‘ওয়ান ইলেভেনে’ পর্দার আড়ালে কী ঘটেছিল?

বহুল বিতর্কিত ও কলঙ্কময় ওয়ান ইলেভেন আজ। ২০০৭ সালের এই দিনে পশ্চিমা শক্তি ও প্রতিবেশী একটি দেশের মদদে ঘটেছিল বেসামরিক মোড়কে সামরিক সরকারের আবির্ভাব। দেশে জারি করা হয় জরুরি অবস্থা। দেশি-বিদেশি প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে আগত সেই ঘটনা পরবর্তীতে কলঙ্কিত ওয়ান ইলেভেন নামে পরিচিতি পায়।

আলোচিত সমালোচিত সেই সরকারকে স্বাগত জানিয়েছিল আওয়ামী লীগ। ইয়াজ উদ্দিন, মইনুদ্দিন, ফখরুদ্দিনদের সেই সরকার তিন মাসের স্থলে দুই বছর ক্ষমতায় থেকে নানা বিতর্কের জন্ম দেন।


প্রধান উপদেষ্টার পদ ছাড়ার পর সেই যে বাংলাদেশ ছেড়েছেন ড. ফখরুদ্দীন আহমেদ, আজও ফেরেননি।

২০০৭ সালের ১১ই জানুয়ারি সারাদিনই ছিল নানা জল্পনা-কল্পনা।

তৎকালীন সেনাপ্রধান মঈন ইউ আহমেদ এবং নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীসহ একদল সেনা কর্মকর্তা দুপুরের দিকে বঙ্গভবনে গিয়েছিলেন।

সে সময়ের ঘটনা প্রবাহ নিয়ে জেনারেল মঈন ইউ আহমেদ একটি বই লিখেছেন।

‘শান্তির স্বপ্নে: সময়ের স্মৃতিচারণ’ নামে সে বইতে বর্ণনা করেছেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান ইয়াজউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে বৈঠকে কিভাবে জরুরি অবস্থা জারির বিষয়টি উঠে এসেছিল।

সে বইতে মঈন ইউ আহমেদ বর্ণনা করেন, ‘আমি প্রেসিডেন্টকে দেশের সর্বশেষ পরিস্থিতি, নির্বাচন, বিরোধী রাজনৈতিক দলের আল্টিমেটাম এবং বিদেশি রাষ্ট্র সমূহের অবস্থান, বিশেষ করে নির্বাচনের ব্যাপারে জাতিসংঘের দৃঢ় অবস্থানের কথা জানালাম। জাতিসংঘ মিশন থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে প্রত্যাহার করা হলে যে বিপর্যয় ঘটতে পারে তা সবিস্তারে বর্ণনা করলাম। নৌ ও বিমান বাহিনীর প্রধান নিজ নিজ অবস্থান থেকে প্রেসিডেন্টকে পরিস্থিতির গুরুত্ব বোঝাতে সচেষ্ট হলো।’

সে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদফতরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল বারী।

২০০৭ সালের ২২শে জানুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে দেশে যে ধরনের সহিংস পরিস্থিতির তৈরি হতে পারে সে বিষয়টি গোয়েন্দা দৃষ্টিকোণ থেকে রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহমেদকে বুঝিয়েছেন।

সার্বিক বিবেচনায় সামরিক কর্মকর্তারা জরুরি অবস্থান জারির পক্ষে যুক্তি তুলে ধরলেন।

দেশে জরুরি অবস্থা জারি করা হতে পারে - এমন ধারণা পেলেও বিষয়টি নিয়ে ১১ জানুয়ারি সারাদিনই নিশ্চিত হতে পারছিল না আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র নেতারা।

সেদিন দুপুরে প্রভাবশালী কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছিল আওয়ামী লীগ নেতাদের। সে বৈঠকটি হয়েছিল ঢাকাস্থ কানাডীয় হাই কমিশনারের বাসায়।

সেখানে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতদের পাশাপাশি আমেরিকার রাষ্ট্রদূত এবং ভারতের হাই কমিশনার উপস্থিত ছিলেন।

