বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতার অ্যাকাউন্ট থেকে গত ৩০ দিনে প্রায় ১২৫ কোটি টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। নাশকতা সৃষ্টির জন্যই এসব টাকা উত্তোলন করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
বিএনপির আট নেতার অ্যাকাউন্ট থেকে সন্দেহজনক এই অর্থ-লেনদেনের তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দারা। উত্তোলনকৃত অর্থের উৎস এবং হস্তান্তর বিষয়ে তদন্ত করতে সেসব নেতাদের গ্রেফতারও করা হতে পারে বলে গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে।
বিএনপির যেসব নেতার অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা উত্তোলন করা হয়েছে তারা হলেন, আবদুল আউয়াল মিন্টু, তাবিথ আউয়াল, মোর্শেদ খান, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, নজরুল ইসলাম খান এবং হাবিব-উন-নবী খান সোহেল।
বিএনপি নেতাদের নগদ অর্থ উত্তোলণ সম্পর্কে গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, আবদুল আউয়াল মিন্টুর এইচএসবিসির অ্যাকাউন্ট থেকে ১১ ফেব্রুয়ারি নগদ তিনটি চেকের মাধ্যমে মোট ১১ কোটি টাকা উত্তোলন করা হয়। তিনটিই ক্যাশ চেক। ৩ কোটি ৭৫ লাখ এবং ৫ কোটি ২৫ লাখ টাকার দুটি চেক ঢাকায় নগদায়ন করা হলেও তৃতীয় চেকটি উত্তোলন করা হয়েছে চট্রগ্রাম থেকে। ১৫ ফেব্রুয়ারি মিন্টুর স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে নগদে দুটি চেকের মাধ্যমে ৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়। এর একটি চেক নগদায়ন করা হয় কুমিল্লা থেকে। ২০ ফেব্রুয়ারি আবদুল আউয়াল মিন্টু ফাস্ট সিকিউরিটি ব্যাংক থেকে তিনটি চেকের মাধ্যমে ৭ কোটি ৯০ লাখ টাকা উত্তোলন করেন। এর মধ্যে ৭ কোটি ১৫ লাখ টাকার একটি চেক নগদায়ন করা হয়ে খুলনা থেকে। ২৫ ফেব্রুয়ারি আবদুল আউয়াল মিন্টুর এইচএসবিসি অ্যাকাউন্ট থেকে আবারও দুটি চেকের মাধ্যমে ৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে।
আবদুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে তাবিথ আউয়ালের স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক থেকে ১২ ফেব্রুয়ারি ১৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকা নগদ উত্তোলন করা হয়। ১৮ ফেব্রুয়ারি তাবিথের ন্যাশনাল ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে ৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা নগদ উত্তোলন করা হয়। ২২ ফেব্রুয়ারি একই ব্যাংক থেকে উত্তোলন করা হয় ৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা। দুটি চেকের মাধ্যমে উত্তোলন করা এই টাকার মধ্যে ৩ কোটি ২৫ লাখ উত্তোলন করা হয় নারায়ণগঞ্জ থেকে।
বিএনপি নেতা মোর্শেদ খানের আরব বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি চারটি চেকের মাধ্যমে ১৮ কোটি টাকা উত্তোলন করা হয় নগদে। এর মধ্যে ৪ টি চেকের মাধ্যমে ২৫ কোটি টাকা উত্তোলন হয়েছে নারায়ণগঞ্জ থেকে।
মোর্শেদ খানের ছেলে ফয়সাল খানের স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে ২৬ ফেব্রুয়ারি তোলা হয় ৯ কোটি টাকা। এই অর্থ চারটি চেকের মাধ্যমে উত্তোলন হয়। বর্তমানে ফয়সাল দেশের বাইরে থাকার পরও কীভাবে এত বিপুল টাকা নগদায়ন করা হলো, সে একটি বড় প্রশ্ন। এছাড়া ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ডাচ বাংলা ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে ৩ মার্চ থেকে ১২ মার্চের মধ্যে ১২ টি চেকের মাধ্যমে ২১ কোটি টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের চেকগুলোর মধ্যে ৬ টি চেক উত্তোলন করা হয়েছে ঢাকার বাইরে থেকে।
মির্জা আব্বাসের ঢাকা ব্যাংকের একটি অ্যাকাউন্ট থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি ১১ কোটি ৫০ লাখ এবং ৪ মার্চ আরও ৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা নগদায়ন করা হয়েছে।
নজরুল ইসলাম খান ও হাবিব-উন-নবী সোহেলের অ্যাকাউন্ট থেকে গত দুই সপ্তাহে ৭ কোটি টাকা উত্তোলন করা হয়েছে।
এর আগে ২০১৪-১৫ সালে বিএনপি নেতাদের দ্বারা দেশে নাশকতা ও অরাজকতা সৃষ্টির আগে বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে অস্বাভাবিক ও নগদ অর্থ লেনদেনের ঠিক একইরকম তথ্য পায় গোয়েন্দারা এবং পরবর্তীতে ঠিকই বিএনপি নেতারা দেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে জ্বালাও-পোড়াও করে।