রাজধানীর বাংলামোটর এলাকায় এক কলেজছাত্রীকে যৌন হয়রানির ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করার চেষ্টা করছে পুলিশ। ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ দেখে তাদের শনাক্ত করা হচ্ছে বলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) এক কর্মকর্তা বলেছেন। তবে শুক্রবার সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কাউকে তাদের গ্রেফতার করা যায়নি। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
মামলা তদন্ত সংশ্লিষ্ট একজন পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, যে ভিডিও ফুটেজটি হাতে এসেছে-তা খুব সংক্ষিপ্ত সময়ের। ফুটেজে রাস্তার ফুটপাত দিয়ে ওই কলেজ ছাত্রীকে হেঁটে যেতে দেখা যায়। এরপর কয়েক যুবক ওই ছাত্রীকে ঘিরে ধরার দৃশ্যটি দেখা যায়। যুবকদের পরনে অনেকটা সাদা রঙের টি-শার্ট পরিহিত। তবে টি-শার্টে কি লেখা আছে-তা বোঝা যাচ্ছে না। যে পুলিশ সদস্য মেয়েটিকে বাসে তুলে দিচ্ছেন-তার মুখে দাঁড়ি আছে। তবে পুলিশ সদস্যের মুখ স্পষ্ট নয়। ওই দিন ট্রাফিক বিভাগ বা রমনা থানা পুলিশের দায়িত্ব পালন করা টিমের প্রতিটি সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদ করে উদ্ধারকারী পুলিশ সদস্যকে শনাক্ত করা যায়নি। ওই পুলিশ সদস্য অন্য ইউনিটের হতে পারে।
পুলিশের রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার মারুফ হোসেন সরদার বলেন, ওই শিক্ষার্থীর বর্ণনা ও ঘটনাস্থলের আশপাশের তথ্য অনুযায়ী আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যও যাচাই বাছাই করা হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা মহানগর পুলিশের সাইবার সিকিউরিটি এ্যান্ড ক্রাইম (সোশাল মিডিয়া মনিটরিং) বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, ওই শিক্ষার্থী ফেসবুক পোস্টে যেসব তথ্য দিয়েছে তার কিছুটা সত্যতা পাওয়া গেছে। তার জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে। তার দেওয়া ঘটনার বর্ণনা, সময় ও আশপাশের বিভিন্ন তথ্য অনুযায়ী শান্তিনগর, শাহবাগ ও বাংলামোটরসহ এর আশপাশ এলাকার সিসি ফুটেজ সংগ্রহ করে তদন্ত চলছে।
এদিকে যৌন হয়রানির শিকার শিক্ষার্থীর বাবা গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রমনা থানায় একটি মামলা করেছেন। রমনা থানার ওসি কাজী মাইনুল ইসলাম শুক্রবার বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে করা ওই মামলায় অজ্ঞাত পরিচয় ১৫/২০ জনকে আসামি করা হয়েছে। ফেসবুক স্ট্যাটাসে যেভাবে বর্ণনা করা হয়েছে, মামলায় প্রায় সেভাবেই লেখা হয়েছে। ওই শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে পুলিশ এরই মধ্যে তার বক্তব্যও রেকর্ড করেছে। মামলাটি রমনা থানা পুলিশ তদন্ত করার পাশাপাশি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের দক্ষিণ বিভাগ ছায়াতদন্ত করছে।
এদিকে, এ ঘটনায় ওই শিক্ষার্থীর পরিবারের লোকজনও বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছেন। বিশেষ করে ফেসবুকে বিভিন্ন ধরনের উল্টাপাল্টা তথ্য তাদেরকে বিভিন্ন প্রশ্নের সম্মুখীন করেছে। বিষয়টির পক্ষে বিপক্ষে যার যা মনে হচ্ছে লিখছে। অথচ ফেসবুকে যারা এ বিষয়ে মন্তব্য করছেন তাদের বেশিরভাগই ঘটনাস্থলে ছিলেন না। অনেকে এটা নিয়ে রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করছে। এ কারণে ওই শিক্ষার্থীও এ ধরনের বক্তব্য নিয়ে বিব্রত হয়েছেন। তাই বিষয়টি সামাজিক সমস্যা মনে করে সবাইকে সতর্কতার সঙ্গে মন্তব্য করতে অনুরোধ জানিয়েছেন ওই শিক্ষার্থীর পরিবার।
ওই শিক্ষার্থী ফেসবুকে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে লিখলেও গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে রাজি নন বলে তার ঘনিষ্ঠ একজন জানান। তার এই পোস্ট ব্যাপক শেয়ার হতে শুরু করে, বিভিন্নজন মন্তব্যও করে। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সমালোচনাও আসে নানাজনের মন্তব্যে। পরে নিজের পোস্ট সরিয়ে দেন তিনি। পরে আরেক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘পোস্টটা অনলি মি করেছি, কারণ পোস্টটা রাজনৈতিক উস্কানিমূলকভাবে শেয়ার করা হচ্ছিল। আমি কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে পোস্টটা দিইনি। আমার কলেজকে জড়ানো হচ্ছিল এই ব্যাপারে। ব্যাপারটার সাথে আমার কলেজের কোনো সম্পর্ক নাই।’