সে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা শেখ ফজলুল করিম সেলিম।

সে বৈঠকের বর্ণনা দিতে গিয়ে সেলিম বলছিলেন, বিভিন্ন কথার এক পর্যায়ে তারা বললো এভাবে হলে তো দেশ চলতে পারে না। এভাবে হলে তো বিশৃঙ্খলা-অরাজকতা বাড়বে। আপনার দুই দল যদি সমঝোতায় না আসেন তাহলে অন্যরকম ঘটনা ঘটতে পারে। ওনাদের কথায় মনে হলো কী যেন একটা হচ্ছে। কারণ ওনারা পজিটিভ কিছু বললেন না।

একদিকে রাস্তায় আওয়ামী লীগের আন্দোলন এবং অন্যদিকে বঙ্গভবনে সেনা কর্মকর্তাদের তৎপরতা চলছে। একই সঙ্গে সক্রিয় হয়ে উঠেছিলেন ঢাকাস্থ বিদেশি কূটনীতিকরা।

পর্দার অন্তরালে কী ঘটতে যাচ্ছে, সে বিষয়ে অনেকটা অন্ধকারে ছিল সদ্য ক্ষমতা থেকে বিদায় নেয়া দল বিএনপি। দলটি তখন ২২ জানুয়ারির নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যস্ত।

বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া ১০ জানুয়ারি গভীর রাত পর্যন্ত কুমিল্লায় নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যস্ত ছিলেন। তখন খালেদা জিয়ার সঙ্গে ছিলেন বিএনপির সিনিয়র নেতা খন্দকার মোশারফ হোসেন।

মোশারফ হোসেন বলছিলেন, কুমিল্লার পদুয়ার বাজারে রাত নয়টা থেকে ১১টা পর্যন্ত জনসভা করেছেন। আমরা রাত একটার সময় ঢাকায় ফিরে আসি। ১১ তারিখ বিকেলের দিকে জানতে পারলাম যে সেনাবাহিনী থেকে প্রেসিডেন্ট ভবনে গিয়েছেন এবং সেখানে কিছু একটা হচ্ছে। জাতিসংঘের কিছু একটা চিঠি নিয়ে সেনাপ্রধান এবং নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি বঙ্গভবনে গিয়ে প্রেসিডেন্টকে দিয়ে জরুরি আইন ঘোষণা করাচ্ছেন।

সাধারণ নির্বাচন পরিচালনার জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান কে হবেন সেটি নিয়ে দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের মধ্যে তীব্র বিরোধের কারণে সহিংস পরিবেশ ছিল অনেকটা সময় ধরে।

বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার অনেক আগে থেকেই সে সময় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন বিরোধী জোট রাস্তায় আন্দোলন করছিল।

একপর্যায়ে রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহমেদ নিজেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

জেনারেল মইন ইউ আহমেদ তার লেখা বইতে জরুরি অবস্থা জারির পেছনে রাজনৈতিক পরিস্থিতির পাশাপাশি আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটও তুলে ধরেছেন।

২০০৬ সালের ২৯ অক্টোবর প্রেসিডেন্টের পাশাপাশি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব পালনের জন্য শপথ নেন প্রফেসর ইয়াজউদ্দিন আহমেদ।

সে বইতে ইয়াজউদ্দিন বর্ণনা ছিল এ রকম, একসময় ক্ষমতাধর কয়েকটি দেশের প্রতিনিধি আমার সঙ্গে দেখা করে জানাল, সব দলের অংশগ্রহণ ব্যতিরেকে নির্বাচনে সেনাবাহিনী সহায়তা করলে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে প্রত্যাহারের জন্য তারা জাতিসংঘকে অনুরোধ করবে। প্রচ্ছন্ন এ হুমকির পরিণতি অনুধাবন করতে আমার অসুবিধা হলো না। জাতিসংঘের কর্মকাণ্ডের নিয়ন্ত্রক এসব দেশের অনুরোধ ও মতামত যে জাতিসংঘ অগ্রাহ্য করতে পারবে না তা বলাই বাহুল্য। আমি এর পরিণাম চিন্তা করে শিউরে উঠলাম। তারপরেও আমার একমাত্র চিন্তা ছিল কিভাবে সেনাবাহিনীকে রাষ্ট্র যন্ত্রের কর্মকাণ্ড থেকে দূরে রাখা যায়।

