
২৬ শে মার্চ, মহান স্বাধীনতা দিবস। দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে এরই মধ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় সিক্ত হতে পুরোপুরি প্রস্তুত জাতীয় স্মৃতিসৌধ। জাতির গৌরব আর অহংকারের এ-দিনটিতে সৌধ প্রাঙ্গণে নামবে লাখো মানুষের ঢল । তাদের হৃদয় নিংড়ানো শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় ফুলে ফুলে ভরে উঠবে স্মৃতিসৌধের শহীদ বেদি।
দিবসটি উপলক্ষে গণপূর্ত বিভাগের কর্মীরা মাস ব্যাপী অক্লান্ত পরিশ্রম করে সৌধ প্রাঙ্গণকে দিয়েছে এক নতুন রুপ । নানা রঙ্গের বাহারী ফুলের চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে স্মৃতিসৌধের সবুজ চত্বর। চত্বরের সিড়ি ও নানা স্থাপনায় পড়েছে রং-তুলির আচড়। নিরপত্তার জন্য ওয়াচ টাওয়ার নির্মান, উচ্চ মাত্রার সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। পুলিশ কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে সার্বক্ষনিক নজরদারীসহ সৌধ এলাকায় থাকবে তিন স্তুরের নিরাপত্তা বলয়।
স্মৃতিসৌধে আগত দর্শনার্থীদের যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে সাভারে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের আমিনবাজার থেকে জাতীয় স্মৃতিসৌধ পর্যন্ত এবং এর আশপাশের এলাকায় সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারিসহ মোতায়েন থাকবে শহস্রাধিক পুলিশ সদস্য।
মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে স্মৃতিসৌধের প্রস্তুতি এবং বিদেশী ভিআইপিদের আগমন উপলক্ষ্যে ১৮ মার্চ থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত সকল প্রকার দর্শনার্থীদের স্মৃতিসৌধে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। ২৬ মার্চ মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং আমন্ত্রীত অতিথিবৃন্দ স্মৃতিসৌধ ত্যাগ করার পর সর্বসাধারনের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে।
দিবসটির প্রথম প্রহরেই রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী শহীদ বেধীতে ফুল দিয়ে বীর সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করবেন। তাই সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে যাবতীয় গার্ড অব অনার প্রদানের জন্য একটি সুসজ্জিত দল তাদের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।
জাতীয় স্মৃতিসৌধের গণপূর্ত বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, মহান স্বাধিনতা দিবসে রাষ্ট্রতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী পরিষদের সদস্যবৃন্দ ও বিদেশী কূটনিতিকসহ লাখো মানুষ জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পন করবেন। এজন্য সাভার গণপূর্ত বিভাগের পক্ষ থেকে জাতীয় স্মৃতিসৌধকে দীর্ঘ্য প্রায় এক মাস ধরে ধুয়ে-মুছে, রংতুলির আচড়ে রং-বেরংয়ের ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। স্মৃতিসৌধে আগত দর্শনার্থীসহ সকলের নিরাপত্তার জন্য ২২টি সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে এখানকার পুলিশ ও আনসার ক্যাম্পকে সর্বোচ্চ সকর্কতামূলক অবস্থানে রাখা হয়েছে।
ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) শাহ মিজান শাফিউর রহমান বলেন, প্রতিবারের ন্যায় এবারও মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষ্যে জাতীয় স্মৃতিসৌধ ও এর আশপাশের এলাকা জুড়ে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। সৌধ এলাকায় নিরাপত্তা চৌকি, পর্যবেক্ষণ টাওয়ারসহ বসানোর পাশাপাশি নিরাপত্তার জন্য আগের চেয়ে ফোর্স আরও বাড়ানো হয়েছে। সাদা পোশাকে পুলিশের নজরদারী বাড়নোসহ নিরাপত্তার স্বার্থে সাভারের আমিন বাজার থেকে জাতীয় স্মৃতিসৌধ পর্যন্ত মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ন স্থানে ১৪৭ টি সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। সাভার মডেল থানায় স্থাপিত কন্ট্রোল রুম থেকে ৭ জন প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য এগুলো নিয়ন্ত্রন করবে।
তিনি আরও বলেন, এবার দর্শনার্থীদের শৃঙ্খলা রক্ষায় এবং শিশু-বৃদ্ধ ও নারীদের জন্য সুপেয় পানিয় এবং মোবাইল টয়লেটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া প্রতিবারের মতো এবারও ঢাকা জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে আলোকচিত্র প্রদর্শনীর মাধ্যমে মহান ভাষা আন্দোলন ও স্বাধীনতা যুদ্ধসহ ১৯৪৭ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন প্রেক্ষাপট জাতির সামনে তুলে ধরা হবে।