গাজীপুর অনলাইনঃ মাত্র এক দিন পর মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা (এসএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হবে। দেশের চলমান অস্থিতিশীল পরিবেশে এ পরীক্ষা নিয়ে গভীর শঙ্কায় রয়েছেন প্রায় ১৫ লাখ শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকরা। দেশের স্বার্থে পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে হরতাল-অবরোধের মতো নাশকতামূলক কর্মসূচি প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন তারা। পরীক্ষার্থীরা হরতালের আওতামুক্ত থাকবে কি না- এ ব্যাপারে বিএনপির পক্ষ থেকে এখনো পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত না আশায় বিপাকে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা। শেষ পর্যন্ত পরীক্ষা হবে, না স্থগিত হবে- তা নিয়েও তারা চিন্তিত।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, পরীক্ষা পেছানোর কোনো সিদ্ধান্ত নেই। পরীক্ষাকে নির্বিঘ্ন করার লক্ষ্যে সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। অন্যদিকে, পরীক্ষার সময় অবরোধ প্রত্যাহারের কোনো সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছে বিএনপি। এমন পরিস্থিতিতে শঙ্কিত সারা দেশের লাখ লাখ পরীক্ষার্থী। পরীক্ষার্থীদের ঝুঁকিতে ফেলে রাজনৈতিক ফায়দা নেয়ার সুযোগ খুঁজছেন রাজনীতিকরাÑ এমন মন্তব্য শিক্ষাবিদ ও অভিভাবকদের।
শিক্ষামন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী এ বছর পরীক্ষায় অংশ নেবে ১৪ লাখ ৭৯ হাজার ২৬৬ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ৭ লাখ ৬৩ হাজার ৩৩৯ জন ছাত্র এবং ৭ লাখ ১৫ হাজার ৯২৭ জন ছাত্রী। সাধারণ আট বোর্ডের অধীনে এসএসসিতে ১১ লাখ ১২ হাজার ৫৯১ জন, মাদ্রাসা বোর্ডে দাখিলে ২ লাখ ৫৬ হাজার ৩৮০ জন এবং এসএসসি ভোকেশনালে (কারিগরি) এক লাখ ১০ হাজার ২৯৫ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেবে। গত বছরের চেয়ে এবার পরীক্ষার্থী বেড়েছে ৪৬ হাজার ৫৩৯ জন। গত বছর এই পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ১৪ লাখ ৩২ হাজার ৭২৭ জন শিক্ষার্থী। পরীক্ষা সম্পন্নের জন্য ইতিমধ্যে সারা দেশে ৭৫ শতাংশ পরীক্ষার সরঞ্জামাদি পৌঁছে দেয়া হয়েছে। ঘোষিত সময়সূচি অনুযায়ী পরীক্ষা নেয়ার জন্য প্রস্তুতিও সম্পন্ন হয়েছে।
শিক্ষামন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাংলা দ্বিতীয় পত্র, ইংরেজি প্রথম পত্র ও ইংরেজি দ্বিতীয় পত্র ছাড়া সব বিষয়ে সৃজনশীল প্রশ্নে পরীক্ষা নেওয়া হবে। এ বছরই সৃজনশীল প্রশ্ন চালু হলো গণিত ও উচ্চতর গণিত, শারীরিক শিক্ষা, স্বাস্থ্য বিজ্ঞান ও খেলাধুলা নামে নতুন বিষয়ে। সারা দেশে ৩ হাজার ১১৬টি কেন্দ্রে ২৭ হাজার ৮০৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশ নেবে। গত বছরের চেয়ে এবার ৩১৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং ১৭৪টি কেন্দ্র বেড়েছে। এছাড়া বিদেশে আট কেন্দ্রে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। নিয়মানুযায়ী দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, সেরিব্রাল পালসিজনিত প্রতিবন্ধী এবং যাদের হাত নেই এমন প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থী শ্রুতি লেখক নিয়ে পরীক্ষা দিতে পারবে। প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা অতিরিক্ত ২০ মিনিট সময় পাবে। অন্যান্য বছরের মতো এবারও সকালের পরীক্ষা সকাল ১০ থেকে ১টা এবং বিকালের পরীক্ষা বিকাল ২টা থেকে ৫টা পর্যন্ত নেওয়া হবে। ১০ মার্চ পর্যন্ত এসএসসির তত্ত্বীয় পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম দিন বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। সময়সূচিতে ১১ মার্চ সংগীতের ব্যবহারিক পরীক্ষা এবং ১২ থেকে ১৬ মার্চের মধ্যে বেসিক ট্রেডসহ এসএসসির সব বিষয়ের ব্যবহারিক পরীক্ষা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। মাদ্রাসা বোর্ডের অধীনে দাখিলে তত্ত্বীয় শেষ হবে ১১ মার্চ। প্রথমদিন পরীক্ষা কোরআন মজিদ ও তাজবিদ। ১৫ মার্চ থেকে ১৯ মার্চের মধ্যে সমস্ত ব্যবহারিক পরীক্ষা শেষ করার কথা রয়েছে।
অবরোধ চলছে, একই সঙ্গে কাল থেকে সারাদেশে ৭২ ঘণ্টার হরতালের ডাক দিয়েছে বিএনপি। ঘটছে দেশের বিভিন্ন স্থানে নাশকতা। পেট্রলবোমার আগুনে পুড়ছে মানুষ, মারা যাচ্ছে। শিক্ষামন্ত্রী ‘আল্লাহর ওয়াস্তে’ অবরোধ-হরতাল বন্ধের আহবান জানিয়েছেন। তবে সে আহবানে এখন পর্যন্ত সাড়া মেলেনি। এ নিয়ে এসএসসি ও সমমানের প্রায় ১৫ লাখ পরীক্ষার্থী উদ্বেগে আছে। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ অবরোধ আহবানকারীদের ওপর ‘আল্লাহর রহমত’ কামনা করে বলেন, আল্লাহর ওয়াস্তে জাতির দিকে তাকিয়ে, পরীক্ষার্থীদের দিকে তাকিয়ে কর্মসূচি বন্ধ করুন। মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আশা করতে পারি, যারা দেশ চালাবেন, চালিয়েছেন, পরীক্ষা নিশ্চিন্তে গ্রহণের জন্য তারা বাধা তুলে নেবেন। অবরোধ-হরতালের নামে যারা মানুষ হত্যা করছেন, তাদের বলেছি আপনারা যা করছেন তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। যদিও পরীক্ষা শুরু হতে আর মাত্র একদিন বাকী আছে, তারপরও কোমলমতি পরীক্ষার্থদের কথা চিন্তা করলে রাজনৈতিক নেতারা যেকোনো সময় কর্মসূচী স্থগিত করতে পারেন। তাই আশা করি, এ সময়ের মধ্যে তাদের মানবতাবোধ জাগ্রত হবে। তিনি বলেন, হরতাল-অবরোধ প্রত্যাহারের দাবি সাধারণ মানুষের মধ্যে উঠেছে। আওয়ামী লীগ হোক, বিএনপি হোক, জাতীয় পার্টি হোকÑ সবার প্রতি আহবান ছেলেমেয়েদের পরীক্ষায় বিঘœ সৃষ্টি করবেন না। পরীক্ষার প্রস্তুতি সন্বন্ধে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এসএসসি পরীক্ষার জন্য যা যা প্রয়োজন, সবকিছুর প্রস্তুতি আছে আমাদের। প্রশ্ন ফাঁসরোধ করার জন্য প্রশ্ন ছাপা থেকেই আমরা বিষয়টি দেখেছি। তিনি বলেন, বিজি প্রেস, প্রশ্নকর্তা বা এর সঙ্গে সম্পৃক্ত লোক, কোচিং সেন্টার- যারা প্রশ্ন ফাঁস করতে পারে, তারা সবাই নজরদারির মধ্যে রয়েছে। কে কী করছে তার সব আমাদের নখদর্পণে। কেউ প্রশ্ন ফাঁস করে রেহাই পাবেন না। এসএসসি পরীক্ষা মনিটরিং কমিটির সদস্য ডিআইজি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, পরীক্ষার্থীদের জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যাপ্ত রয়েছে। নিরপত্তায় কোনো প্রকার ঘাটতি হবে না। হরতাল-অবরোধে পরীক্ষা হলে সে বিষয়ে আমাদের যথেষ্ট প্রস্তুতি রয়েছে।