সে সময় ইয়াজউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বাধীন সরকারের অন্যতম উপদেষ্টা ছিলেন ড. সোয়েব আহমেদ।

নির্বাচনে ২ জানুয়ারি যখন সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন অনিশ্চিত হয়ে পড়ে তখন ‘ভিন্ন কিছু’ আঁচ করছিলেন আহমেদ।

সেদিন সব উপদেষ্টাদের বঙ্গভবনে যাওয়ার জন্য অনুরোধ পাঠিয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহমেদ।

ড. সোয়েব আহমেদ বঙ্গভবনে গিয়ে জানতে পারেন যে তিন বাহিনীর প্রধান রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠক করছেন।

তখন উপদেষ্টা পরিষদের সবাই জানতে পারলেন যে রাষ্ট্রপতি জরুরি অবস্থা ঘোষণা করবেন। কিন্তু বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে তখনো তাদের জানানো হয়নি।

আহমেদ বলেন, এক পর্যায়ে রাষ্ট্রপতি আমাদের সঙ্গে চা চক্রে মিলিত হলেন। সেখানে তিনি জানালেন যে পরিস্থিতির জটিলতার কারণেই তত্বাবধায়ক সরকার ভেঙে দিতে হচ্ছে। আমরা সবাই রেজিগনেশন দিয়ে চলে গিয়েছি।

সে রাতেই শুরু হয়েছিল আরেকটি সরকার গঠনের প্রক্রিয়া।

প্রথমে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ইউনুসকে সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রস্তাব দেয়া হলে তিনি তাতে রাজি হননি।
তখন ড. ফখরুদ্দিন আহমদ প্রস্তাব পেয়ে এগিয়ে আসেন।

সেনাপ্রধান জেনারেল মঈন ইউ আহমেদসহ বেশ কয়েকজন সেনা কর্মকর্তা সে প্রক্রিয়া চালিয়েছিলেন। ড. ফখরুদ্দিন আহমদের নেতৃত্বাধীন সে সরকারে অন্যতম উপদেষ্টা হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন।

নতুন তত্বাবধায়ক সরকারে যোগ দেয়া প্রসঙ্গে মইনুল হোসেন বলছিলেন, আমার কাছে লোক পাঠানো হয়েছিল এবং বলা হয়েছিল যে আপনি আসেন। বলা হয়েছিল যে এটা কেউ জানবে না। সে হিসেবে আমি প্রাইম মিনিস্টারের অফিসের ওখানে আসলাম। সেখানে দেখলাম সামরিক বাহিনীর বড় বড় কর্মকর্তারা। ১৫-২০জনের মতো উপস্থিত ছিলেন।

তিনি ধারণা করেছিলেন যে হয়তো সামরিক শাসন জারি হতে যাচ্ছে।

তখন জেনারেল মইন ইউ আহমেদ সবার সামনে দেশের পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করলেন এবং মইনুল হোসেনকে নতুন একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের যোগ দেয়ার জন্য অনুরোধ করলেন।

কিন্তু ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন বললেন, সরাসরি সরকারে যোগ না দিয়ে তিনি নতুন সরকারের পেছনে থেকে সহায়তা করবেন। যুক্তি হিসেবে সরকার পরিচালনায় তার অনভিজ্ঞতার বিষয়টি তুলে ধরেন।

তখন সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা বিষয়টি ভেবে দেখার জন্য তাকে ৪৮ ঘণ্টা সময় দিয়েছিলেন।

‘আমাকে ৪৮ ঘণ্টা পরে ফোন করা হলো। এর মধ্যে আমি জানলাম যে ফখরুদ্দিন সাহেবকে প্রধান উপদেষ্টা করা হবে। তখন আমি ভাবলাম যে ফখরুদ্দিন সাহেব যদি থাকে তাহলে ঠিক আছে। যাওয়া যেতে পারে। আমি ফখরুদ্দিন সাহেবের সঙ্গে কথাও বললাম। উনি বললেন যে তুমি যদি আসো তো ভালোই হবে। এভাবেই আমি রাজি হয়েছি’ বলছিলেন মইনুল হোসেন।

ড. ফখরুদ্দিন আহমেদের শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা এবং এইচএম এরশাদসহ মহাজোটের নেতারা।

