গাজীপুর অনলাইনঃ যখন ফাগুন আসে পলাশের লালিমায়, কৃষ্ণচূড়ার লাল ফুল পাপড়ি মেলে দেয়, যখন গ্রেগরিয়ান হিসেবে বছরের চাকা ঘুরে খুলে যায় ফেব্রুয়ারির গৌরবদীপ্ত পাতা, তখন এ শোষিত লাঞ্চিত বাঙালি হৃদয়ের নিভৃতে কী এক অব্যক্ত অনুভব অনুভূতি ভিড় করে।
কৃষ্ণচূড়া, শিমূল , পলাশের লালিমায় কিংবা ন্যায় সত্য সুন্দরের প্রতিষ্ঠায় যখন খুন ঝরে, বাঙালি চেতনায় একুশ জাগ্রত হয় তখনই।
আজ রবিবার শুরু হলো শোক শক্তি আর গর্বের মাস, মহান ভাষার অধিকার আদায়ের মাস ফেব্রুয়ারি। এ মাসটির সাথে মিশে গেছে বাঙালির কৃষ্টি সংস্কৃতি ঐতিহ্য আর বীরত্ব গাঁথা।
এ মাসেই দেখা মিলবে একুশে ফেব্রুয়ারি রাত্রির বৃন্ত থেকে ছিনিয়ে আনা এক আলো ঝলমল সকালের। যার স্পর্শে বাঙ্গালীর চেতনা শানিত ও বিকশিত হয়ে জাতি আজ স্বাধীকারের স্বাদ লাভ করেছে।
১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি মায়ের মুখের ভাষার জন্য এ দেশের দামাল ছেলেরা বুকের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত করেছিলেন। পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী কর্তৃক রাষ্ট্রভাষা হিসেবে উর্দুকে সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালির উপর চাপিয়ে দেয়ার প্রতিবাদে সেদিন এদেশের দামাল ছেলেরা ঢাকার রাজপথে ইতিহাসের নতুন অধ্যায় রচনা করেছিলেন নিজের জীবন দিয়ে মাতৃভাষা বাংলার সম্মান রক্ষা করে।
তাই সেদিন রাষ্ট্রভাষা হিসেবে মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা রক্ষার্থে জীবন উৎসর্গ করা সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার কোন দলের লোক ছিলেন – সেটা এদেশের গণমানুষ বিবেচনা করেনি। গণমানুষের মনে এঁরা দেশপ্রেমিক সূর্যসন্তান।
সেদিনের সেই আত্মদানই পরবর্তীকালে রূপ নিয়েছিল বাঙালির স্বাধিকার ও স্বাধীনতার আন্দোলনে। পাকিস্তানি শাসক এবং তাদের দোসরদের সব চক্রান্ত, সব ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে বাঙালি জাতি এগিয়ে গেল তার অভীষ্ট লক্ষ্যে।
৯ মাসের রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে জন্ম হলো স্বাধীন বাংলাদেশের। তাই এই ফেব্রুয়ারিকে নিয়ে আমাদের এত অহংকার, এত গর্ব। মাতৃভাষার জন্য বুকের রক্ত দেয়ার এমন নজির পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। আর সেই বিরল আত্মদানের স্বীকৃতিও মিলেছে।
শুধু বাংলাদেশেই নয়, সারা পৃথিবীতে আজ একুশে ফেব্রুয়ারিকে পালন করা হচ্ছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে। শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করা হচ্ছে সেই অমর শহীদদের, যারা ভাষার জন্য তাদের জীবন দিয়ে গেছেন। সত্যি আজও ভাই হারানোর কষ্ট বাঙালি ভুলতে পারেনি।
একুশে ফেব্রুয়ারি এক দিনে আসেনি। অনেক ত্যাগের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি এই গৌরবের মাস। ফেব্রুয়ারি এলেই আমরা ফিরে তাকাই আমাদের শিকড়ের দিকে। আমাদের সংস্কৃতি ও ইতিহাস-ঐতিহ্য নতুন করে আমাদের এগিয়ে চলার প্রেরণা জোগায়। সঙ্গত কারণেই ভাষার মাস নিয়ে আমাদের মধ্যে একটি অন্য রকম আবেগ কাজ করে। সেই আবেগের বহিঃপ্রকাশ থাকে মাসজুড়েই।
এদিকে শহীদের স্মরণে আজ বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে শুরু হচ্ছে অমর একুশের গ্রন্থমেলা। বিকাল ৩টায় মেলাটির উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মাসটিকে ঘিরে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন পালন করবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানা কর্মসূচি।