মেলাটোনিন নিঃসরণে বাধা দেয়। হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের বিজ্ঞানীরা বলেন, রাতে স্মার্টফোন, ল্যাপটপ, ট্যাবলেট, আইপড, আইফোন ও টিভির ব্যবহারও ঘুমকে বাধাগ্রস্ত করে। আর ক্রমাগত ঘুমের ব্যাঘাত ক্যান্সারসহ দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই ঘুমানোর সময় ফোন কাছে নয়, দূরে রাখুন।
কাজ শেষ হলে বন্ধ রাখুন ই-মেইল
পেশাগত কিংবা অন্য কারণে, দিনের একটা বড় অংশে আমরা ই-মেইল খোলা রাখি। নিজেদের দরকারি মেইলগুলোর খোঁজখবর নেই। এসব করতে গিয়ে ব্যাপক সময় খরচ করে ফেলি। সমীক্ষায় দেখা গেছে, এতে মানুষের উৎপাদনশীলতা হ্রাস পায়; বাড়ে মানসিক চাপ ও যন্ত্রণা। ব্রিটেনের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা সম্প্রতি এ তথ্য জানিয়েছেন।
অফিসে ই-মেইল তদারকি কম করলে অনেক সুবিধাই আছে। যেমন, অন্তত রাতে ঘুমটা আরামের হয়। বিপরীতে অতিরিক্ত ই-মেইল খোঁজাখুঁজি করলে মনোযোগ বিক্ষিপ্ত হয়ে কাজের গতি কমিয়ে দেয়। কর্মক্ষমতাও দুর্বল হয়ে পড়ে।
কমান ফেসবুকে আসক্তি
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে আপনি ব্যাপকভাবে সক্রিয় ও আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছেন। বিশেষ করে, ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম ও ক্ষুদে ব্লগ টুইটারে। বন্ধুদের প্রতিটি পোস্ট, মন্তব্য দেখতে ব্লগ খুলে রাখেন। বারবার দেখেন আপনার পোস্টে কয়টা লাইক কিংবা মন্তব্য পড়েছে। মন্তব্যের পাল্টা জবাব দিতে ব্যস্ত থাকেন। বৈশিষ্ট্যগুণ বিচার না করে সংখ্যা দিয়ে পোস্ট ও মন্তব্যের হিসাব কষছেন। অর্থাৎ, কয়টি পোস্ট দিতে পেরেছেন, তাতে কতটি মন্তব্য, লাইক পড়েছে।
বলতে পারেন, এটা এক ধরনের মানসিক সমস্যা
তবে এ থেকে নিষ্কৃতির একটা উপায়ও বের করা গেছে। ডিমেট্রিকেটর সফটওয়্যার (http://bengrosser.com/projects/facebook-demetricator/) ডাউনলোড করে নিতে পারেন। এতে সুবিধা হলো, আপনার পোস্টে সত্তরটি লাইক পড়লে, সফটওয়্যার সেটি কমিয়ে সাতটি দেখাবে। যাতে আপনি অন্তত সংখ্যাতাত্ত্বিক সমস্যা থেকে নিষ্কৃতি পেতে পারেন।
কিন্ডল, আইপ্যাড শিকেয় তুলে মুদ্রিত বই পড়ুন
নগরকেন্দ্রিক ব্যস্ত জীবনে বই পড়ার বিষয়টিকে সহজ করে দিয়েছে ই-রিডার। ডিভাইসটি সুসহনীয় ও গতিময়। জটিল বইও সহজ উপায়ে পড়া যায়। ধরেন, ট্রেনে যাত্রীদের ভিড়ে বসে আপনি আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের উপন্যাস ‘চিলেকোঠার সেপাই’ পড়ছেন, অথচ কেউ দেখতে পাচ্ছেন না। ই-রিডারের এই অভিজ্ঞতাও বেশ মজার ও দারুণ। তবে অসুবিধাও আছে।
ব্রিটেনের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ই-রিডারে নয়, মুদ্রিত পুস্তক পড়ে বিষয়বস্তু সহজে আয়ত্ত করতে পারে পাঠক। দেখা গেছে, আইপ্যাড, নুক, কিন্ডলে পাঠক বিষয়বস্তু একবারে আত্মস্থ করতে পারে না, পড়তে হয় একাধিকবার। তবে এসব ডিভাইসের গুরুত্ব নাই, তাও নয়। কিন্তু বিষয়বস্তু সহজে আয়ত্বে আনতে মুদ্রিত পুস্তকের বিকল্প নেই।
ইন্টারনেট ব্যবহারের সময়ের হিসাব রাখুন
ইন্টারনেটে অতিরিক্ত সময় ব্যয় করেন, এমন লোক কেবল আপনি একাই নন, আরও বহু রয়েছে। ইন্টারনেটাসক্তি সত্যি বড় ধরনের আচরণগত সমস্যা। সে ক্ষেত্রে অবশ্য প্রতিকারও আছে। প্রযুক্তির প্রতি নিরাসক্ত থাকতে প্রযুক্তিকেই প্রতিকার হিসেবে কাজে লাগাতে পারেন। এ সংক্রান্ত অ্যাপস (https://inthemoment.io/) কিংবা ব্রাউজার (https://www.rescuetime.com/setup/welcome) ডাউনলোড করুন। যেটা ইন্টারনেটে ব্যয় করা সময়ের হিসাব রেখে দেবে। তা দেখে আপনিও সচেতন হতে পারবেন।