
ডেস্কঃ গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গীর আনারকলি রোডের বাড়িটাতে এখনও মানুষের ঢল। নানা রকমের মানুষ যাচ্ছে, আসছে। অনেকের মুখ থমথমে। কারো কারো মধ্যে চাপা ক্ষোভ। বিশাল ড্রইং রুমটায় টেবিলের ওপাশে বসা তিনি। গায়ে কড়া সবুজ শার্ট। পরনে লুঙ্গি। মাথা ভর্তি সাদা চুল। হাতে সিগারেট। মুখ ভর্তি হাসি। গাজীপুরের আঞ্চলিক টানে কথা বলছেন।
হ্যাঁ, আজমত উল্লাহ খানের কথা বলছি। তিনি গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পক্ষে অন্যতম মনোনয়ন প্রত্যাশী দাবিদার ছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন পাননি। অনেক জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমকে। এতে আজমত উল্লাহ নাখোশ না হলেও কিছুটা তো অপ্রাপ্তিবোধ কাজ করছেই। তবে তার সমর্থকদের মধ্যে যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে সেটি বুঝতে সময় লাগে নি।
রুম ভর্তি বহু লোকজন। বেশীর ভাগই পাঞ্জাবী টুপি পরা বয়োবৃদ্ধ। তাদের মধ্যে একজন মুখ ফসকে বলেই ফেললে, গাজীপুরে মেয়র পদে মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নেতারা অবিচার করেছেন। আজমত উল্লাহ খান ধমক দিলেন। বললেন, ‘বেশী কথা বলবা না। নেত্রী রাজনীতি তোমার চাইতে কম বুঝেন না।’
বিনয়ের সাথে সালাম দিলাম। সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়তে এমনভাবে হাসি দিলেন, যেন বহু দিনের পরিচয়। আমি পরিচয় দিলাম। পরিচয় শুনেই হাতের ইশারায় পাশে ডাকলেন। বললেন, আসেন সাংবাদিক সাব, পাশে এসে বসেন। কোনো একজনকে ডেকে বললেন, ‘এই ঢাকা থেকে সাংবাদিক আসছে। চা খাওয়া। ’
শুরু হলো কথোপকোথন পর্ব। আমি প্রশ্ন করার আগেই তিনি শুরু করলেন। বললেন, নেতা-কর্মীদের আবেগ বেশি। তাদের ক্যামনে বুঝাই রাজনীতি রাজনীতির মতোই চলবে। শেখ হাসিনা কম বুঝেন না। তিনি আছেন বলেই দল টিকে আছে। সরকার টিকে আছে।
বললাম, গাজীপুর আওয়ামী লীগ আর আপনার জীবন এক সুতোয় গাঁথা। মনোনয়ন না পাওয়ায় খারাপ লাগছে না? প্রশ্ন শুনে হা হা হা করে হাসলেন। বললেন, রাজনীতি করতে এসে মন খারাপ করার সময় আছে? রাজনীতি মানে শুধু পদ পদবী বা ক্ষমতা নয়। জনগণের কথা বুঝতে পারাই রাজনীতি।
আবার জিজ্ঞেস করি, কোনো ক্ষোভ বা হতাশা? নরম কন্ঠে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করছি। নেত্রীর প্রতি আমার অগাধ আস্থা। তিনি যা ভালো মনে করেছেন তাই করেছেন। মেয়র পদের চেয়ে নেত্রীর নির্দেশ আমার কাছে অনেক বড়।
জানতে চাইলাম, যাকে (জাহাঙ্গীর আলম) মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, তাকে কীভাবে মূল্যায়ন করছেন? তিনি কিছু বলার আগেই সামনের দু`তিন জন ক্ষোভ ঝাড়েন। বলেন, ‘জাহাঙ্গীর টাকা দিয়া রাজনীতি কিনতে চায়। বেশিদিন এভাবে রাজনীতি করতে পারবে না।’ এবারো ধমক দেন আজমত উল্লাহ খান। বলেন, ‘তোরা আমারে ডুবাবি। বেশি কথা বলিস না।’
এবার নরম সুরে এ প্রতিবেদককে বলেন, জাহাঙ্গীর ভালো ছেলে। বড় দল থেকে মনোনয়ন পাওয়াও একটা যোগ্যতার ব্যাপার। নেত্রী ওর হাতে নৌকা তুলে দিয়েছেন, এটাই বড় কথা। যেহেতু তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী, তার সম্মান আমাদের সম্মান এক সুতোয় গাঁথা।
এবার আজমত উল্লাহ খানকে অতীত মনে করিয়ে দিলাম। বললাম, আপনি গত নির্বাচনের পরে অভিযোগ করেছিলেন, তিনি আপনাকে সহযোগিতা করেন নি। এবার কী আপনি....
মুখের কথা কেড়ে নিলেন আজমত উল্লাহ। বললেন, কী বলেন ভাই এসব? আমি রাজনীতি করি। রাজনীতি এক দিনের জন্য না। আমি গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি। আমার দলের প্রার্থীর পরাজয় মানে আমার পরাজয়।
হাসি মুখে বললাম, বিএনপি হাসান উদ্দিন সরকারকে মনোনয়ন দিয়েছে। অনেকে বলছেন, এর ফলে আওয়ামী লীগ বাড়তি সুবিধা পেল।
এবারো মুখের কথা কেড়ে নিলেন আজমত। বললেন, না। একথা আমি মানি না। হাসান উদ্দিন সরকার অনেক পুরোনো রাজনীতিবিদ। মাঠ ঘাট চষে খাওয়া মানুষ। তিনি এখন একটা বড় দলের প্রতিনিধি। তার পেছনে তাদের জোটের ভোট আছে। সুতরাং হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে।
কোনো প্রশ্ন করার আগেই আজমত উল্লাহ আবার বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। একশ’ ভাগ ফেয়ার ইলেকশান হবে। কে এম নুরুল হুদা সাহেবকে আমি চিনি। উনি এমন কিছু করবেন না যাতে করে জাতীয় নির্বাচনের আগে বিরোধী দল উনার বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলার সুযোগ পায়।
বললাম, ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে দলের উচ্ছৃঙ্খল নেতা কর্মীরা ঝামেলা করবে এমন আশংকা বিএনপি`র পক্ষ থেকে করা হচ্ছে। আজমত উল্লাহ খানিকটা গম্ভীর হলেন। বললেন, সেই সুযোগ কই? আপনারা ( মিডিয়া) আছেন, পর্যবেক্ষক টিম আছে। দেশবাসীর চোখ থাকবে এ নির্বাচনের দিকে। যে ঝামেলা করবে তার ক্ষতি। গুন্ডামি করলে দল হারবে।
এবার বিদায় নেওয়ার পালা। বললাম, নির্বাচন পর্যন্ত আপনাকে মাঝে মধ্যে বিরক্ত করবো। হাসি মুখে বললেন, সব সময় স্বাগতম।
প্রতিবেদকঃ আলী আদনান