গাজীপুর অনলাইন: বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ গত সাত বছরে ৬ বিলিয়ন থেকে ২৮ বিলিয়ন ডলারে এসে দাঁড়িয়েছে। আর এর কৃতিত্ব যার সেই গভর্নর ড. আতিউর রহমানকে বিদায় নিতে হলো অস্বাভাবিকভাবে।
মঙ্গলবার বিকেলে গুলশানে সরকারি বাসভবনে তিনি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক আমার সন্তানের মতো। আমি তিলে তিলে এর রিজার্ভ ২৮ বিলিয়ন ডলার করেছি। সেখান থেকে অর্থ চুরি হবে, এটা মানব না।’
তিনি বলেন, ‘আমি মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর চেতনা নিয়ে দেশকে ভালোবেসে কাজ করেছি। বঙ্গবন্ধুর কন্যা আমাকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর করেছেন। তার নির্দেশনা মোতাবেক কাজ করেছি। প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগপত্র দেওয়ার পর উনার চোখ দিয়ে পানি ঝরেছে। তিনি আমাকে বলেন, আপনি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। কারণ স্বেচ্ছায় কেউ পদত্যাগ করে না।’
যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে গচ্ছিত বাংলাদেশের রিজার্ভের ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়ে যাওয়ায় দেশজুড়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ ফান্ড তদারকির দায়িত্বে নিয়োজিতদের দিকে সন্দেহের তির। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমান সকল মহলের সমালোচনার তিরে ক্ষতবিক্ষত হয়ে পদ থেকে সরে গেছেন।
সোমবার দিল্লি থেকে ফেরার পর অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত অর্থসচিবসহ তাকে সেখানে সরাসরি যেতে বললেও তখন তিনি যাননি। পরে রাতে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে দেখে করেন আতিউর।বাংলাদেশ ব্যাংকেও তিনি যাননি। মঙ্গলবার পদত্যাগপত্র নিয়ে গণভবনে গেছেন।
গভর্নরের পদত্যাগের খবর শুনে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীর চোখে পানি দেখা গেছে। তারা বলেছেন, দেশের অর্থনীতিকে একটি শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করাতে গভর্নরের ভূমিকা ছিল অসামান্য। তার মতো মানুষ হয় না। পরবর্তী সময়ে এমন গভর্নর আর আসবে কি না সন্দেহ। তারা বলেন, শুধু অর্থনীতিই না বাংলাদেশ ব্যাংকের সৌন্দর্য থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রে তার অবদান রয়েছে।
সুইফট কোডে ৩৫টি অ্যাডভাইসে চলতি হিসেবে ১০০ কোটি ডলারই চলে যেত যদি না যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্ক আটকে না দিত। শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি অ্যাডভাইসে দেওয়া এনজিওর নামের বানান ভুল হওয়ায় ২ কোটি ডলার আটকে দেয়। বাকিটা ফিলিপাইনে ক্যাসিনো হয়ে হংকংয়ে চলে গেছে।
এ ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের ভূমিকা রহস্যজনক ও প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে বিষয়টি প্রায় এক মাস গোপন রাখার কারণে।
এ বিষয়ে গভর্নর বলেছেন, ‘যা ঘটেছে তা ভূমিকম্পের মতো। আমরা বুঝতে পারিনি। পরে যখন বুঝতে পারি প্রধানমন্ত্রী-অর্থমন্ত্রীকে জানিয়েছি।’
৫ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যাংক অব নিউইয়র্ক বাংলাদেশ ব্যাংককে অবহিত করলেও তারা সেটি গোপনই রাখে। অর্থমন্ত্রী দূরে থাক অর্থ মন্ত্রণালয়কেও জানাতে প্রয়োজন মনে করেনি বলে মন্তব্য করেছেন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান সচিব এম আসলাম আলম। রাজনৈতিক অঙ্গনে অর্থমন্ত্রী ও বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নরের পদত্যাগের দাবি উঠেছিল।
সংবাদ সম্মেলনে আতিউর বলেন, রিজার্ভ চুরির পর ভারত যাওয়াকে বড় ঘটনার পটভূমি করার কোনো কারণ ছিল না।
আতিউর বলেন, ‘আমি যে দিল্লিতি গিয়েছিলাম সেটা নিয়ে অনেক প্রশ্ন। আমি ভারতের অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির আমন্ত্রণে গিয়েছিলাম। সেখানে আইএমএফের চিফ ছিলেন, তাদের সাথে কথা বলেছি। অনলাইনে সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নিয়েছি। সেটাকে বড় ঘটনা করার কোনো পটভূমি ছিল না।’
তিনি বলেন, ‘আমার নিজের কাজের জন্য একবারও বিদেশ ভ্রমণ করিনি। বরং যেখানেই গিয়েছি বাংলাদেশ তথা বাংলাদেশ ব্যাংকের উন্নতির জন্য গিয়েছি। এমনকি বাংলাদেশ ব্যাংকে যোগদানের পর থেকে একদিন ছুটিও নিইনি।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমি যখন যাচ্ছি তখন রিজার্ভ ২৮ বিলিয়ন ডলার। যখন দায়িত্ব নিয়েছিলাম তখন রিজার্ভ ছিল ৬ বিলিয়ন ডলার। আমি পুরোপুরি সফল হয়েছি বলব না, তবে ব্যাংকের নতুন একটি ধারা তৈরি করেছি।’
ড. আতিউর বলেন, ‘কেউ আমাকে যখন জিজ্ঞেস করেন, আপনার কোন পরিচয় সবচেয়ে বড় মনে করেন। আমি নির্দ্বিধায় বলি শিক্ষকতা। আবার সেই সুযোগ এসেছে। সেখানে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আমার অভিজ্ঞতা বিনিময়ের সুযোগ হবে। তোমরা অনেকেই আমার শিক্ষার্থী ছিলে। আবার হয়তো তোমাদের সঙ্গে দেখা হবে, কথা হবে। অতঃপর শিক্ষকতাই হোক আমার পরিচয়।’