হঠাৎ আওয়ামী লীগে বিশৃঙ্খলা

*সব সামলাতে হচ্ছে সভাপতি শেখ হাসিনাকে *কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা *

শুক্রবার থেকে সারা দেশে সাংগঠনিক সফর চলতি বছরকে বলা হচ্ছে নির্বাচনী বছর। এই বছরের শেষে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। টানা ৯ বছর ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের এ বছরের শুরু থেকেই বিশৃঙ্খলা চরম আকারে দেখা দিয়েছে। সারা দেশে দলীয় কোন্দল, কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা, কেন্দ্রীয় উপকমিটি ফাঁস, স্থগিত কমিটি আবার ঘোষণাসহ দলটির সাংগঠনিক নানা দুর্বলতা দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। পরিস্থিতি এমন আকার ধারণ করেছে, সরকার পরিচালনায় ব্যস্ততার পাশাপাশি দলের সব খুঁটিনাটি বিষয়ের দেখভালও করতে হচ্ছে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা আলাপকালে আমাদের সময়কে বলেন, বর্তমানে দলের সাংগঠনিক দুর্বলতাগুলো প্রকাশ্যে দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। এই অবস্থা কেন্দ্র থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। আওয়ামী লীগের এই সাংগঠনিক সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য ইতোমধ্যে ১৫টি টিম গঠন করে দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। আগামী শুক্রবার থেকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি ও উপদেষ্টা পরিষদের জ্যেষ্ঠ নেতাদের নেতৃত্বাধীন কমিটিগুলো সারা দেশে সাংগঠনিক সফর শুরু করবে। দলটির নেতারা আশা করছেন, এর মধ্য দিয়ে কোন্দল কিছুটা হলেও কমে আসবে। নির্বাচনী বছরে আওয়ামী লীগের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ দলে শৃঙ্খলা আনা।

সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনার উদাহরণ দিয়ে আওয়ামী লীগের কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা নাম প্রকাশে অনীহা জানিয়ে বলেন, দলের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সহসম্পাদকদের নামের তালিকা রেওয়াজ অনুযায়ী দলের সাধারণ সম্পাদক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ঘোষণা করতেন অথবা সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানিয়ে দিতেন। ছাত্রলীগের সাবেক নেতা যারা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আসতে আগ্রহী, তাদের সাংগঠনিক দক্ষতা-মেধার মূল্যায়ন করা হতো উপকমিটিতে। আওয়ামী লীগের বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির অনেক নেতাই রয়েছেন, যারা ছাত্রলীগের রাজনীতি শেষে দলের কেন্দ্রীয় উপকমিটিতে স্থান পান। এর পর সেখান থেকে পদোন্নতি পেয়ে মূল দলে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

কিন্তু এই প্রথমবারের মতো ক্ষমতাসীন দলের কেন্দ্রীয় উপকমিটির নামের তালিকা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণার আগেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি নিয়ে বিব্রত আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। এ জন্য তারা দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং দপ্তর সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপকে দুষছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপকমিটির চূড়ান্ত খসড়া তৈরির পর এটি প্রধানমন্ত্রীকে দেখানোর কথা ছিল। কিন্তু তার আগে নিজের স্বাক্ষর দিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ের এক স্টাফকে দিয়ে মুখবন্ধ খামে করে দলের সব সম্পাদকম-লীর কাছে উপকমিটির তালিকা পৌঁছে দেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ও দলের দপ্তর সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ। এর পর উপকমিটির নামগুলো ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে যায়। উপকমিটিতে প্রচুর বিতর্কিত নাম দেখে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন পদপ্রত্যাশী ছাত্রলীগের সাবেক নেতাকর্মীরা।

