
নূরুল ইসলাম নিরব: কিডনি রোগে আক্রান্ত ১ কোটি ৮০ লাখ মানুষকে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখাতে মৃত ব্যক্তির কিডনি ব্যবহারের উদ্যোগ নিচ্ছে কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতাল ও রিসার্চ ইনস্টিটিউট। স্বজনদের অনুমতিক্রমে হাসপাতালের নির্ধারিত ইউনিটে যদি কোনো ব্যক্তি মারা যায় তাহলে ওই ব্যক্তির কিডনি প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে আক্রান্ত রোগীকে বাঁচানো সম্ভব। এ প্রকল্প সফল হলে স্বাস্থ্যখাতে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। কিডনি প্রতিস্থাপনে আরও একধাপ এগিয়ে যাবে দেশ এমনটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ ব্যাপারে কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতাল ও রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন-আর-রশিদ (বিভাগীয় প্রধান, কিডনি) আজ একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলকে বলেন, আমাদের দেশে অঙ্গ প্রতিস্থাপনের কোনো আইন ছিল না, ফলে আমরা কয়েকজন মিলে সরকারকে পরামর্শ দিয়ে ‘অর্গান অ্যাক্ট ল’ তৈরিতে সাহায্য করেছি। ১৯৯১ সালে আইনটি সংসদে পাস হয়েছে। এরপর থেকে এ আইনটির অধীনে এই পর্যন্ত দুই হাজারের মতো বেশি রোগীর কিডনি প্রতিস্থাপন সফলভাবে করা সম্ভব হয়েছে। সম্প্রতি আমরা বিভিন্ন হাসপাতালের আইসিইউতে মৃত রোগীদের কিডনি প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে বিপন্ন রোগীদের জীবন বাঁচানোর উদ্যোগ নিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, আমরা মৃত ব্যক্তির কিডনি নিয়ে কিডনি প্রতিস্থাপন করতে পারি। এ বছর এর ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। অনেক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট ঠিক করে রাখা হয়েছে, যাদের চার বেডের অন্তত ইনটেনসিভ কেয়ার থাকবে। তাদের ব্রেন ডেথ কমিটি থাকতে হবে। তাদের ইনটেনসিভ কেয়ার বিশেষজ্ঞ থাকতে হবে। তবেই এটি সফল হবে বলে আশা করছি।
কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, দুইভাবে কিডনি সংযোজন করা যায়। একটি হচ্ছে নিকটাত্মীয়ের মাধ্যমে দান করা কিডনি নিয়ে রোগীর শরীরে প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে, অন্যটি মৃত ব্যক্তির কিডনি তার নিকটাত্মীয়ের অনুমতি সাপেক্ষে সংগ্রহ করে বিশেষ পদ্ধতিতে রোগীর শরীরে সেট করে। তবে আমাদের দেশে প্রথমটিই বেশি দেখা যায়। মৃত ব্যক্তির কিডনি কাজে লাগিয়ে আরেকটি মানুষের জীবন বাঁচাতে উন্নত দেশগুলোতেই বেশি দেখা যায়। বিশেষ করে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, হংকং, এশিয়ান দেশ এমনকি ভারতে কিছু কিছু চিকিৎসা এ পদ্ধতিতে দেওয়া হচ্ছে।
ডা. হারুন-আর-রশিদ জানান, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, বারডেম হাসপাতালসহ বড় বড় বেসরকারি হাসপাতালগুলোর সহায়তায় এ পদ্ধতির চিকিৎসা দেওয়া হবে। এর জন্য কয়েকটি বিশেষজ্ঞ টিম থাকবে। এ ক্ষেত্রে হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগে সহায়তা বেশি প্রাধান্য পাবে। কেননা রোগী যদি রাস্তায় মারা যান কিংবা হাসপাতালের বেডে মারা যান তাহলে সে কোনো অঙ্গ দান করতে পারবেন না। যদি তিনি হাসপাতালের নির্ধারিত ইউনিট-ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে মারা যান তবেই তার কিডনি ব্যবহারযোগ্য বলে বিবেচিত হবে।
তিনি আরও জানান, ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে যখন তার মস্তিষ্ক মৃত হবে, মেডিকেল সাইন্স বলবে তিনি মারা গেছেন, ডাক্তাররা ঘোষণা দিবেন তিনি মারা গেছেন।
চিকিৎকরা বলছেন, এ সময় এই মৃত ব্যক্তি তার দুটো কিডনি, একটি লিভার, একটি হার্ট- এ রকম পাঁচ-ছয়টা অঙ্গ, অন্য অরগান ফেইলিইউর রোগীকে দিলে তারা আবার নতুন জীবন ফিরে পাবেন। হয়তো তখন নিকটাত্মীয়রা ভাববেন আমার রোগী তো মারাই গেছেন এখন তার অঙ্গ দিয়ে যদি আরো ছয়টা মানুষ জীবন ফিরে পায়, তাহলে তো ভালো হয়। এমনটা হলে তখন অরগান টিম সেই অঙ্গ সংরক্ষণ করবে। চার থেকে ১২ ঘণ্টার মধ্যে সেই অরগান ফেইলিউর হাসপাতালগুলোতে পাঠিয়ে দেবে এবং সেখানে প্রতিস্থাপন করা হয়। এভাবেই মৃত ব্যক্তির কিডনিকে কাজে লাগিয়ে কিডনি রোগীর জীবন বাঁচানো সম্ভব বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এ ব্যাপারে বারডেম হাসপাতালের কিডনি বিশেষজ্ঞ ডা. সরওয়ার ইকবাল বলেন, যেকোনো সুস্থ ব্যক্তির কিডনি নিয়ে আরেকজন কিডনি অকেজো রোগীর দেহে প্রতিস্থাপন করতে পারলে সে রোগী বেঁচে যান। এ ক্ষেত্রে মৃত ব্যক্তির কিডনিও কাজে লাগানো যায়। তবে তার জন্য অনেক সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। যেমন ছয় থেকে ১২ ঘণ্টার মধ্যে চিকিৎসা সংক্রান্ত সব কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে। উন্নত বিশ্বে এ ধরনের চিকিৎসা বেশি দেখা যায়। দেশে এ পদ্ধতির প্রচলন করতে পারলে কিডনি আক্রান্ত মানুষকে বাঁচানো সম্ভব হবে বলেও মনে করেন তিনি।