আসাদুজ্জামান আজম, ঢাকা: দেশের শীর্ষ স্থানীয় মোবাইল অপরারেটর কোম্পানী গ্রামীণফোনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে একটি চক্র। এক শ্রেণীর প্রতারক আর গ্রামীণফোনের কিছু অসাধু কর্মকর্তার একটি চক্র সংঘবদ্ধভাবে উঠতি বয়সের তরুণদের কাছ থেকে প্রতারণা করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাদের প্রতারণার খপ্পড়ে শত শত পরিবার নিঃস্ব হচ্ছে বলে জানা গেছে।
অনুসন্ধানে একটি চক্রের কার্যক্রম ধরা পড়েছে।
গত বছরের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ প্রতিদিনসহ একাধিক পত্রিকায় গ্রামীণফোন নেটওয়ার্কে ‘জিপি টাওয়ার’এ জেলা, উপজেলা পর্যায়ে স্থায়ীভাবে ২০ বছর মেয়াদে বিভিন্ন পদে লোক নিয়োগ দেয়া হবে বলে বিজ্ঞপ্তি দেয় একটি প্রতারক চক্র। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর দেশ জুড়ে উঠতি বয়সের তরুণদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলে। অনেকে সহায়-সম্বল ভিটে মাটি বিক্রি করে এ চক্রের হাতে তুলে দিয়েছে লাখ লাখ টাকা। কিন্তু চাকরি নামক সোনার হরিণ তো দূরের কথা, প্রতারকদের নাগালই পাচ্ছেন না তারা।
তথ্য মতে, প্রতারক চক্রটি কোম্পানীর নাম হিসেবে ব্যবহার করে গ্রামীণ টাওয়ার প্রাইভেট লিমিটেড। লোগো হিসেবে ব্যবহার করেছে গ্রামীণফোনের লোগো। প্রতিষ্ঠানটির কর্তা ব্যক্তি অর্থাৎ প্রতারকদের মধ্যে আশরাফু্জ্জামান (০১৭০৫৭৯১১৭৮, ০১৭১১৩১২৪৭৯), নিশাত রহমান (০১৭৯৭৮৯০৭১৪) মূল হোতা। প্রতিবেদকের কথা হয় প্রতারিত একাধিক যুবকের সাথে। তাদের কাছ সংগৃহীত কাগজপত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
যদিও এ ব্যাপারে গ্রামীণফোন কর্তৃপক্ষের বক্তব্য দায়সারা।
প্রতারণার শিকার হয়েছে জামালপুর জেলার যুবক রফিকুল ইসলাম। তিনি এইচএসসি পর্যন্ত পড়াশুনা শেষ করে বেকার। কোন কাজ পাচ্ছিলেন না। পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির সূত্র ধরে গ্রামীণফোনে চাকরির আশায় খুইয়েছেন প্রায় দেড় লাখ টাকা। বিনিময়ে তিনি পেয়েছেন একটি কাগুজে সীমাবদ্ধ নিয়োগপত্র। নিয়োগ পত্রে স্বাক্ষর করেছে আশিকুর রহমান ও মিনহাজ নামে দুজন।
হত দরিদ্র রফিকুল এখন প্রায় নিঃস্ব। টাকা উদ্ধারে শত চেষ্টা করেও কোন প্রতিকার পাচেছন না। মাঝে মধ্যে প্রতারকদের মোবাইলে পাওয়া গেলেও উল্টো হুমকি দিচ্ছে বলে জানান রফিকুল।
রফিকুল ইসলাম জাস্ট নিউজ’কে বলেন, পত্রিকা দেখে ফোন দিলে প্রতারকরা বায়োডাটা নিয়ে ঢাকায় আসতে বলে। ঢাকায় আসলে আশরাফুজ্জামান তাকে জানান, গ্রামীণ টাওয়ার প্রাইভেট লিমিটেড গ্রামীণফোনের সহযোগী প্রতিষ্ঠান। তারাই টাওয়ারে লোক নিয়োগ ও দেখাভাল করেন। গ্রামীণফোন যেহেতু বড় কোম্পানী তাই চাকরি পেতে হলে ১ লাখ টাকা ঘুষ দিতে হবে। তাকে ইনচার্জ সুপারভাইজার পোস্ট দেয়া হবে। তিনি ট্রান্সপোর্ট সুবিধা হিসেবে একটি মোটরসাইকেল পাবেন।
তিনি আরো জানান, পরের দিন রফিকুল ইসলামকে নিয়ে যাওয়া হয় গ্রামীণফোন কার্যালয়ে। তাকে বাইরে রেখে আশরাফুজ্জামানসহ দু’জন ভিতরে প্রবেশ করে। পরে ফিরে ৩০ হাজার টাকা চান কর্মকর্তাকে দেয়ার অজুহাতে। রফিকুল প্রথমবারের মতো ঐ দিন ২০ হাজার টাকা দেন। এর পরে বিভিন্ন সময়ে বিকাশের মাধ্যমে প্রায় লক্ষাধিক টাকা দিয়েছেন। পরবর্তীতে গত ২৮ ডিসেম্বর ২০১৪ একটি নিয়োগপত্র দিয়ে আরো ৫০ হাজার টাকা নেয় তারা।
বুধবার গ্রামীণ টাওয়ার প্রাইভেট লিমিটেডের দেয়া ৪৬-সি/এ, কারওয়ান বাজারে গিয়ে দেখা যায় সেখানে এ নামে কোন প্রতিষ্ঠান নেই।
ভবনটির সিকিউরিটি রফিকুল ইসলাম জানান, সপ্তাহ খানেক আগে তারা চলে গেছে। প্রতিদিনই প্রতারিত লোকজন এসে এখানে ভিড় করছে। প্রতিষ্ঠানটি কোথায় গেছে জানেন না তিনি।
এ ব্যাপারে গ্রামীণফোনের জনসংযোগ বিভাগের ডেপুটি ম্যানেজার মো. হাসান জাস্ট নিউজ’কে বলেন, এ ধরণের ঘটনার সঙ্গে গ্রামীণফোন কোনোভাবে জড়িত নয়। প্রতারকরা গ্রামীণফোনের নাম ব্যবহার করছে। একটু সচেতন হলেই এভাবে প্রতারিত হওয়ার কোনো সুযোগ থাকে না। আমরা গ্রামীণফোনের নিয়োগ সংক্রান্ত তথ্য পেতে ওয়েব সাইট দেখার পরামর্শ দিয়ে থাকি।
গ্রামীণফোনের লোগো ব্যবহার করে এমন প্রতারণা বন্ধে আপনারা কোনো ব্যবস্থা নিয়েছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা কেন ব্যবস্থা নেব। সচেতন করা ছাড়া গ্রামীণফোনের আর কিছুই করার নেই।