যশোর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আলাউদ্দীন মিয়া জানান, শিক্ষামন্ত্রী যেভাবে নির্দেশ দিয়েছেন আমাদের সে মোতাবেক কাজ করতে হবে। গত বৃহস্পতিবার মন্ত্রী আমাদের সব শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠকে সার্বিক নির্দেশনা দিয়েছেন। বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক জানান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যথেষ্ট তৎপর রয়েছে। এ বিষয়টি তারা দেখভাল করবে। পরীক্ষার সময় এখানে বিশৃঙ্খলা হওয়ার কোনো অবকাশ নেই। সিলেট শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর এ কে এম গোলাম কিবরিয়া তাপাদার জানান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, আমাদের ৪ জেলার জেলা প্রশাসক এবং অন্যান্য সব ক্ষেত্রের প্রধানদের সঙ্গে আমরা সভা করেছি বিভাগীয় কমিশনারের নেতৃত্বে। সেই সভায় আমরা তাদের বলেছি, পরীক্ষার্থীরা যাতে নিরাপদে পরীক্ষা কেন্দ্রে আসতে পারে সে জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নিতে। কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ইন্দুভূষণ ভৌমিক জানান, আমি যা বলার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাতেই বলেছি। পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে তা শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে যে সিদ্ধান্ত হবে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে শিক্ষাবিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের এমিরেটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, এসএসসি পরীক্ষার মাত্র এক দিন বাকি থাকতে কেউ বলতে পারছে না পরীক্ষা নির্বিঘ্নে হবে কিনা। শিক্ষামন্ত্রী প্রতিদিনই হরতাল-অবরোধ বন্ধের আহবান জানাচ্ছেন। ওদিকে প্রতিদিনই কোনো না কোনো জেলায় হরতাল কর্মসূচির ডাক দিচ্ছে রাজনৈতিক সংগঠনগুলো। এতে পরীক্ষার্থীদের সাথে সাথে আমরাও উদ্বিগ্ন। তিনি আরো বলেন, রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান রাজনৈতিকভাবে হওয়া উচিত। রাজনীতিবিদদের এ কথা মনে রাখতে হবে, রাজনীতির কবলে পড়ে যেন কোমলমতি শিশুদের ভবিষ্যৎ হুমকিতে না পড়ে, এ কথা বিবেচনায় রেখে বড় দুই দলকে দ্রুত সমঝোতায় আসতে হবে। এ জন্য সরকারকেই প্রথমে এগিয়ে আসতে হবে। একই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, অতীতে আমরা দেখেছি পরীক্ষার সময় রাজনৈতিক বিভিন্ন কর্মসূচিতে শিথিলতা আনা হয়েছে। আমি এখনো বিশ্বাস করি পরীক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে বিরোধী সংগঠনগুলো হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি থেকে ফিরে আসবে। এ বিষয়ে কারিগরি শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও শিক্ষক কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ মো. শাহজাহান আলম সাজু বলেন, আসন্ন এসএসসি পরীক্ষা নির্বিঘ্নে অনুষ্ঠিত করার লক্ষ্যে হরতাল-অবরোধ প্রত্যাহার এবং ছাত্র, শিক্ষক ও অভিভাবকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছি। শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকসহ সাধারণ মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতিও দাবি জানান তিনি। বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সভাপতি আবু বকর সিদ্দিক বলেন, চলমান সহিংসতার মধ্যেই সরকার এসএসসি পরীক্ষা গ্রহণের ঘোষণা করেছে। কিন্তু অবরোধ-হরতাল আহবানকারীরা কোনোভাবেই গুরুত্ব দিচ্ছে না দেশের ১৫ লাখ শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎকে। শিক্ষা ধ্বংসের এই কর্মসূচি কোনোভাবেই কাম্য নয়। বাংলাদেশ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. নূর মোহাম্মদ তালুকদার বলেন, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা থেকেই গেল। আমরা নিশ্চিত না আমাদের সন্তানরা সুষ্ঠ পরিবেশে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা দিতে পারবে কি না।
