
ট্রেন্ড চেজার প্রকাশ করেছে সর্বকালের সর্বোচ্চ বাজেটের ২০ চলচ্চিত্রের কথা, যার সবই হলিউডের। সেখান থেকে শীর্ষ ১০ চলচ্চিত্র সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক।

এখনো পর্যন্ত নির্মিত ছবির মধ্যে এ ছবিটি নির্মাণ করতে সবচেয়ে বেশি খরচ হয়েছে। ২০১১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এ ছবিটি নির্মাণে খরচ হয়েছে ৪০৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ব্যয়বহুল এ ছবিটির শ্যুটিং করা হয়েছে হাওয়াই দ্বীপ, পুয়েত্রো রিকো, ক্যালিফোর্নিয়া ও যুক্তরাজ্যে। ১০টি কোম্পানি মিলে ছবিটির ভিজ্যুয়াল ইফেক্ট ও থ্রি-ডি ইফেক্টের কাজ করে।
আমেরিকান চলচ্চিত্রকার রব মার্শাল পরিচালিত বিশাল বাজেটের এ ছবিটি প্রযোজনা করেন জেরি ব্রুকহেইমার। পানির মতো টাকা ঢেলে ভুল করেননি এ প্রযোজক। বিশ্বব্যাপী ছবিটি আয় করেছে ১০৪৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। দুঃসাহসী নাবিকের সমুদ্র অভিযানের গল্প নিয়ে গড়ে ওঠা এ ছবির ক্যাপ্টেন জ্যাক স্পারসো চরিত্রে বরাবরের মতোই জনি ডেপকে দেখা গেছে।

বাজেটে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ছবিটিও পাইরেটস অব দ্য ক্যারাবিয়ান সিরিজের। ২০০৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এ ছবিটি নির্মাণ হয়েছিল ৩৪৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে। ৯৬৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করা এ ছবিটি ২০০৭ সালের আয়ের তালিকায় শীর্ষে ছিল।
পাইরেটস সিরিজের ছবি প্রযোজনা করেছেন জেরি ব্রুকহেইমার তবে আগেরটি থেকে পরিচালনায় এসেছে পরিবর্তন। এ ছবিটি পরিচালনা করেছেন গোরে ভারবিন্সকি। এবারো ক্যাপ্টেন জ্যাক স্পারসো হিসেবে ছিলেন জনি ডেপ।

মিশরের রানী ক্লিওপেট্রার জীবন নিয়ে গড়ে উঠেছে এ ছবির কাহিনী। ক্লিওপেট্রা রূপসী ছাড়াও শাসক হিসেবেও নামকরা ছিলেন। রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজারের সাথে তার প্রণয়, পরে সিজারের দীর্ঘদিনের সঙ্গী মার্ক অ্যান্টনিকে বিয়ে এবং আত্মহত্যাসহ প্রভৃতি কারণে ক্লিওপেট্রা ইতিহাসের এক স্মরণীয় নাম। স্বয়ং শেক্সপিয়ার তাকে নিয়ে নাটক লিখেছেন। ১৯৩৪ সালের পর ১৯৬৩ সালে তিনি আবার ফিরে আসেন রঙিন পর্দায়। ১৯৬৩ সালে নির্মিত এ ছবির বাজেট এখন পর্যন্ত নির্মিত ছবির তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছে।
সে সময়ে ছবিটি তৈরি করতে খরচ হয়েছিল ৪৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার যা বর্তমানের ৩৩৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমান। তখনকার সময়ের ব্যয়বহুল এ ছবি আয় করেছিল ৫৭ দশমিক ৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এখন ৪৫১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। রানী ক্লিওপেট্রার নাম-ভূমিকায় অভিনয় করেন এলিজাবেথ টেইলর। জোসেফ এল ম্যাকউইন্স নির্মিত ছবি প্রযোজনা করেছিলেন ওয়াল্টার ওয়ানগার। অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড বা অস্কারে নয়টি বিষয়ে নমিনেশন পায় ছবিটি। অবশেষে ছবিটি ৪টি ক্যাটেগরিতে অস্কার অর্জন করে।

টাইটানিক ছবি দেখেন নাই, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া ভার। ১৯১২ সালের ১০ এপ্রিল টাইটানিক জাহাজ ডুবে যাওয়ার ঘটনা নিয়ে গড়ে উঠেছে এ ছবির কাহিনী। বাস্তব এক বেদনা-বিধুর কাহিনী নিয়ে নির্মিত ছবিটি সারা বিশ্বের মানুষের মন জয় করে নেয়।
১৯ ডিসেম্বর ১৯৯৭ মুক্তিপ্রাপ্ত এ ছবিটি নির্মাণে ৮০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ হয় হয় যা এখনকার ২৯৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমান। টাইটানিক নির্মাণের সময় এটাই ছিল সর্বোচ্চ বাজেটের ছবি। বিশাল বাজেটের এ ছবিটি ২ দশমিক ১৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করে। জেমস ক্যামেরন ছবিটি নিমার্ণের পাশাপাশি ছিলেন সহ-প্রযোজক। ছবিটি ২০১২ সালে থ্রি-ডি প্রযুক্তিতে নতুন করে মুক্তি দেওয়া হয়। ছবিটিতে অভিনয় করে লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিও ও কেট উইন্সলেট গগনচুম্বী জনপ্রিয়তা পান। শুধু ব্যবসা করেই ক্ষান্ত হয়নি ছবিটি, জিতে নিয়েছে ১১টি ক্যাটেগরিতে অস্কার পুরস্কার।

