গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী পরিবর্তন হচ্ছে। প্রার্থিতার বিষয়ে ‘সমঝোতা’ এসেছে দলটিতে। এবার সেখানে প্রার্থী হচ্ছেন ছাত্রলীগের সাবেক নেতা মো. জাহাঙ্গীর আলম। গতবারের প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা আজমত উল্লাহ খানকে খুশি রাখতে বিকল্প ব্যবস্থা নিয়েছে দল। গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ‘গঠন’ করে তাকে চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হবে।
বিএনপিতেও মনোনয়ন পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা বেশি। অধ্যাপক এমএ মান্নানের পরিবর্তে হাসান উদ্দিন সরকারকে মনোনয়ন দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে দলের ভেতর আলোচনা হচ্ছে। নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ না রাখা এবং শারীরিক অসুস্থতাসহ কয়েকটি কারণে অধ্যাপক মান্নানকে প্রার্থী করার ব্যাপারে আগ্রহী নয় দল।
দুই দলের প্রার্থিতার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত প্রায় চূড়ান্ত হলেও নির্বাচন ঠিক কবে হবে সে সিদ্ধান্ত এখনো জানায়নি নির্বাচন কমিশন। ২০১৩ সালের ৬ জুলাই গাজীপুর সিটির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সিটি করপোরেশন নির্বাচনের বিধান অনুযায়ী, সিটি করপোরেশনের প্রথম সভা থেকে করপোরেশনের মেয়াদ গণনা শুরু হয়। পাঁচ বছর মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগের ছয় মাসের মধ্যে যে কোনো দিন ভোটগ্রহণ করা যায়। সে হিসাবে ২০১৮ সালে ৮ মার্চ থেকে ৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে গাজীপুর সিটিতে নির্বাচন করতে হবে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এখনো তফসিল হয়নি, তাই আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে আওয়ামী লীগ সব সময় নির্বাচনমুখী দল। নির্বাচন হলে দল থেকে যোগ্য প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হবে।
![]() |
অধ্যাপক এমএ মান্নান |
অবশ্য তিনি এও বলেন, বিএনপির জনসমর্থন যে পর্যায়ে পৌঁছেছে, তাতে যে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হলে তাদের প্রার্থী বিপুল ভোটে বিজয়ী হবেন। এ জন্য আগাম প্রস্তুতির প্রয়োজন নেই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের শীর্ষস্থানীয় এক নেতা বলেন, হাসান উদ্দিন সরকারকে প্রার্থী করার ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত আছে। এ ব্যাপারে বিভিন্ন সময় দলে আলোচনা হয়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসনের একই ধরনের সম্মতি রয়েছে।
ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীর দৌড়ে আছেন গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খান ও সাধারণ সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম। দুজনই নৌকা প্রতীক পেতে মুখিয়ে। তবে বিগত নির্বাচনে মনোনয়নবঞ্চিত জাহাঙ্গীরের ওপর আস্থা রাখতে চাইছে দল। সে জন্য তাকে ইতোমধ্যে মহানগরের সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, দলে কোন্দল সৃষ্টি হতে পারে সে শঙ্কা থেকেই অনেক আগেই প্রার্থিতার ব্যাপারে দুই প্রার্থীর মধ্যে সমঝোতায় এসেছে সরকারি দল আওয়ামী লীগ। দুজনকেই খুশি রাখা হচ্ছে। সম্প্রতি দলের শীর্ষ নেতৃত্ব এ বিষয়ে সিদ্ধান্তে আসে। সিদ্ধান্ত মনোনয়নপ্রত্যাশী দুই নেতাকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
![]() |
জাহাঙ্গীর আলম |
অপরদিকে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে আরও রয়েছেন জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হোসেন। তাকে এবার মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক করার সিদ্ধান্ত রয়েছে।
