
ওয়েব ডেস্ক : সময় থাকতেই সজাগ হোন। প্রতিদিনের কিছু সু-অভ্যাসই ভাল দাঁতের গোড়ার কথা। প্রায়ই ঠোঁটের কোণে কিংবা মুখের ভিতরে ঘা হতে দেখা যায়। যা কিনা সাধারণ একটি অসুখ। কিন্তু দীর্ঘদিনের অবহেলা তা ক্যানসারের মতো মারণ রোগ ডেকে আনে। মুখের ঘায়ের যে কোনও সমস্যার সমাধান রয়েছে ভিটামিনে! এই ধারণায় বিশ্বাসী হয়ে ভুল করবেন না। মুখে ঘা হলে ভিটামিন না খেয়ে সঠিকভাবে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা করুন। বদলান কিছু অভ্যাস। সিগারেট, গুটখা, তামাকজাত দ্রব্য সরাসরি ক্যানসারের জন্য দায়ী। পান খাওয়ার নেশা থাকলে সুপারি, খয়ের ও চুন থেকেও ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা যথেষ্ট।
মুখের ঘা, সতর্ক হোন: মুখের ভিতরে লাম্প, কোনও ব্যথাহীন পিণ্ড, মাড়িতে সাদা বা লাল দাগ, শুকনো না হওয়া ঘা নজরে পড়লে কিংবা কোনও ডেলা অনুভব করলেই সতর্ক হবেন। একইসঙ্গে উপরের মাড়ির দাঁতের শেষ থেকে নিচের মাড়ির দাঁতের শেষ পর্যন্ত যে মিউকোসলি ব্যান্ড নেমে আসে তাতে কিছু অস্বাভাবিকতা দেখলে শীঘ্রই ডাক্তার দেখান। মুখের তালুর লাম্পও অবহেলা করবেন না। অন্যদিকে জিভের কোথাও লাল বা সাদা দাগ অথবা দু’-সপ্তাহ ধরে না শুকানো ঘা মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে। এছাড়াও মুখের ভিতরে অকারণ রক্তক্ষরণ, দাঁত তোলার পরও সম্পূর্ণ সেরে না যাওয়া, মাড়ির গর্ত, গলার কোনও অংশে কোনও লাম্প বা ওই জাতীয় কোনও টিউমার, স্বাভাবিকভাবে মুখ খুলতে ও কথা বলতে অসুবিধে কিংবা জিভের স্বাভাবিক নড়াচড়াজনিত কোনও বাধা এলেও প্রথমেই সতর্ক হয়ে যান।
খাদ্যাভ্যাসের কারণে ক্যানসার: মুখমণ্ডলের ক্যানসারের জন্য সাধারণত তামাক ও তামাকজাত দ্রব্যকে কারণ হিসাবে ধরা হয়। কিন্তু তামাকের মতো সমান ক্ষতিকর সুপারি, খয়ের, চুনও। আমাদের দেশে পান খাওয়ার অভ্যাস অত্যন্ত প্রচলিত। পানের সঙ্গে থাকা সুপারির মধ্যে অ্যারিকালিন নামে ক্ষারীয় পদার্থ থাকে। ওরাল সাবমিউকাস ফাইব্রোসিস হওয়ার পিছনে যে এই অ্যারিকোলিনের ভূমিকা রয়েছে তা বিজ্ঞানীরা ইতিমধ্যে প্রমাণ করেছেন। আর এই ওরাল সাবমিউকাস ফাইব্রোসিসকে ক্যানসারের প্রথম ধাপ বলা যেতে পারে।
নিয়মিত দাঁত পরীক্ষা করুন: শরীরের আর পাঁচটা অঙ্গের মতো মুখের ভেতরের যত্ন নিতে উদাসীনতা দেখা যায়। একইসঙ্গে যতক্ষণ না দাঁতে ব্যথা হচ্ছে ততক্ষণ সেটা পরীক্ষা করতেও অনীহা দেখা দেয়। সমীক্ষায় ধরা পড়েছে, আমাদের দেশের প্রায় ৭৫% মানুষ সারা জীবনে একবারও দাঁত পরীক্ষা করান না। বাকি ২৫% মানুষ তখনই ডাক্তারের কাছে যান, যখন দাঁতের যন্ত্রণা মারাত্মক হয়ে ওঠে। কিন্তু নিয়মিত যে দাঁতকে পরিচ্ছন্ন রাখতে হয়, দাঁতের যত্ন নিতে হয়, চেকআপ করাতে হয়, মাড়ির যত্ন নিতে হয়, বেশির ভাগ সময়ে আমরা তা ভুলে যাই। একইসঙ্গে মুখের ভিতরে যদি লাল বা সাদা রঙের দাগ কিংবা কোথাও ফোলাভাব অনুভূত হয় সেটাও ক্যানসারের আকার নেওয়ার আগে বেশিরভাগ মানুষ উদাসীন থেকে যান। ডায়াবেটিস থাকলে তো অবশ্যই নিয়মিত দাঁত ও মুখের ভিতরে পরীক্ষা করানো উচিত। অনেকসময় আংশিকভাবে ভাঙা দাঁত কিংবা দাঁত ক্ষয়ে গিয়ে ধারালো হয়ে যায়। এই ধারালো দাঁতের ঘষা লেগে গাল ও জিভ কেটে যেতে পারে। তাছাড়া অসমতল খারাপ দাঁত থাকলে তা থেকেও যাতে ভবিষ্যতে ক্যানসার না ছড়ায় সেদিকে সময় থাকতেই খেয়াল রাখতে হবে।
কী করবেন:
ওরাল ক্যানসারের প্রাথমিক লক্ষণ চিনে নিন।
জীবনযাত্রার পরিবর্তন করে নিজের ডায়েটের দিকে নজর দিন। পান-সুপারি, রঙিন প্যাকেটে ভরা নানারকম পানমশলা, খয়ের, চুন থেকে যথাসম্ভব দূরে থাকুন।
দিনে দু’বার ব্রাশ করুন, তবে সঠিক টুথব্রাশ ও সঠিক মানের টুথপেস্ট ব্যবহার করতে হবে। দাঁতে ব্যথা না হলেও প্রতি ছ’মাসে একবার করে দন্ত চিকিৎসকের কাছে যান। কোনও ধারালো দাঁত থেকে বারে বারে আঘাত লাগলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
মুখের ভিতরে যে কোনও অস্বাভাবিকতা অনুভব করলে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া নিজে থেকেই ভিটামিনের কোর্স করতে শুরু করে দেবেন না। বরং সঠিক চিকিৎসা করে পুরোপুরিভাবে রোগ নির্মূল করুন।