শিক্ষামন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী এ বছর পরীক্ষায় অংশ নেবে ১৪ লাখ ৭৯ হাজার ২৬৬ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ৭ লাখ ৬৩ হাজার ৩৩৯ জন ছাত্র এবং ৭ লাখ ১৫ হাজার ৯২৭ জন ছাত্রী। সাধারণ আট বোর্ডের অধীনে এসএসসিতে ১১ লাখ ১২ হাজার ৫৯১ জন, মাদ্রাসা বোর্ডে দাখিলে ২ লাখ ৫৬ হাজার ৩৮০ জন এবং এসএসসি ভোকেশনালে (কারিগরি) এক লাখ ১০ হাজার ২৯৫ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেবে। গত বছরের চেয়ে এবার পরীক্ষার্থী বেড়েছে ৪৬ হাজার ৫৩৯ জন। গত বছর এই পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ১৪ লাখ ৩২ হাজার ৭২৭ জন শিক্ষার্থী। পরীক্ষা সম্পন্নের জন্য ইতিমধ্যে সারা দেশে ৭৫ শতাংশ পরীক্ষার সরঞ্জামাদি পৌঁছে দেয়া হয়েছে। ঘোষিত সময়সূচি অনুযায়ী পরীক্ষা নেয়ার জন্য প্রস্তুতিও সম্পন্ন হয়েছে।
শিক্ষামন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাংলা দ্বিতীয় পত্র, ইংরেজি প্রথম পত্র ও ইংরেজি দ্বিতীয় পত্র ছাড়া সব বিষয়ে সৃজনশীল প্রশ্নে পরীক্ষা নেওয়া হবে। এ বছরই সৃজনশীল প্রশ্ন চালু হলো গণিত ও উচ্চতর গণিত, শারীরিক শিক্ষা, স্বাস্থ্য বিজ্ঞান ও খেলাধুলা নামে নতুন বিষয়ে। সারা দেশে ৩ হাজার ১১৬টি কেন্দ্রে ২৭ হাজার ৮০৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশ নেবে। গত বছরের চেয়ে এবার ৩১৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং ১৭৪টি কেন্দ্র বেড়েছে। এছাড়া বিদেশে আট কেন্দ্রে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। নিয়মানুযায়ী দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, সেরিব্রাল পালসিজনিত প্রতিবন্ধী এবং যাদের হাত নেই এমন প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থী শ্রুতি লেখক নিয়ে পরীক্ষা দিতে পারবে। প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা অতিরিক্ত ২০ মিনিট সময় পাবে। অন্যান্য বছরের মতো এবারও সকালের পরীক্ষা সকাল ১০ থেকে ১টা এবং বিকালের পরীক্ষা বিকাল ২টা থেকে ৫টা পর্যন্ত নেওয়া হবে। ১০ মার্চ পর্যন্ত এসএসসির তত্ত্বীয় পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম দিন বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। সময়সূচিতে ১১ মার্চ সংগীতের ব্যবহারিক পরীক্ষা এবং ১২ থেকে ১৬ মার্চের মধ্যে বেসিক ট্রেডসহ এসএসসির সব বিষয়ের ব্যবহারিক পরীক্ষা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। মাদ্রাসা বোর্ডের অধীনে দাখিলে তত্ত্বীয় শেষ হবে ১১ মার্চ। প্রথমদিন পরীক্ষা কোরআন মজিদ ও তাজবিদ। ১৫ মার্চ থেকে ১৯ মার্চের মধ্যে সমস্ত ব্যবহারিক পরীক্ষা শেষ করার কথা রয়েছে।
অবরোধ চলছে, একই সঙ্গে কাল থেকে সারাদেশে ৭২ ঘণ্টার হরতালের ডাক দিয়েছে বিএনপি। ঘটছে দেশের বিভিন্ন স্থানে নাশকতা। পেট্রলবোমার আগুনে পুড়ছে মানুষ, মারা যাচ্ছে। শিক্ষামন্ত্রী ‘আল্লাহর ওয়াস্তে’ অবরোধ-হরতাল বন্ধের আহবান জানিয়েছেন। তবে সে আহবানে এখন পর্যন্ত সাড়া মেলেনি। এ নিয়ে এসএসসি ও সমমানের প্রায় ১৫ লাখ পরীক্ষার্থী উদ্বেগে আছে। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ অবরোধ আহবানকারীদের ওপর ‘আল্লাহর রহমত’ কামনা করে বলেন, আল্লাহর ওয়াস্তে জাতির দিকে তাকিয়ে, পরীক্ষার্থীদের দিকে তাকিয়ে কর্মসূচি বন্ধ করুন। মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আশা করতে পারি, যারা দেশ চালাবেন, চালিয়েছেন, পরীক্ষা নিশ্চিন্তে গ্রহণের জন্য তারা বাধা তুলে নেবেন। অবরোধ-হরতালের নামে যারা মানুষ হত্যা করছেন, তাদের বলেছি আপনারা যা করছেন তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। যদিও পরীক্ষা শুরু হতে আর মাত্র একদিন বাকী আছে, তারপরও কোমলমতি পরীক্ষার্থদের কথা চিন্তা করলে রাজনৈতিক নেতারা যেকোনো সময় কর্মসূচী স্থগিত করতে পারেন। তাই আশা করি, এ সময়ের মধ্যে তাদের মানবতাবোধ জাগ্রত হবে। তিনি বলেন, হরতাল-অবরোধ প্রত্যাহারের দাবি সাধারণ মানুষের মধ্যে উঠেছে। আওয়ামী লীগ হোক, বিএনপি হোক, জাতীয় পার্টি হোকÑ সবার প্রতি আহবান ছেলেমেয়েদের পরীক্ষায় বিঘœ সৃষ্টি করবেন না। পরীক্ষার প্রস্তুতি সন্বন্ধে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এসএসসি পরীক্ষার জন্য যা যা প্রয়োজন, সবকিছুর প্রস্তুতি আছে আমাদের। প্রশ্ন ফাঁসরোধ করার জন্য প্রশ্ন ছাপা থেকেই আমরা বিষয়টি দেখেছি। তিনি বলেন, বিজি প্রেস, প্রশ্নকর্তা বা এর সঙ্গে সম্পৃক্ত লোক, কোচিং সেন্টার- যারা প্রশ্ন ফাঁস করতে পারে, তারা সবাই নজরদারির মধ্যে রয়েছে। কে কী করছে তার সব আমাদের নখদর্পণে। কেউ প্রশ্ন ফাঁস করে রেহাই পাবেন না। এসএসসি পরীক্ষা মনিটরিং কমিটির সদস্য ডিআইজি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, পরীক্ষার্থীদের জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যাপ্ত রয়েছে। নিরপত্তায় কোনো প্রকার ঘাটতি হবে না। হরতাল-অবরোধে পরীক্ষা হলে সে বিষয়ে আমাদের যথেষ্ট প্রস্তুতি রয়েছে।
যশোর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আলাউদ্দীন মিয়া জানান, শিক্ষামন্ত্রী যেভাবে নির্দেশ দিয়েছেন আমাদের সে মোতাবেক কাজ করতে হবে। গত বৃহস্পতিবার মন্ত্রী আমাদের সব শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠকে সার্বিক নির্দেশনা দিয়েছেন। বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক জানান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যথেষ্ট তৎপর রয়েছে। এ বিষয়টি তারা দেখভাল করবে। পরীক্ষার সময় এখানে বিশৃঙ্খলা হওয়ার কোনো অবকাশ নেই। সিলেট শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর এ কে এম গোলাম কিবরিয়া তাপাদার জানান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, আমাদের ৪ জেলার জেলা প্রশাসক এবং অন্যান্য সব ক্ষেত্রের প্রধানদের সঙ্গে আমরা সভা করেছি বিভাগীয় কমিশনারের নেতৃত্বে। সেই সভায় আমরা তাদের বলেছি, পরীক্ষার্থীরা যাতে নিরাপদে পরীক্ষা কেন্দ্রে আসতে পারে সে জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নিতে। কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ইন্দুভূষণ ভৌমিক জানান, আমি যা বলার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাতেই বলেছি। পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে তা শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে যে সিদ্ধান্ত হবে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে শিক্ষাবিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের এমিরেটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, এসএসসি পরীক্ষার মাত্র এক দিন বাকি থাকতে কেউ বলতে পারছে না পরীক্ষা নির্বিঘ্নে হবে কিনা। শিক্ষামন্ত্রী প্রতিদিনই হরতাল-অবরোধ বন্ধের আহবান জানাচ্ছেন। ওদিকে প্রতিদিনই কোনো না কোনো জেলায় হরতাল