বিএনপি মনে করছে, হাসান উদ্দিন সরকার গাজীপুরের সম্ভ্রান্ত সরকার পরিবারের সন্তান। এলাকায় তাদের প্রভাব অনেক বছরের। এ ছাড়া হাসান উদ্দিন বিএনপি থেকে আগে সংসদ সদস্য নির্বাচন করেছিলেন। তার নেতাকর্মী ও অনুসারীর সংখ্যা অনেক। তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা।
জানা গেছে, অধ্যাপক মান্নানও নির্বাচন করতে আগ্রহী। গতবার তিনি বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছিলেন। এবারও তাকে প্রার্থী করলে বিজয়ী হবেন বলে কেন্দ্রীয় নেতাদের আশ্বস্ত করছেন।
ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, নির্বাচন অনুষ্ঠানের দিনক্ষণ নির্ধারণ করবেন কমিশন। এখনো তারিখ চূড়ান্ত করা হয়নি।
ইসির নির্বাচন শাখা সূত্র জানায়, আগামী মে মাসের মধ্যভাগের শুরু হবে রমজান মাস। রমজানের আগেই গাজীপুর সিটি নির্বাচন করতে চায় ইসি। বাকি সিটির নির্বাচন জুনের শেষে কিংবা জুলাইয়রে প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিত হতে পারে। চলতি সপ্তাহে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেতে নির্বাচনযোগ্য সিটি করপোরেশনে ভোটগ্রহণের জন্য অনুরোধপত্র পাঠানো হতে পারে।
জানা গেছে, গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকাভুক্ত ছয় মৌজা ঢাকা জেলার সাভার উপজেলার শিমুলিয়া ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত এমন দাবি করে ২০১৫ সালে হাইকোর্টে রিট করেন শিমুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবিএম আজহারুল ইসলাম। আদালত বিবাদীকে ৬০ দিনের মধ্যে তর্কিত বিষয়টি নিষ্পত্তির আদেশ দিয়ে রিট নিষ্পত্তি করেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সেটি নিষ্পত্তি করেছে বলে জানা গেছে।
২০১৩ সালে সিটি নির্বাচন হয়েছিল নির্দলীয়। সে বছর গাজীপুর সিটি নির্বাচনে বিএনপি জোট সমর্থিত অধ্যাপক আবদুল মান্নান টেলিভিশন প্রতীকে লড়াই করে তিন লাখ ৬৫ হাজার ভোট পেয়ে জয়ী নগরপিতা নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ১৪ দল সমর্থিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লা খান দোয়াত-কলম প্রতীক পেয়েছিলের দুই লাখ ৫৮ হাজার ভোট। সেই ভোটের শুরুতে ১৪ দলের সমর্থন চেয়ে মনোনয়ন সংগ্রহ করেছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলম। ভোটগ্রহণের আগে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেও তিনি ৩১১৯ ভোট পেয়েছিলেন। জাহাঙ্গীর আলমের প্রার্থিতায় কিছুটা বেকায়দায় পড়ে আওয়ামী লীগ। তাই এবার আগে থেকেই প্রার্থী নির্বাচন করে ভালোভাবে ভোটযুদ্ধে নামতে চাইছে ক্ষমতাসীন দল। অপরদিকে বিএনপি সমর্থিত বর্তমান মেয়রকে মেয়াদের অর্ধিকাংশ সময় কাটাতে হয়েছে কারাগারে। শারীরিকভাবেও তিনি কিছুটা অসুস্থ। সে ক্ষেত্রে বিকল্প প্রার্থীর কথা ভাবছে বিএনপি।
২০১৩ সালের ১৫ জুন রাজশাহী, খুলনা, সিলেট ও বরিশাল এবং ৬ জুলাই গাজীপুর সিটির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সিটি করপোরেশন নির্বাচনের বিধান অনুযায়ী, সিটি করপোরেশনের প্রথম সভা থেকে করপোরেশনের মেয়াদ গণনা শুরু হয়। পাঁচ বছর মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগের ছয় মাসের মধ্যে যে কোনো দিন ভোটগ্রহণ করা যায়। এই হিসাব অনুযায়ী, ২০১৮ সালের ১৩ মার্চ থেকে ৮ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সিলেট, ৩০ মার্চ থেকে ২৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে খুলনা, ৯ এপ্রিল থেকে ৫ অক্টোবরের মধ্যে রাজশাহী, ২৭ এপ্রিল থেকে ২৩ অক্টোবরের মধ্যে বরিশাল সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হওয়ার কথা।
- আমাদের সময়