
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলের মনোনয়ন না পেয়ে যারপরনাই হতাশ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লাহ খান। রবিবার রাতে দলের সিদ্ধান্ত জানার পর থেকে নিজেকে অনেকটাই গুটিয়ে রেখেছেন তিনি। তবে হতাশা কাটিয়ে দলের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন পাঁচ বছর আগে আওয়ামী লীগের সমর্থনে ভোটে লড়ে বড় ব্যবধানে হারা এই নেতা।
আজমত উল্লাহ খান গাজীপুরের রাজনীতিতে পরিচিতমুখ, মিষ্টভাষী ও বিনয়ী হিসেবে পরিচিত। টঙ্গী পৌরসভায় বারবার জিতেছেন তিনি। দেড় যুগ এই পৌরসভা চালিয়েছেন তিনি। গাজীপুর পৌরসভাও বেশিরভাগ ছিল আওয়ামী লীগের দখলে। তারপরও ২০১৩ সালের নির্বাচনে দেড় লাখেরও বেশি ভোটে হেরে যান আজমত।
সে রাজনীতিতে সময় নানা সমীকরণের পাশাপাশি নিজ দলের একাংশের বিরোধিতার কারণেও তখন আজমতকে হারতে হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। ওই নির্বাচনে দলের সমর্থন না পেয়ে এবার মনোনয়ন পাওয়া জাহাঙ্গীর আলম বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছিলেন। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময় সীমা পার হয় গেলেও তিনি প্রার্থী হিসেবে থেকে যান।
পরে হঠাৎ উধাও হয়ে যাওয়া জাহাঙ্গীরের খোঁজ মেলে একটি বেসরকারি হাসপাতালে। পরে সেখান থেকে ছাড়া পেয়ে তিনি গাজীপুর ফিরে কাঁদতে কাঁদতে ভোট থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। কিন্তু এই বিভেদ আর কাটিয়ে উঠা যায়নি।
এবার ভোট হবে দলীয় প্রতীকে। আর নৌকা প্রতীক পাওয়ার লড়াইয়ে ছিলেন আজমত ও জাহাঙ্গীর দুই জনই। এবার আর আজমতকে বেছে নেয়নি দল।
আওয়ামী লীগের বিবেচনায় দুই প্রার্থীর মধ্যে বেশি ‘যোগ্য’ ছিলেন আজমতউল্লাহ খান। কিন্তু দলের জরিপ বলছে, বেশি জনপ্রিয় জাহাঙ্গীর আলম। আর জাতীয় নির্বাচনের আগে এবার আর ঝুঁকি না নিয়ে ‘অধিক জনপ্রিয়’ প্রার্থীর হাতেই নৌকা তুলে দিল ক্ষমতাসীন দল।
রবিবার গণভবনে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠকে জাহাঙ্গীর আলমকে মনোনয়ন দেওয়ার পর থেকে হতাশা বিরাজ করছে আজমত সমর্থকদের মাঝে।
গণভবন থেকে ফিরে আসার পর গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেছেন জাহাঙ্গীর আলম। কিন্তু নিশ্চুপ ছিলেন আজমত উল্লাহ খান। সোমবার দিনভর গনমাধ্যমকর্মীরা তার টঙ্গীর বাসভবনের সামনে অপেক্ষা করেও তার দেখা পাননি। পরে সন্ধ্যায় সঙ্গে কথা হয় প্রবীণ এই নেতার।
মনোনয়ন না পাওয়ায় হতাশ কি না-জানতে চাইলে আজমত বলেন, ‘দলের এমন কোন ক্রান্তিকাল ছিলনা, দুঃসময় ছিল না যখন আমি দলের হাল ধরিনি। সবসময় দলের জন্য কাজ করেছি। দল জাহাঙ্গীর আলমকে নমিনেশন দিয়েছে, আমি দলীয় কর্মী হিসেবে তা মেনে নিয়েছি। এখন পাবলিকের মনে হতাশা আছে, পাবলিকেরও একটা চাওয়া পাওয়া আছে। দলের নেতাকর্মীদের মধ্যেও হতাশা আছে। আমি চেষ্টা করব হতাশা কাটিয়ে কীভাবে দলকে ঐক্যবদ্ধ করা যায়।
গত নির্বাচনে বড় ব্যবধানে হারের বিষয়ে আজমত বলেন, ‘অনেকেই দলের পক্ষে অবস্থান না নিয়ে বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। এটা গাজীপুরের সর্বস্তরের মানুষ জানে এবং কারা বিরোধিতা করেছে। সে কারণে হতাশা মানুষের মধ্যে আছে, ক্ষোভের সৃষ্টি তখন থেকেই হয়েছে।’
‘আমি দলীয় নেতাকর্মীদের চেষ্টা করব তাদের ক্ষোভ নিরসনের জন্য। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা যাতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ থাকে আমি সেই চেষ্টা করে যাব। ভবিষ্যতে যাতে আবার শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এসে দলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে তার জন্য আমার যা করণীয় আমি তা করব।’
-জাহাঙ্গীরের পক্ষে প্রচারে নামবেন?
‘হ্যাঁ, আমি প্রচারণায় নামব। অবশ্যই নামব। আমি তো নেমেই আছি।’
-মনোনয়ন পাওয়ার পর জাহাঙ্গীরের সঙ্গে কথা হয়েছে?
-‘এখনও সে আমাকে ফোন দেয়নি বা কথা হয়নি। গণভবনে দেখা হয়েছিল। দেখা হবে, সে যেহেতু দলীয় প্রার্থী দেখা তো হবেই।’
-‘মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীরা মনে করছেন আপনি যোগ্য হওয়া সত্তেও মনোনয়ন পাননি। এর প্রভাব দলের মধ্যে ভাঙন সৃষ্টির আশঙ্কা করছেন কেউ কেউ। মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আপনার ভূমিকা কী হবে?’
‘দলের সাধারণ মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা খুবই হতাশ। আমরা চেষ্টা করব হতাশা কীভাবে কাটিয়ে উঠা যায়। দলকে ঐক্যবদ্ধ করার লক্ষে আমি সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাব।’
-‘সমর্থকদের কী বলেছেন?’
-‘কর্মী সমর্থকদের প্রতি আমার অনুরোধ থাকবে যেন তারা ধৈর্য ধারণ করবে। অনেক সময় মানুষ যা চায় তার বিপরীত হয়। এটা সৃষ্টির বিধান। এটা মেনে নিয়ে দলের স্বার্থে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। ঐক্যবদ্ধ থেকে আমাদেরকে কাজ করে যেতে হবে।’
আজমত বিশ্বাস করেন, পাঁচ বছর আগে তিনি হেরে গেলেও এবার নৌকার জয় হবে গাজীপুরে।
এবারের ভোটে নৌকা প্রতীক পাওয়া জাহাঙ্গীর আলমকে লড়তে হবে বিএনপির হাসানউদ্দিন সরকারের সঙ্গে। গতবার নির্বাচিত বর্তমান মেয়র এম এ মান্নানকে বিবেচনায় নেয়নি আওয়ামী লীগের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী।
প্রতিবেদক: ইফতেখার রায়হান, ঢাকাটাইমস