
এম এ কবির: কে হবেন গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী, এই নিয়ে চলছে নানা জল্পনা কল্পনা। একাধিক প্রার্থী থাকায় সমর্থকদের মাঝে টান টান উত্তেজনা। সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজ নিজ পছন্দের প্রার্থীর পক্ষ নিয়ে আনন্দ, মিষ্টিমুখ, উল্লাস, তর্ক-বিতর্ক, গুজব ছড়ানো হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
আগামী ৩১ মার্চ গাজীপুর ও খুলনা সিটি কর্পোরেশনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। নির্বাচন কমিশন সূত্রে এ কথা জানা গেছে।
সরকারদলীয় আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী মাঠে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন দীর্ঘদিন থেকেই। তবে নৌকার বৈঠা কার হাতে তুলে দেবেন দলীয় নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তা কারো জানা নেই। কিন্তু সম্প্রতি সবুজ সংকেত প্রচারে গাজীপুরে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে থমকে দাঁড়িয়েছে নেতাকর্মীরা।
আর প্রবীণ ও তরুণদের মধ্যে বইছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। এটি গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের দ্বিতীয় নির্বাচন হলেও দলীয় প্রতীকে এবারই প্রথম নির্বাচন। গাজীপুর মহানগরের সাধারণ সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদে প্রার্থী হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর সবুজ সংকেত পেয়েছেন বলে প্রচার মাধ্যমে প্রচার করা হয়। এ প্রেক্ষিতে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী রাজনীতিতে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। প্রবীণ রাজনীতিবিদরা অনেকেই ভিন্ন ভিন্ন মত পোষণ করছেন। তবে নবীনদের মধ্যে বইছে আনন্দের বন্যা।
অপরদিকে গত বৃহস্পতিবার মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানের সমর্থকসহ নেতাকর্মীরা চূড়ান্ত সংকেত তাদের নেতা পেয়েছেন দাবি করে এলাকায় মিষ্টি মুখ করাচ্ছেন। আবার সেই দৃশ্য ফেইসবুক লাইভে নিয়ে আসছেন।
এ নিয়ে আবারো গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের সরকারদলীয় মেয়র প্রার্থী নিয়ে ধূম্রজাল দেখা দিয়েছে। নেতাকর্মী ও ভোটারদের জিজ্ঞাসা- কে পাচ্ছেন নৌকার বৈঠা! আজমত উল্লাহ খান নাকি জাহাঙ্গীর আলম।
গত নির্বাচনেও দলীয় সমর্থন পেয়েছিলেন আজমত উল্লাহ খান আর বিদ্রোহী মেয়র প্রার্থী ছিলেন জাহাঙ্গীর আলম। পরে নির্বাচনের আগে জাহাঙ্গীর আলম বহু নাটকের পর আজমত উল্লা খানকে সমর্থন দিলেও জয়লাভ করতে পারেননি। জয়লাভ করেছিলেন বিএনপির প্রার্থী অধ্যাপক এম এ মান্নান।
![]() |
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন ভবন |
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক প্রার্থী থাকলেও জাসদের একমাত্র প্রার্থী রয়েছে নির্বাচনী মাঠে। তবে সবুজ সংকেতের প্রচারণার পর থেকে সরকার দলীয় আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খান, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম, মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক তরুণ নেতা কামরুল আহসান সরকার রাসেল মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন।
এদিকে নতুন করে মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সাইফুল ইসলামও তার প্রচার-প্রচারণায় পোস্টার ব্যানার ও ফেস্টুনে পিছিয়ে নেই। মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রতিদিন সকাল থেকে রাত অবধি সভা, ওয়াজ মাহফিল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে শরিক হয়ে নিজের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এতে করে দলীয় নেতাকর্মীরা দ্বিধাদ্বন্দ্বে এবং বিব্রত অবস্থায় পড়ছেন।
এ ব্যাপারে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তাদের সমর্থকদের সবুজ সংকেত সম্পর্কে বিভিন্ন মন্তব্য রয়েছে। তবে এ নিয়ে জেলার বা মহানগরের শীর্ষস্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা বা এমপিদের তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তাদের নজর গণভবনের দিকে।
![]() |
জাহাঙ্গীর আলম |
জানা গেছে, আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী মহল সিটি নির্বাচনে বিজয় নিশ্চিত করতে চায়। তাই প্রার্থী দিয়ে বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে থাকতে চায় আওয়ামী লীগ। এ কারণে প্রার্থী বাছাই বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় প্রার্থী চূড়ান্ত হওয়ার পর দলের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডে তা আনুষ্ঠানিকতার জন্য পাঠানো হবে।
জাহাঙ্গীর আলম জানান, দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যথাসময়ে গাজীপুরের মেয়র প্রার্থীর নাম ঘোষণা করবেন। আর এজন্য মনোনয়ন বোর্ড রয়েছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মনোনয়ন বোর্ডই প্রার্থী চূড়ান্ত করবেন। দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি এবং বিভিন্ন ওয়ার্ডে ও মহল্লায় সামাজিক কর্মকাণ্ডে শরিক হয়ে আগামী সিটি নির্বাচনে নৌকার পক্ষে কাজ করছি। জাহাঙ্গীর আলম জানান, মনোনয়নের ব্যাপারে তিনি আশাবাদী।
দলীয় নেতাকর্মীদের জিজ্ঞাসা তাহলে কে পাবেন নৌকা প্রতীক। এবার যদি দলীয় কোন্দল বা একাধিক মেয়র প্রার্থী থাকেন তাহলে আমাদের সিটি মেয়র পদটি পেতে বেগ পোহাতে হবে। তাই দলীয় প্রধান যেন দক্ষ ও যোগ্য নেতার হাতেই নৌকার বৈঠা তুলে দেন।
![]() |
আজমত উল্লাহ খান |
২০১৩ সালের জুলাইতে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রথম নির্বাচনে মেয়র পদে দলীয় সমর্থন পেয়েছিলেন টঙ্গীর সাবেক মেয়র বর্তমান মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. আজমত উল্লাহ খান। দলীয় সমর্থন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর আলম।
পরে দলীয় সিদ্ধান্তে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়ান। ওই নির্বাচনে আজমত উল্লাহ খান দলীয় কোন্দলের কারণে বিএনপির প্রার্থী অধ্যাপক এম এ মান্নানের কাছে ১ লাখেরও বেশি ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন।