মো. মুজিবুর রহমান: গাজীপুরের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কাজী আজিমউদ্দিন কলেজের আজ জন্মদিন। উজ্জ্বল অতীতকে পাথেয় করে আলোকিত ভবিষ্যৎ নির্মাণে অবিরাম আলো বিকীর্ণ করে আসা এ বিদ্যাপীঠ আজ ৩৫ বছর পার করে ৩৬ বছরে পা দিল। প্রযুক্তিগত ও জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনের লক্ষ্যে ১৯৮১ খিস্টাব্দের ৪ জুলাই এই কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
ঢাকা জেলার তৎকালীন জেলা প্রশাসক আবুল হাসনাত মোফাজ্জল করিম কাজী আজিমউদ্দিন টেকনিক্যাল কলেজ নামে ৮.৫৭ একর জমির উপরে প্রতিষ্ঠিত এ কলেজটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে একাদশ শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমোদন লাভের শর্ত পূরণার্থে পরবর্তীতে কলেজের নাম থেকে টেকনিক্যাল শব্দটি বাদ দেওয়া হয়।
বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ যুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত গাজীপুর জেলার প্রাণকেন্দ্রে শিক্ষার আলোকবর্তিকা নিয়ে আলোকিত সুনাগরিক গড়ার মহান প্রত্যয়ে প্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধে অগ্রণী ভূমিকা পালনকারী কয়েকজন শিক্ষাব্রতীর প্রচেষ্টায় এবং প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ যুদ্ধে নিজের লাইসেন্সকৃত বন্দুক নিয়ে অংশগ্রহণকারী শিক্ষাদরদী ব্যক্তি কাজী আজিমউদিন আহাম্মদ- এর অর্থানুকূল্যে এ বিদ্যাপীঠটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এ কলেজের অন্যতম উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠা কালীন সম্পাদক ছিলেন প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ যুদ্ধের অগ্রনায়ক বর্তমানে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে দায়িত্বে নিয়োজিত মন্ত্রী আ. ক. ম মোজাম্মেল হক। কাজী আজিমউদ্দিন কলেজ দীর্ঘ পথ চলার গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস ও ঐতিহ্য নিয়ে এগিয়ে চলেছে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ার সুমহান প্রত্যয় নিয়ে।
পাশাপাশি সময়ের পথপরিক্রমায় কলেজটি ইতোমধ্যে স্বকীয় বৈশিষ্ট্যে ক্রমশঃ উজ্জ্বল হয়ে ওঠছে। কলেজটিকে আরও মহিমান্বিত ও মর্যাদার আসনে নিয়ে যেতে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও কাজী আজিমউদ্দিন কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতি মোঃ জাহিদ আহসান রাসেল এমপি আন্তরিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এ প্রসঙ্গে তাঁর অভিমত তাঁর পিতা জননেতা ভাওয়াল বীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতি থাকাকালীন সময়ে তিনি কলেজটির অবকাঠামোগত ও শিক্ষার মানোন্নয়নে ব্যাপক উন্নয়ন সাধন করেন। তাঁর আমলে তিনবার এ কলেজের তিনজন ছাত্র ডিগ্রি (পাস) পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান লাভ করে। এ ছাড়া বেশ কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রী মেধা তালিকায় স্থান পায়। এরই ফলশ্রুতিতে পরবর্তীতে কলেজটি জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে গৌরবের মর্যাদায় অভিসিক্ত হয়। সে সময় কলেজটির সুনাম ও মর্যাদা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়।
গাজীপুরের উন্নয়নের রূপকার বলিষ্ঠ নেতৃত্বের অধিকারী ও তারুণ্যের প্রতীক মো.জাহিদ আহসান রাসেল এমপি আরও জানান, ২০০১ খিস্টাব্দে জোট সরকারের আমলে এই কলেজের উন্নয়নের ধারা কিছুটা ব্যাহত হলেও আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে কলেজ গভর্নিং বডি পুনর্গঠিত হলে কলেজটি আবার উন্নয়নের ধারায় ফিরে আসে। তাঁর কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতির দায়িত্ব ভার গ্রহণ করার পর সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতায় কলেজটিতে এ পর্যন্ত দশটি বিষয়ে অনার্স কোর্স এবং তিনটি বিষয়ে মাস্টার্স কোর্স চালু করা হয়েছে। আরও কয়েকটি বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স কোর্স চালু করার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আধুনিক জ্ঞান ও প্রযুক্তিকে পাথেয় করে নতুন প্রজন্মকে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা দিয়ে গড়ে তোলাই তাঁর মূল লক্ষ্য।
কাজী আজিম উদ্দিন কলেজটি নিয়ে শিক্ষার্থী-শিক্ষক-অভিভাবকদের রয়েছে গৌরব ও অহংকার। সকল ক্ষেত্রেই এ কলেজটি অনন্য বৈশিষ্ট্যের অধিকারী।
গাজীপুরসহ দেশের উন্নয়ন-অগগতি সাধনে বিভিন্ন অঙ্গনে যারা আজ নেতৃত্ব দিয়ে চলেছে তাদের ছাত্রজীবন কেটেছে এই কলেজে। অন্যদিকে এই কলেজের অনেক শিক্ষার্থী বিদেশে অবস্থান করে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে প্রশংসনীয় অবদান রেখে চলেছে। দেশে শিল্পায়নের ক্ষেত্রে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী অগ্রসর ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। রাজনীতি ক্ষেত্রে এই কলেজের অনেক শিক্ষার্থী গুরুত্বপূর্ণ আসনে অধিষ্ঠিত রয়েছে।
ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতার মহান পেশায় নিযোজিত রয়েছে অনেক শিক্ষার্থী । এ ছাড়া বহু সংখ্যক শিক্ষার্থী বিচার, প্রশাসন ক্যাডারসহ বিভিন্ন ক্যাডারও সুনামের সঙ্গে দায়িতপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে । জাতীয় ও স্থানীয়ভাবে সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চার ক্ষেত্রে এই কলেজের বহু শিক্ষার্থী সন্তোষজনক ভূমিকা পালন করছে।
কাজী আজিমউদ্দিন কলেজটি একটি আদর্শ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সুপরিকল্পিত শিক্ষা কার্যক্রম কলেজটির অন্যতম বৈশিষ্ট্য। প্রাতিষ্ঠানিক শ্ক্ষিার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশের জন্য কাজী আজিমউদ্দিন কলেজে মানসম্পন্ন সহশিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। এ বিদ্যাপীঠে রোভার স্কাউটিং কার্যক্রম চালু রয়েছে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক-এর নেতৃত্বে উন্নতজীবন গঠনে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের রোভারিং-এর সুযোগ রয়েছে। প্রতি শ্রেণির জন্য এক বা একাধিক ক্লাস কো-অর্ডিনেটর ও প্রতি ৩০ জন শিক্ষার্থীর জন্য একজন স্টুডেন্ট কাউন্সিলর রয়েছে।
তারা সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীদের যাবতীয় একাডেমিক কার্যক্রমের অগ্রগতি পর্যালোচনা করেন। শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ভৌত অবকাঠামোর উন্নয়ন আবশ্যক। বর্তমানে অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়ন সাধন করা হয়েছে। একাডেমিক কার্যক্রমের জন্য চারতলা বিশিষ্ট শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার ভবন ২০১৫ খিস্টাব্দে ৬ আগস্ট উদ্বোধন করা হয়। এই ভবনের দোতলা নিমার্ণ কাজ শেষ হয়েছে। শ্রেণি কক্ষর যে সংকট ছিল তা নিরসন হয়েছে। খুশীর খবর যে অচিরেই বাকী দু’তলার নির্মাণ কাজ শুরু হবে।
এ কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. মো. আলতাফ হোসেন জানান অনন্য এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি জাতীয় ও জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। জাতীয় ও জেলা পর্যায়ে এ কলেজের একাধিক শিক্ষক শ্রেষ্ঠ শিক্ষক হিসেবে মর্যাদার আসন লাভ করেছেন। তাছাড়া খেলাধুলা, তথ্যপ্রযুক্তি, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রম ও জনসেবামূলক কর্মকাণ্ডেও এ কলেজের শিক্ষার্থীরাসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষক জেলা ও জাতীয় পর্যায়ে প্রশংসনীয় অবদান রেখে চলেছেন।
প্রকৃতির অপরূপ স্নিগ্ধ মনোরম পরিবেশে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী কাজী আজিমউদ্দিন কলেজ। কলেজটিতে রয়েছে শিক্ষা সহায়ক সব উপাদান। রয়েছে উন্নত ল্যাবরেটরি, রয়েছে পর্যাপ্ত পুস্তকসহ সমৃদ্ধ লাইব্রেরি। এ ছাড়া রয়েছে তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক উন্নত ল্যাব। সব মিলিয়ে কলেজটি এগিয়ে যাচ্ছে উন্নতি ও অগ্রগতির দিকে।
গুণগত শিক্ষা প্রদান, শিক্ষার্থীদের মানবিক গুণাবলির বিকাশ ও জাতি গঠনে অবদান রাখাসহ অর্জিত মেধা, জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার সর্বোচ্চ প্রয়োগের মাধ্যমে কাজী আজিমউদ্দিন কলেজের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক ও কলেজ গভর্নিং বডির সকল সদস্য উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে এগিয়ে নিবেন-এটাই হোক কলেজের ৩৬তম জন্মদিনের প্রত্যাশা।
[লেখক: কাজী আজিমউদ্দিন কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান।]