এ মাসেই বাজারে আসছে ইলিশ মাছের তৈরি নুডলস। সাশ্রয়ী মূল্যে এই খাদ্যপণ্য মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বাজারজাত করা হবে। আর এটি উৎপাদনের দায়িত্বে থাকছে দুটি বেসরকারি কোম্পানি।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী নারায়ণচন্দ্র চন্দ গতকাল সন্ধ্যায় আমাদের সময়কে বলেন, বিদেশি প্রযুক্তিতে প্রস্তুত এই নুডলসের পুষ্টিমান হবে অনেক বেশি। এটি শিশুখাদ্য হিসেবেও বিবেচিত হতে পারে বলে পুষ্টিবিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) ইলিশের নুডলস বাজারজাতকরণে ছাড়পত্র দিয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, ইলিশ মাছের কথিত ত্রিশ কাঁটার ভয়ে অনেক শিশুকিশোর সুস্বাদু এই মাছ খেতে ভয় পায়। এই নুডলস বাজারে এলে শর্করা ও প্রোটিনের একত্র জোগান পাওয়া যাবে।
তিনি আরও জানান, এ দেশের নদীর পানি ইলিশের গুণাবলি ধরে রাখতে অনন্য। তাই বাংলাদেশের ইলিশের খ্যাতি বিশ্বজুড়ে। এই ইলিশের মালিকানা (জিআই বা ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য) নিয়ে প্রতিবেশী কয়েকটি দেশ অপতৎপরতা চালিয়েছিল। কিন্তু আন্তর্জাতিক মেধাস্বত্ব বিষয়ক সংস্থা ওয়াইপিও নিয়ম মেনে জামদানি শাড়ির পর ইলিশের আন্তর্জাতিক মেধাস্বত্ব বা জিআই পণ্য হিসেবে স্বত্ব বাংলাদেশকেই দিয়েছে। এর আগে ইলিশের নিবন্ধনের ব্যাপারে শিল্প মন্ত্রণালয়ের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে আমরা আবেদন করি। এখন জাতীয় এই মাছের বহুমাত্রিক ব্যবহারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ণচন্দ্র চন্দ এ প্রসঙ্গে আমাদের সময়কে বলেন, ইলিশ বাংলাদেশের সম্পদ। আমাদের জাতীয় মাছ। এ বিষয়টি মাথায় রেখে আমরা ভৌগোলিক নির্দেশক বা জিআই পণ্য হিসেবে পেতে আবেদন করি। এই ইলিশ আমাদের ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশে আছে। জিআইপ্রাপ্তি আমাদের একার অর্জন নয়, গোটা জাতির অর্জন।
মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০০২-০৩ অর্থবছরে দেশে ২ লাখ টনের কম ইলিশ উৎপাদিত হতো। আর ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশে উৎপাদিত হয়েছে সাড়ে ৪ লাখ টন।
অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে আরও দেখা গেছে, ২০০০-২০০১ অর্থবছরে ২ লাখ ২৯ হাজার ৭১৪ টন ইলিশ উৎপাদিত হয়েছে। কিন্তু পরের অর্থবছরে উৎপাদন ৯ হাজার ১২১ টন কমে গেছে। ২০০২-০৩ অর্থবছরে ইলিশের উৎপাদন আরও কমে ১ লাখ ৩৩ হাজার ৩২ টনে নেমে আসে। এরপর জাটকা রক্ষা কর্মসূচিতে জোর দেয় সরকার। এতে উৎপাদন কিছুটা বাড়তে থাকে। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ২ লাখ ৯৮ হাজার ৯২১ টন ইলিশ উৎপাদিত হয়। এরপর মা-ইলিশ রক্ষার কর্মসূচি আরও জোরদার করলে ইলিশের উৎপাদন গুণিতক হারে বাড়তে থাকে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুসারে বিশ্বে প্রতিবছর ৫ লাখ টন ইলিশ আহরিত হয়। এর ৬০ শতাংশই আহরিত হয় বাংলাদেশে। ফলে দেশে মোট মৎস্য উৎপাদনে এককভাবে ইলিশের অবদানই প্রায় ১১ শতাংশ। সার্বিক প্রবৃদ্ধি বিবেচনায় জিডিপিতে এর হিস্যা ১ শতাংশের সমপরিমাণ। এখন এই খাদ্যপণ্যের বহুমুখী ব্যবহারের কারণে উদ্যোক্তারাই ইলিশ রক্ষায় আরও এগিয়ে আসবেন বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।