
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটি আইনগতভাবে অবৈধ বলে দাবি করেছেন সংগঠনটির কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা। মঙ্গলবার ২ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ১০টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের শিক্ষক লাউঞ্জে সাংবাদিক সম্মেলনে এ কথা বলেন তারা।
এসময় সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজক ছাত্রলীগের নেতারা বলেন, আজকে আমাদের প্রেস রিলিজ দেওয়ার কথা ছিলো, কিন্তু আমরা দিচ্ছি না। কারণ আমাদের ছাত্রলীগের বড় ভাইয়েরা ৩ জানুয়ারি আমাদের কথা শুনবেন বলে জানিয়েছেন। আমরা তাদের সেই কথায় সায় দিয়েছি। আশা করি আমরা ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সম্মেলনের তারিখ পাবো। উল্লেখ্য, ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগের ৭০তম সম্মেলন।
এর আগে গতকাল রাতে ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র বাধ্যবাধকতায় ‘ছাত্রলীগের সম্মেলন প্রত্যাশী নেতা-কর্মীবৃন্দ’ নামে একটি বার্তা গণমাধ্যমে পাঠানো হয়। ২ জানুয়ারি সকাল ১০টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের শিক্ষক লাউঞ্জে সংবাদ সম্মেলনের ডাকও দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের ২৬-২৭ জুলাই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্মেলনের মাধ্যমে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবে এস এম জাকির হোসাইনকে ২ বছরের জন্য নির্বাচিত করা হয়। ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ গত ২৭ জুলাই ২ বছর শেষ হয়।
গঠনতন্ত্র অনুযায়ী মেয়াদ শেষ হওয়ার তিন মাসের মধ্যে সম্মেলন দিয়ে নতুন কমিটি নির্বাচিত করার কথা থাকলেও ৬ মাস পার হওয়ার পরও কোনো সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয়নি। এতে দলের ভেতর মনোমালিন্য তৈরি হয়েছে। এক পক্ষ গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দল চালানোর জন্য বলছেন।
মৌখিক এই সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মেহেদী হাসান রনি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সায়েম খান, শিক্ষা ও পাঠচক্র বিষয়ক সম্পাদক গোলাম রাব্বানিসহ ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
এই সময় গোলাম রাব্বানি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কয়েকজনের কাছে ছাত্রলীগের দায়িত্ব দিয়ে আমানত দিয়েছেন। সেই আমানতের খেয়ানত যেনো না হয়, সেজন্যই আমরা গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সম্মেলন চাচ্ছি। আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে স্পষ্ট মেসেজ আশা করছি। কারণ বর্তমান কমিটির সাথে তৃণমূলের ভরসা ও আস্থার জায়গায় গ্যাপ তৈরি হয়েছে। আমরা চাই নতুন কমিটির মাধ্যমে ছাত্রলীগের কার্যক্রমে আবার প্রাণ ফিরে আসুক।
কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাথে কথা হয়েছে উল্লেখ করে ছাত্রলীগের এই কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম এনামুল হক শামীমের সাথে আমাদের কথা হয়েছে। তিনিসহ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আগামীকাল ৩ জানুয়ারি আমাদের সাথে বসবেন। তিনি আমাদের কথা শুনবেন বলে জানিয়েছেন। আমরা চাই ৪ তারিখ যেন কমিটির ব্যাপারে একটা ডিরেকশন পাই। কোনোভাবেই যেনো গঠনতন্ত্র ভাঙা না হয়, আমরা সে জন্য কাজ করছি। তারা সদয়ভাবে বলেছেন তারা আমাদের সাথে বসবেন। সম্মেলনের একটা তারিখ দেবেন বলে আমরা আশা করছি। এটা তৃণমূল ছাত্রলীগের দাবি।
কেন্দ্রীয় এই নেতা আরো বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গঠনতন্ত্র রক্ষার জন্য অনেকবার বলেছেন। ছাত্রলীগের ঢাকা জেলা সম্মেলনেও তিনি বলেন, নিয়মিত সম্মেলন না হলে নেতৃত্বে ট্রাফিক জ্যামে স্থবিরতা তৈরি হয়। এটা তিনি পছন্দ করেন না। আমরা আশা করি তিনি আমাদের কথা, তৃণমূল ছাত্রলীগের কথা প্রধানমন্ত্রীকে জানাবেন।
এ সময় সংগঠনের অর্থের বিষয়ে কেন্দ্রীয় এই নেতা বলেন, সংগঠন কিভাবে চলবে তা গঠনতন্ত্রে উল্লেখ আছে। সংগঠনের জন্য নির্দিষ্ট তহবিল করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু অনেক ছাত্রলীগ কর্মী টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তাহবিল থাকলে আজ এটা হতো না। আমরা চাই গঠনতন্ত্র অনুযায়ী চলুক। এটাই আমরা চাই।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সায়েম খান বলেন, সম্মেলনে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ২৭ জুলাই বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ। এরপর এই কমিটি বেআইনি হয়ে গেছে। আমি সচেতন কর্মী । আমি চাই গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সংগঠন চলুক। দলের প্রয়োজনে আমরা যেকোনো সিদ্ধান্ত মেনে নিবো। শেখ হাসিনা যে বার্তা দেবেন সেটা মেনে নেবো।
এ সময় তিনি বলেন, ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র শেখ হাসিনার দেওয়া। যাদের গঠনতন্ত্র নেই তারা ঢাল হিসেবে নেত্রীকে ব্যবহার করবে। কিন্তু ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র রয়েছে। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সংগঠন চলুক।