
টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে আমবয়ানের মধ্য দিয়ে আজ শুক্রবার শুরু হয়েছে বিশ্ব ইজতেমার ৫৩তম আসরের দ্বিতীয় পর্ব। ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা শীত উপেক্ষা করে ভোরের মধ্যেই ময়দানে এসেছেন। তাদের ইবাদত-বন্দেগি ও জিকির আসকারে বৃহস্পতিবারই মুখর হয়ে উঠে ময়দান। আজ এখানে জুমার জামাতে শরিক হবেন লাখো মুসল্লি। রোববার দুপুরের আগে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে সমাপ্তি ঘটবে এবারের বিশ্ব ইজতেমার।
প্রথম পর্বে আসা ৯৭ দেশের প্রায় ২০ হাজার মেহমান এখনও ময়দানে আছেন। তারা অংশ নিচ্ছেন দ্বিতীয় পর্বেও। আরও কিছু বিদেশি মেহমান বৃহস্পতিবার ময়দানে এসেছেন। দেশি মুসল্লিদের মধ্যে এ পর্বে অংশ নিচ্ছেন ১৬ জেলার বাসিন্দারা। তবে এর বাইরের জেলা থেকে বেশকিছু মুসল্লি এসেছেন তাবলিগে সময় (দেশে-বিদেশে ৪০ দিন বা তার বেশি) লাগানোর জন্য।
বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ইজতেমা ময়দানসহ আশপাশের এলাকায় অবস্থান নিয়েছেন। দুপুরে এক ব্রিফিংয়ে গাজীপুর পুলিশ সুপার হারুন-অর-রশীদ বলেন, মুসল্লিদের নিরাপত্তায় আট স্তরের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। নদীপথ, স্থলপথ ও মোটর প্যাট্রুলসহ পুরো ইজতেমা ময়দান নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা রয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রত্যেক মুসল্লিকে নির্ধারিত খিত্তায় অবস্থান, অপরিচিত ও সন্দেহভাজন ব্যক্তি এবং কোনো পোঁটলা, ব্যাগ বা সন্দেহজনক বস্তু দেখামাত্র আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানানোর অনুরোধ জানিয়েছে। এ ছাড়া টাকা ও মূল্যবান সামগ্রী নিজ হেফাজতে রাখা, ফেরিওয়ালাদের কাছ থেকে খাদ্য বা পানীয় গ্রহণ না করার অনুরোধ জানিয়েছে।
ঢাকা জেলার মুসল্লিরা ১-১০, ১৮ ও ১৯ নম্বর খিত্তায় অবস্থান করছেন। জামালপুরের মুসল্লিরা ১১ ও ১২, ফরিদপুর ১৩, কুড়িগ্রাম ১৪, ঝিনাইদহ ১৫, ফেনী ১৬, সুনামগঞ্জ ১৭, চুয়াডাঙ্গা ২০, কুমিল্লা ২১ ও ২২, রাজশাহী ২৩ ও ২৪, খুলনা ২৫ ও ২৭, ঠাকুরগাঁও ২৬ ও পিরোজপুরের মুসল্লিরা ২৮ নম্বর খিত্তায় অবস্থান করছেন। নারীদের জন্য ময়দানের উত্তর-পশ্চিম কোণে রয়েছে মাস্তুরাত কামরা।
টঙ্গী-কামারপাড়া রোড ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পশ্চিমপাশে হরেকরকমের সামগ্রী নিয়ে বসেছে দোকানিরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের উঠিয়ে দিলেও পরক্ষণেই তারা আবার বসছে। এরা একদিকে অতিরিক্ত দাম নিচ্ছে, অন্যদিকে এদের জন্য মুসল্লিদের চলাচলে বিঘœ ঘটছে। ময়দানের চারপাশে অন্ধ, পঙ্গু, বাক প্রতিবন্ধী ও বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত ভিক্ষুকের অতি ভিড়ে মুসল্লিদের বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে।
টঙ্গী সরকারি হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. মো. পারভেজ হোসেন জানান, টঙ্গী হাসপাতাল ৫০ শয্যা থেকে ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে। মুন্নু গেট, বাটা গেট ও হোন্ডা গেটে তিনটি উপস্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এছাড়া টঙ্গী ঔষধ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতি, হামদর্দ ল্যাবরেটরিজ, আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম, ইবনে সিনা, বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন, র্যাব, ইমাম সমিতিসহ অর্ধশতাধিক প্রতিষ্ঠান বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছে।
১৯৬৭ সাল থেকে নিয়মিত বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ১৯৯৬ সালে একই বছর ২ বার বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। স্থান সংকুলান না হওয়ায় ২০১১ সাল থেকে নিয়মিত দুই পর্বে বিশ্ব ইজতেমার আয়োজন করা হচ্ছে। এবার প্রথম পর্ব অনুষ্ঠিত হয় ১২-১৪ জানুয়ারি।