
লিনতা ইসলাম। বেড়ে উঠেছেন ঢাকার খিলগাঁও তে। তার শিক্ষাজীবনের প্রতিটি পর্যায়ে রয়েছে অনন্যতার চাপ। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের তার অসামান্য ফলাফল তাকে মেধাক্রমের প্রথম দিকে স্থান দিয়েছে। একজন দক্ষ কম্পিউটার প্রোগ্রামার্ ও ভোজনবিলাসী লিনতা ঘুরতে পছন্দ করেন। লিনতা গত সেপ্টেম্বরে পূর্ন বৃত্তি নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার আইভি লীগ খ্যাত ইউনিভার্সিটি অফ সিডনিতে পি এইচ ডি প্রোগ্রামে যোগদান করার জন্য বাংলাদেশের মায়া প্রায় ৩ বছরের জন্য ত্যাগ করেছেন। চলুন লিনতার কাছ থেকে জেনে নেই অস্ট্রেলিয়াতে স্কলারশিপ নিয়ে পড়তে চাইলে কি কি পন্থা অবলম্বন করা উচিত।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ও স্কলারশিপ পাওয়ার জন্য যা যা থাকা আবশ্যক :
লিনতার মতে, সাধারণত অস্ট্রেলিয়াতে পূর্ণ স্কলারশিপ পেতে হলে আপনাকে পি. এইচ. ডি ই করা লাগবে। ব্যাচেলর অথবা মাস্টার্স পর্যায়ে তে ফুল ফান্ড দেয়া হয় না। একজন আবেদন কারীর যেই যেই বিষয়গুলো খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখা হয় সেগুলি নিচে বিস্তারিত বর্ণনা করা হলো।
১। IELTS – এটা খুবই জরুরী। আপনি ইংরেজি পড়তে, বলতে, লিখতে, শুনতে পারেন কিনা তার প্রমাণ হচ্ছে এটা। স্কলারশিপ বা এডমিশন নিতে প্রতিটা ব্যান্ডে সর্বনিন্ম ৬ লাগবে এবং গড়ে ৬.৫ থাকা বাধ্যতামূলক। তবে IELTS ছাড়াও আরও অনেক পরীক্ষা আছে যেগুলো নির্ধারণ করে যে আপনি ইংরেজি পারেন কিনা। তাই যাদের IELTS নাই তারা চাইলে সেই পরীক্ষাগুলোও দিতে পারেন।
২। CGPA – বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এডমিশনের জন্য সাধারণত সিজিপিএ ৩.৫০ চায় (৪.০০ স্কেলে)। তবে স্কলারশিপ পেতে হলে আপনার একটু বাড়তি সিজিপিএ দরকার হতে পারে। কোন প্রফেসর হয়তো ৩.৬ চায়, কেউ কেউ আবার ৩.৭ চায়। স্নাতক/ স্নাতকোত্তর পর্যায়ে আপনার ক্লাস পজিশন যদি প্রথম ৩ অথবা ৫ এর মধ্যে থাকে তাহলে তো কথাই নেই। তবে অনেকক্ষেত্রে এর থেকে কম সিজিপিএ নিয়েও ফান্ডিং পাওয়া যায়, তার জন্য আপনার লাগবে গবেষণাপত্র কিংবা ভালো ভালো কাজ করার অভিজ্ঞতা। একটা কথা মনে রাখতে হবে অস্ট্রেলিয়ান বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে বি. এস. সি. এর পর পর সরাসরি পি. এইচ. ডি তে আবেদন করা যায় না। মাস্টার্স ডিগ্রি থাকা অত্যাবশ্যক। তবে, আপনি যদি বুয়েট অথবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে থাকেন সেই ক্ষেত্রে শিথিলতা আছে। বাংলাদেশের অন্নান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে মাস্টার্স ছাড়া পি. এইচ. ডি. করার সুযোগ নেই বললেই চলে।
৩। Publication – উপরের ২/১ টায় কোন কিছু কম থাকলে শুধুমাত্র গবেষণাপত্র দিয়েই স্কলারশিপ পাওয়া সম্ভব। যে কোন ভালো জার্নাল অথবা কনফারেন্স প্রকাশিত পেপার স্কলারশিপ আবেদনের সময় অনেক গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হয়। তাই অবশ্যই চেষ্টা করবেন বেশী বেশী গবেষণাপত্র বের করার।
৪। Work Experience – এটা থাকলে ভালো। উদাহরণস্বরুপ, লিনতা যখন স্কলারশিপের জন্য আবেদন করেন তখন তার চাকুরীর অভিজ্ঞতা ছিল না। কিন্তু যখন পি. এইচ. ডি. এর জন্য ইন্টারভিউ দেন তখন তিনি চাকুরী শুরু করে দিয়েছেন। তার মতে, এটি তার স্কলারশিপ আবেদনকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করেছে। তবে এটার গুরুত্ব তখনই যখন আপনার আগের পয়েন্ট গুলোতে কম বেশী থাকবে।
৫। Co-curricular activities – আপনারা যারা কম্পিউটার বিজ্ঞানে পড়াশুনা করেছেন তাদের জন্য ভালো প্রোগ্রামিং এর দক্ষতা থাকাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আপনি কোড করতে পারেন কিনা সেটা যাচাই বাছাই করেই তারা আপনাকে নিবে। সেই ক্ষেত্রে এ সি এমের সমস্যাগুলো বেশী বেশী সমাধান করা এবং প্রোগ্রামিং কম্পিটিশনগুলোতে ভালো ফলাফল করা থাকলে এই জিনিসগুলো আপনার সিভি কে আরও ভারী করে তুলবে।
৬। অস্ট্রেলিয়াতে এডমিশন পেতে হলে অবশ্যই আপনাকে একজন প্রফেসর ম্যানেজ করতে হবে যে আপনাকে আপনার পি. এইচ. ডি চলাকালীন সময়ে দিকনির্দেশনা দিতে রাজি হবে। সে ফান্ড দিক আর না দিক, সেটা মুখ্য বিষয় না। এডমিশন নিতে হলে আপনার একজন প্রফেসরকে লাগবেই।
৭। এরপর আসে আপনার আই. কিউ . টেস্ট। আপনাকে ইন্টারভিউ তে যা জিজ্ঞেস করবে সেটার উত্তর খুব কম সময়ের মধ্যে দিতে হবে এবং প্রফেসরকে বুঝতে হবে যে, আপনাকে রিসার্চ গ্ৰুপে অন্তৰ্ভুক্ত করার মাধ্যমে প্রফেসর তার গবেষণার কাজে কতটুকু লাভবান হতে পারবেন।
প্রবন্ধটি লিখেছেন রফিকুল আলম খান। তিনি দি বাংলাদেশ টুডে’র কূটনৈতিক সংবাদদাতা।