
আগামী ৪ মে দেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট- ১’ উৎক্ষেপণ হতে যাচ্ছে। এরই মধ্যে এটির নির্মাণ, অবকাঠামো ও গ্রাউন্ড স্টেশনের কাজ শেষ হয়েছে। আর এই উৎক্ষেপণের মাধ্যমেই টেলিযোগাযোগ ও সম্প্রচারে নতুন যুগের সূচনা হবে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উৎক্ষেপণের ৩০ দিনের মধ্যে এটি অরবিট বা কক্ষপথে পৌঁছাবে। দুটি ধাপে এই উৎক্ষেপণ প্রক্রিয়া শেষ হবে। প্রথম ধাপটি হল লঞ্চ অ্যান্ড আরলি অরবিট ফেজ (এলইওপি) এবং দ্বিতীয় ধাপ হচ্ছে স্যাটেলাইট ইন অরবিট।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশের জন্য এই দিনটি হবে একটি ইতিহাস। যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি মহাকাশ অনুসন্ধান ও প্রযুক্তি কোম্পানি ‘স্পেসএক্স’ এর ফ্যালকন-৯ রকেট ফ্লোরিডার কেইপ কেনাভেরালের লঞ্চ প্যাড থেকে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটকে নিয়ে উড়াল দেবে। উৎক্ষেপণের পর সাধারণত এক মাস সময় লাগে। এই সময়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে জানান তিনি।
কীভাবে এই উৎক্ষেপণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়- সে সম্পর্কে জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, ফ্যালকন-৯ রকেটে চারটি অংশ রয়েছে। ওপরের অংশে থাকবে স্যাটেলাইট, তারপর অ্যাডাপটর। এরপর স্টেজ-২ এবং সবচেয়ে নিচে থাকে স্টেজ-১। একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর রকেটের স্টেজ-১ খুলে নিচের দিকে নামতে থাকে, এরপর চালু হয় স্টেজ-২। পুনরায় ব্যবহারযোগ্য স্টেজ-১ পৃথিবীতে এলেও স্টেজ-২ একটি নির্দিষ্ট দূরত্ব পর্যন্ত স্যাটেলাইটকে নিয়ে গিয়ে মহাকাশেই থেকে যায়।
তিনি বলেন, উৎক্ষেপণ স্থান থেকে ৩৬ হাজার কিলোমিটার দূরে যাবে এই স্যাটেলাইট। ৩৫ হাজার ৭০০ কিলোমিটার যাওয়ার পর রকেটের স্টেজ-২ খুলে যাবে। এরপর স্যাটেলাইট উম্মুক্ত হওয়ার পরপর এর নিয়ন্ত্রণ যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি এবং কোরিয়ার তিনটি গ্রাউন্ড স্টেশনে চলে যাবে। এরপর স্যাটেলাইটটি সম্পূর্ণ চালু হওয়ার পর এর নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশের গ্রাউন্ড স্টেশনে হস্তান্তর করা হবে। স্পেসএক্স’র ওয়েবসাইটে পুরো উৎক্ষেপণ দেখানো হবে বলে জানান তিনি।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এই স্যাটেলাইট প্রকল্পের বাস্তবায়ন হচ্ছে। এই স্যাটেলাইটে ৪০টি ট্রান্সপন্ডার থাকবে, যার ২০টি বাংলাদেশের ব্যবহারের জন্য রাখা হবে এবং বাকিগুলো ভাড়া দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব হবে। সরকার আশা করছে, এ উপগ্রহ উৎক্ষেপণের পর বিদেশি স্যাটেলাইটের ভাড়া বাবদ বছরে ১৪ মিলিয়ন ডলার সাশ্রয় হবে বাংলাদেশের।