গাজীপুর অনলাইন: জেলার কালীগঞ্জ উপজেলা স্যানিটারী ইন্সপেক্টর দেব প্রসাদ মিত্র'র বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি নিয়ে আজ সোমবার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপনা কমিটির মাসিক সভায়ও আলোচনা হয়েছে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ওই স্যানিটারী ইন্সপেক্টর দীর্ঘদিন যাবৎ উপজেলার হোটেল, বেকারী, মিষ্টির দোকান, ফার্মেসী, মুদি দোকানসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতি মাসে বিভিন্ন হারে মাসোহারা নিয়ে নিয়মকে অনিয়মে পরিনত করেছেন। আর এ সুযোগে স্থানীয় খাবারের দোকানগুলোতে চলছে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে মানহীন খাবারের বানিজ্য। স্যানিটারী ইন্সপেক্টর হিসেবে বিষয়টি তার দেখার কথা থাকলেও মাসোহারার কারণে তিনি বিষয়টি প্রতিদিন এড়িয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু প্রতি মাসে মাসোহারা আদায়ের জন্য কালীগঞ্জের হোটেল, বেকারী, মিষ্টির দোকান, ফার্মেসী, মুদি দোকানগুলোতে ঠিকই ছুটে যান ওই ইন্সপেক্টর। সূত্র আরো জানান, ওই ইন্সপেক্টর থাকেন রাজধানীর পুরান ঢাকার মানিকনগর এলাকায়। প্রতিদিন ইচ্ছা হলে কর্মস্থলে আসেন, ইচ্ছা না হলে আসেন না। কিন্তু বিষয়টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রশাসনের দেখার কথা থাকলেও অজ্ঞাত কারনে তারা বিষটি এড়িয়ে যাচ্ছেন। আর বিষয়টি নিয়ে গতকাল সোমবার সকালে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপনা কমিটির মাসিক সভায় আলোচনা হয়। ওই সভায় উপস্থিত কমপ্লেক্স ব্যবস্থাপনা কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মোয়াজ্জেম হোসেন পলাশ বিষয়টি সদস্য সচিব ও উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মো. ইসমাইল হোসেন সিরাজীকে তদন্ত করে দেখার অনুরোধ করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কালীগঞ্জ বাজারের এক ব্যবসায়ী জানান, তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ বাজারের অন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতিমাসে বিভিন্ন হারে মাসোহারা নিয়ে থাকে। এদিকে উপজেলার সাওরাইদ বাজারের এক ব্যবসায়ী বলেন, স্যানিটারী ইন্সপেক্টর দেব প্রসাদ মিত্র স্থানীয় বাজারের ছোট ছোট ব্যবসায়ীদের কাছে লাইসেন্সের কথা বলে বিভিন্ন হারে টাকা নিয়ে থাকে। কিন্তু পরবর্তীতে লাইসেন্স না দিয়ে তিনি বলেন, আমি তো আছি কোন সমস্যা নেই। বক্তারপুর বাজারের এক হোটেল ব্যবসায়ী জানান, ওই ইন্সপেক্টর তার কাছে টাকা দাবি করেন। তিনি তা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে তাকে মোবাইল কোর্ট ও জেল জরিমানার ভয় দেখান। নাগরীর রায়েরদিয়া বাজারের মুদি ব্যবসায়ী মো. বিপ্লব হোসেন (২২) জানান, সম্প্রতি ওই বাজারে মাসোহারা তুলতে আসে স্যানিটারী ইন্সপেক্টর দেব প্রসাদ মিত্র। কিন্তু টাকার পরিমান কম দেওয়ায় ওই ব্যবসায়ীকে মোবাইল কোর্টের ভয় দেখান তিনি। পরে ওই ঘটনা বাজারের অন্য ব্যবসায়ীদের মধ্যে জানাজানি হলে তারা ওই ইন্সপেক্টরের ওপর চড়াও হন এবং তার শরীরে কেরোসিন ঢেলে পুড়িয়ে ফেলার প্রস্তুতি নেয়। পরে স্থানীয়দের সহযোগীতায় প্রাণে রক্ষা পায়।
কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মো. ইসমাইল হোসেন সিরাজী বলেন, উপজেলা স্যানিটারী ইন্সপেক্টরের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগের কথা আমিও শুনেছি। তার ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।
এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অভিযুক্ত স্যানিটারী ইন্সপেক্টর দেব প্রসাদ মিত্রকে জিজ্ঞেস করলে তিনি তার শরীরে কেরোসিন ঢালার ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ইতিপূর্বে যা হওয়ার হয়েছে। কিন্তু ভবিষ্যতে আমার বিরুদ্ধে আর কোন অভিযোগের কথা শুনবেন না।