তারা একপর্যায়ে তাদের দাবিদাওয়া জানিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয়ের সামনে। এমনকি আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের গাড়িও ঘিরে ধরেন বিক্ষুব্ধরা। পরে আলোচনায় বসে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক জানান, ফেসবুকে ছড়ানো কমিটি কোনো বৈধ কমিটি নয়। কারণ এই কমিটিতে দলের সাধারণ সম্পাদকের স্বাক্ষর নেই। তিনি ফেসবুকে ফাঁস হওয়া সব কমিটি ‘ভুয়া কমিটি’ জানিয়ে তিন মাসের মধ্যে দলের কেন্দ্রীয় উপকমিটি ঘোষণা করা হবে বলে বিক্ষুব্ধদের আশ্বস্ত করেন।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আবদুস সোবহান গোলাপকে টেলিফোনে পাওয়া যায়নি। গোলাপের ঘনিষ্ঠ দু-একজন জানিয়েছেন, দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের মৌখিক অনুমতিতেই উপকমিটিগুলো সম্পাদকদের কাছে পাঠিয়েছিলেন গোলাপ। কিন্তু উপকমিটি ঘোষণার পর পরিস্থিতি বেগতিক দেখে সব দোষ গোলাপের ওপর চলে এসেছে। এমনকি কমিটি ঘোষণার পর টানা কয়দিন দলীয় কার্যালয়ে আসেননি তিনি। সর্বশেষ গত সোমবার নিজের অনুসারী নেতাকর্মীদের বহর নিয়ে ধানমন্ডির কার্যালয়ে আসেন গোলাপ।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ১০ জনের বেশি নেতা আমাদের সময়কে জানিয়েছেন, উপকমিটিতে সহসম্পাদক হিসেবে তাদের সঙ্গে যাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তারা নিজেরাও তাদের অনেককে চেনেন না। নাম ঘোষণার আগে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর  সদস্যদের কাছ থেকে যেসব নাম চাওয়া হয়েছিল, সেই নামের সঙ্গে মিল নেই বললেই চলে ফেসবুকে ফাঁস হওয়া কমিটির নামের সঙ্গে। বিষয়টি নিয়ে দলের কেন্দ্রীয় প্রায় সব নেতাই ক্ষুব্ধ। তারা তাদের ক্ষোভের কথা জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশক্রমেই ফাঁস হওয়া সব উপকমিটি আপাতত স্থগিত করা হয়েছে।

উপকমিটি নিয়ে বিশৃঙ্খলা দেখা দেওয়ার আগে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের অন্তর্গত থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিয়নের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা নিয়েও বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। উপকমিটির নামের মতোই ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটির নেতাদের নামের তালিকা ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। একইভাবে বিক্ষুব্ধরা নালিশ জানান প্রধানমন্ত্রীর কাছে। পরদিনই সব কমিটি স্থগিত করে দেন শেখ হাসিনা। তিনি কমিটিগুলো যাচাই-বাছাইয়ের দায়িত্ব দেন কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতাকে। যাচাই বাছাই যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে, তখন আবার ওই আগের কমিটিই ঘোষণা করেন মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের নেতারা। নগর নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নির্দেশমতো তারা কমিটি ঘোষণা করেন। তবে এ বিষয়ে গণমাধ্যমে উদ্ধৃত হয়ে কারো নাম বলতে চাননি তারা। জানতে চাইলে মহানগরের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খানসহ অনেকেই আমাদের সময়কে বলেন, কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশে আমরা কমিটি দিয়েছি। কোন নেতা, জানতে চাইলে আর নাম বলতে চাননি তারা। কমিটি ঘোষণার দুদিন পর বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা গণভবনে আওয়ামী লীগ সভাপতির কাছে এ বিষয়ে অভিযোগ জানালে তিনি পুনরায় সব কমিটি স্থগিত করে দেন।

কেন্দ্রের দ্বন্দ্বের এই রেশ ছড়িয়ে আছে আওয়ামী লীগের সব জেলা, মহানগর, থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত। যদিও জেলা নেতাদের ঢাকায় ডেকে এনে কোন্দল মেটানোর চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। তার পরও দ্বন্দ্ব নিরসন হচ্ছে না। যেমন কয়েকদিন আগেই জয়পুরহাট জেলার নেতাদের ডাকা হয়েছিল আওয়ামী লীগের ধানম-ি কার্যালয়ে। বৈঠকের আগেই ধানম-ি কার্যালয়ের সামনে একচোট সংঘর্ষে জড়ান জয়পুরহাট আওয়ামী লীগের দুই পক্ষ। কাছাকাছি সময়ে নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে শামীম-আইভীর দ্বন্দ্ব আবার দৃশ্যমান আকার ধারণ করে।

আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, টানা কয়েক বছর দল ক্ষমতায় থাকার কারণে কোন্দল শক্তিশালী আকার ধারণ করেছে। যেখানেই সমস্যা রয়েছে, সেখানকার নেতাদের ঢাকায় ডেকে এনে কেন্দ্র থেকে বারবার ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু ঢাকায় বৈঠক শেষে এলাকায় গিয়ে আবার যা ছিল তা-ই থেকে যাচ্ছে পরিস্থিতি। উল্লেখ্য, এর আগে গত বছর দলের সাধারণ সম্পাদক যশোর, সাতক্ষীরা, খুলনা, কুষ্টিয়া, নড়াইলসহ বেশ কয়েকটি জেলার কোন্দল নিরসনে বৈঠক করলেও তা কোনো কাজে আসেনি।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য আমাদের সময়কে বলেন, ইদানীং কিছু সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে দলে অসুবিধা হচ্ছে এটা ঠিক। তবে এটা ঠিক হয়ে যাবে। তিনি বলেন, একমাত্র আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার কাছেই দলের সবকিছু নিরাপদ। বাকি যাদেরই দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে, তারা তাদের মতো করে দলকে দেখছেন, দলের মতো করে নয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য বলেন, দলের আগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম কিছুটা নিষ্ক্রিয় ছিলেন। এখনকার সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের একটু বেশি সক্রিয়।





- আমাদের সময়





নাম

অর্থ ও বাণিজ্য,235,আন্তর্জাতিক,731,কাপাসিয়া,342,কালিয়াকৈর,417,কালীগঞ্জ,253,খেলা,644,গাজীপুর,3936,চাকরির খবর,33,জয়দেবপুর,1581,জাতীয়,2958,টঙ্গী,911,তথ্যপ্রযুক্তি,512,ধর্ম,196,পরিবেশ,136,প্রতিবেদন,310,বিজ্ঞান,55,বিনোদন,697,ভিডিও,58,ভিন্ন খবর,142,ভ্রমন,115,মুক্তমত,27,রাজধানী,829,রাজনীতি,1055,লাইফস্টাইল,283,শিক্ষাঙ্গন,398,শীর্ষ খবর,10757,শ্রীপুর,481,সাক্ষাৎকার,12,সারাদেশ,649,স্বাস্থ্য,212,
ltr
item
GazipurOnline.com: হঠাৎ আওয়ামী লীগে বিশৃঙ্খলা
হঠাৎ আওয়ামী লীগে বিশৃঙ্খলা
https://4.bp.blogspot.com/-IXXASPRBBiM/WmeQOhcPH5I/AAAAAAAAWIE/G3NLAqjNQRw8HPvyF7II-AZD91Le-LSZgCLcBGAs/s400/lig.jpg
https://4.bp.blogspot.com/-IXXASPRBBiM/WmeQOhcPH5I/AAAAAAAAWIE/G3NLAqjNQRw8HPvyF7II-AZD91Le-LSZgCLcBGAs/s72-c/lig.jpg
GazipurOnline.com
https://www.gazipuronline.com/2018/01/bisrikhola.html
https://www.gazipuronline.com/
https://www.gazipuronline.com/
https://www.gazipuronline.com/2018/01/bisrikhola.html
true
13958681640745950
UTF-8
Loaded All Posts Not found any posts VIEW ALL Read More Reply Cancel reply Delete By প্রচ্ছদ PAGES POSTS View All RECOMMENDED FOR YOU LABEL ARCHIVE SEARCH ALL POSTS Not found any post match with your request Back Home Sunday Monday Tuesday Wednesday Thursday Friday Saturday Sun Mon Tue Wed Thu Fri Sat January February March April May June July August September October November December Jan Feb Mar Apr May Jun Jul Aug Sep Oct Nov Dec just now 1 minute ago $$1$$ minutes ago 1 hour ago $$1$$ hours ago Yesterday $$1$$ days ago $$1$$ weeks ago more than 5 weeks ago Followers Follow THIS PREMIUM CONTENT IS LOCKED STEP 1: Share. STEP 2: Click the link you shared to unlock Copy All Code Select All Code All codes were copied to your clipboard Can not copy the codes / texts, please press [CTRL]+[C] (or CMD+C with Mac) to copy