সে সরকার আওয়ামী লীগের আন্দোলনের ফসল বলে উল্লেখ করেছিলেন শেখ হাসিনা। কিন্তু সে সরকার এক পর্যায়ে বিএনপির পাশাপাশি শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকে গ্রেফতার করেছিল।

আওয়ামী লীগ নেতা শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, শুরুতে ভালো কথা বলা হলেও পরে সে সরকারের উদ্দেশ্য পাল্টে গিয়েছিল।

এক পর্যায়ে শেখ হাসিনা এবং খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে বাদ দেয়ার জন্য তখনকার সরকার নানা পদক্ষেপ নিয়েছিল বলে অভিযোগ উঠে।

রাজনীতিবিদদের পাশাপাশি শীর্ষস্থানীয় অনেক ব্যবসায়ীকেও আটক করা হয়েছিল। সংবাদমাধ্যমের ওপর ছিল কড়া নজরদারী। একটি সাধারণ নির্বাচনের বিষয়ে সেনা সমর্থিত সরকারের ওপর চাপও বাড়ছিল।



অবশেষে ২০০৮ সালের ২৯শে ডিসেম্বর সকল দলের অংশগ্রহণে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। যার মাধ্যমে দুই বছর পর দেশে ফিরে আসে গণতান্ত্রিক পরিবেশ। সূত্র- বিবিসি বাংলা




নাম

অর্থ ও বাণিজ্য,235,আন্তর্জাতিক,731,কাপাসিয়া,342,কালিয়াকৈর,417,কালীগঞ্জ,253,খেলা,644,গাজীপুর,3936,চাকরির খবর,33,জয়দেবপুর,1581,জাতীয়,2958,টঙ্গী,911,তথ্যপ্রযুক্তি,512,ধর্ম,196,পরিবেশ,136,প্রতিবেদন,310,বিজ্ঞান,55,বিনোদন,697,ভিডিও,58,ভিন্ন খবর,142,ভ্রমন,115,মুক্তমত,27,রাজধানী,829,রাজনীতি,1055,লাইফস্টাইল,283,শিক্ষাঙ্গন,398,শীর্ষ খবর,10757,শ্রীপুর,481,সাক্ষাৎকার,12,সারাদেশ,649,স্বাস্থ্য,212,
ltr
item
GazipurOnline.com: ‘ওয়ান ইলেভেনে’ পর্দার আড়ালে কী ঘটেছিল?
‘ওয়ান ইলেভেনে’ পর্দার আড়ালে কী ঘটেছিল?
https://4.bp.blogspot.com/-mXUJOLO2eHg/WldIvWOLA8I/AAAAAAAAV8U/suW08RqMDn4RCXbVpwPQu8QIWrLWFowdQCLcBGAs/s400/moin.jpg
https://4.bp.blogspot.com/-mXUJOLO2eHg/WldIvWOLA8I/AAAAAAAAV8U/suW08RqMDn4RCXbVpwPQu8QIWrLWFowdQCLcBGAs/s72-c/moin.jpg
GazipurOnline.com
https://www.gazipuronline.com/2018/01/1-11.html
https://www.gazipuronline.com/
https://www.gazipuronline.com/
https://www.gazipuronline.com/2018/01/1-11.html
true
13958681640745950
UTF-8
Loaded All Posts Not found any posts VIEW ALL Read More Reply Cancel reply Delete By প্রচ্ছদ PAGES POSTS View All RECOMMENDED FOR YOU LABEL ARCHIVE SEARCH ALL POSTS Not found any post match with your request Back Home Sunday Monday Tuesday Wednesday Thursday Friday Saturday Sun Mon Tue Wed Thu Fri Sat January February March April May June July August September October November December Jan Feb Mar Apr May Jun Jul Aug Sep Oct Nov Dec just now 1 minute ago $$1$$ minutes ago 1 hour ago $$1$$ hours ago Yesterday $$1$$ days ago $$1$$ weeks ago more than 5 weeks ago Followers Follow THIS PREMIUM CONTENT IS LOCKED STEP 1: Share. STEP 2: Click the link you shared to unlock Copy All Code Select All Code All codes were copied to your clipboard Can not copy the codes / texts, please press [CTRL]+[C] (or CMD+C with Mac) to copy