মাকড়শার জালে মোড়ানো স্পাইডারম্যান উড়ে বেড়ান যেখানে সেখানে, অংশ নেন দুঃসাহসিক সব অভিযানে। স্পাইডারম্যান সিরিজের ছবিগুলো অনেকেরই পছন্দের। এ সিরিজের তৃতীয় ছবিটি উঠে এসেছে সর্বোচ্চ বাজেটের ৫ নম্বরে।
২০০৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবিটি তৈরিতে খরচ হয়েছিল ২৯৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। স্যাম রাইমি পরিচালিত ছবিটি ৮৯০ দশমিক ৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করে। স্পাইডারম্যান চরিত্রে ছবিটিতে অভিনয় করেন টবে ম্যাগুইরে।

অ্যানিমেটেড এ ছবিটি মুক্তি পায় ২০১০ সালে। অ্যানিমেডেটড মিউজিক্যাল কমেডি ছবিটি নির্মাণে খরচ হয়েছিল ২৮৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বিশ্বব্যাপী ছবিটি ৫৯১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করতে সক্ষম হয়।
ছবিটি যৌথভাবে নির্মাণ করেন নাথান গ্রেনো ও বায়রন হাওয়ার্ড। ওয়াল্ট ডিজনির হয়ে এটি প্রযোজনা করেন রয় কনলি। ছবিটি নির্মাণে এত খরচ হওয়ার পেছনে রহস্য হল, এটি নির্মাণ করতে ১০ বছর সময় লেগেছে। নির্মাণে সময় বেশি লাগায় স্বাভাবিক ভাবেই বেড়ে গেছে ছবিটির প্রোডাকশন খরচ।

২০১৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এ ছবিটি ব্যয়ের দিক থেকে সপ্তম হলেও আয়ের দিক থেকে রয়েছে তৃতীয় স্থানে। ছবিটি নির্মাণে খরচ হয় ২৮৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। সারাবিশ্বে ছবিটি আয় করে ১ দশমিক ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
ছবিটি নির্মাণ করেন মার্কিন পরিচালক জোস হেডোন এবং প্রযোজনা করেন কেভিন ফেইজে। চলচ্চিত্রটিতে মানব জাতির অস্তিত্ব রক্ষার জন্য অ্যাভেঞ্জারদের সাথে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন রোবট আলট্রনের যুদ্ধের কাহিনী তুলে ধরা হয়েছে।

ব্রিটিশ লেখিকা জে.কে রাউলিং রচিত কল্পকাহিনী সিরিজ হ্যারি পটার অনেকেরই পছন্দের বই। রঙিন পর্দায় এ সিরিজের সবগুলো ছবিই বক্স অফিসে আলোচনা তুলতে পেরেছে। তবে এই ছবিটির সাফল্যই সবচেয়ে বেশি। এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ আয়ের অষ্টমে থাকা ছবিটি আয় করেছে ৯৩৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ছবিটি নির্মাণে খরচ হয়েছিল ২৭৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
ডেভিড ইয়েট্স পরিচালিত ছবিটি ব্যয়বহুল হওয়ার অন্যতম কারণ হল হ্যারি পটার চরিত্রে অভিনয় করা ড্যানিয়েল র্যাডক্লিফ রেকর্ড পরিমাণ পারিশ্রমিক নেন। ২০০৯ সালে মুক্তি পায় ছবিটি।

জন কার্টার একটি অ্যাকশনধর্মী সায়েন্স ফিকশন ছবি। ২০১২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবিটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছিল ২৭৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ছবিটি আয় করেছিল ২৮৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এ আয় খুব হতাশাজনক হওয়ায় নির্মাতারা ছবিটির আর সিক্যুয়েল তৈরি করেননি।
ছবিটির নির্মাতা ছিলেন এন্ড্রু স্ট্যানটন। ছবিটির ব্যর্থতায় প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ওয়াল্ট ডিজনির চেয়ারম্যান রিক রস এক মাসের জন্য পদত্যাগ করেন।

এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ বাজেটের ছবির মধ্যে দশম স্থানে থাকা ওয়াটার ওয়ার্ল্ড মুক্তি পায় ১৯৯৫ সালে। ২৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে নির্মিত এ ছবিতে প্রধান অভিনেতা কেভিন কোস্টনার নিজের তহবিল থেকে ২০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেন। তবে খুব বেশি আলোচনা করতে পারেনি ছবিটি। খরচ তুলে সামান্যই লাভ করতে পারে চলচ্চিত্রটি। বিশ্বব্যাপী ছবিটি আয় করে ২৮৪ দশমিক ১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ছবিটি পরিচালনা করেন কেভিন রেয়নোল্ডস। মজার ব্যাপার হল, ২ দশমিক ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করে এ যাবতকালের সর্বোচ্চ আয়ের ছবি অ্যাভাটার খরচের শীর্ষে দশে নেই। একেই বলে কম পুঁজিতে বেশি ব্যবসা। ২৬৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ হয়েছিল ছবিটি নির্মাণ করতে।
উল্লেখ্য যে, আয়ের দিক থেকে সেরা দুই ছবি অ্যাভাটার ও টাইটানিকের নিমার্তা এক ব্যক্তিই। বারবার বিশ্ব চলচ্চিত্রকে ঝাঁকুনি দেওয়া এ চলচ্চিত্রকারের নাম জেমস ক্যামেরন।