কর্মসূচির ডাক দিচ্ছে রাজনৈতিক সংগঠনগুলো। এতে পরীক্ষার্থীদের সাথে সাথে আমরাও উদ্বিগ্ন। তিনি আরো বলেন, রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান রাজনৈতিকভাবে হওয়া উচিত। রাজনীতিবিদদের এ কথা মনে রাখতে হবে, রাজনীতির কবলে পড়ে যেন কোমলমতি শিশুদের ভবিষ্যৎ হুমকিতে না পড়ে, এ কথা বিবেচনায় রেখে বড় দুই দলকে দ্রুত সমঝোতায় আসতে হবে। এ জন্য সরকারকেই প্রথমে এগিয়ে আসতে হবে। একই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, অতীতে আমরা দেখেছি পরীক্ষার সময় রাজনৈতিক বিভিন্ন কর্মসূচিতে শিথিলতা আনা হয়েছে। আমি এখনো বিশ্বাস করি পরীক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে বিরোধী সংগঠনগুলো হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি থেকে ফিরে আসবে। এ বিষয়ে কারিগরি শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও শিক্ষক কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ মো. শাহজাহান আলম সাজু বলেন, আসন্ন এসএসসি পরীক্ষা নির্বিঘ্নে অনুষ্ঠিত করার লক্ষ্যে হরতাল-অবরোধ প্রত্যাহার এবং ছাত্র, শিক্ষক ও অভিভাবকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছি। শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকসহ সাধারণ মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতিও দাবি জানান তিনি। বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সভাপতি আবু বকর সিদ্দিক বলেন, চলমান সহিংসতার মধ্যেই সরকার এসএসসি পরীক্ষা গ্রহণের ঘোষণা করেছে। কিন্তু অবরোধ-হরতাল আহবানকারীরা কোনোভাবেই গুরুত্ব দিচ্ছে না দেশের ১৫ লাখ শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎকে। শিক্ষা ধ্বংসের এই কর্মসূচি কোনোভাবেই কাম্য নয়। বাংলাদেশ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. নূর মোহাম্মদ তালুকদার বলেন, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা থেকেই গেল। আমরা নিশ্চিত না আমাদের সন্তানরা সুষ্ঠ পরিবেশে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা দিতে পারবে কি না।
এসএসসি পরীক্ষা নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান জানান, এসএসসি পরীক্ষার বিষয়ে এখনো পর্যন্ত আমাদের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আমার মনে হয় না বিএনপি পরীক্ষার বিষয়টি বিবেচনা করবে।
এ বিষয়ে পরীক্ষার্থী হুসনা আশরাফি কুমু বলেন, সব সময় একটা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। টিভি খুললেই আজকাল দেখি শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষকে পুড়িয়ে দিচ্ছে। এ রকম পরিস্থিতি আমাদের পড়ার মনোযোগে খুবই ক্ষতি করছে। যদি এমন অবরোধ-হরতাল চলতে থাকে তাহলে সঠিক সময় পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছতে সমস্যা হবে বলে আমার আশঙ্কা। রাজনীতিবিদরা যদি পরীক্ষার সময়টাতে অন্ততপক্ষে আমাদের কথাটা ভাবতেন, তাহলে আমরা খুবই উপকৃত হতাম। সন্তানের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন অভিভাবকরাও। অভিভাবক নাসরিন সুলতানা কেয়া বলেন, টানা অবরোধের নামে নাশকতায় অন্যান্য এসএসসি পরীক্ষার্থীর অভিভাবকের সঙ্গে আমিও উদ্বিগ্ন। সব সময় একটা আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হয়- কোন সময় কী হয় না হয় তা নিয়ে। জানি না হরতাল-অবরোধ থাকলে মেয়াটা পরীক্ষা কেন্দ্রে যেতে পারবে কিনা।
লেখক: রেজাউল করিম ভূঁইয়া