
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীতা নিয়ে জলঘোলা কম হয়নি। বিভিন্ন সময় দুই দলের বিভিন্ন প্রার্থী দাবি করেছেন, তারা দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন, কিন্তু কেন্দ্র থেকে সেই দাবি উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে চূড়ান্ত মনোনয়ন পেয়েছেন প্রধান দুই দল-আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মেয়র প্রার্থীরা। এতে নির্ধারিত হয়ে গেছে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থী কে হচ্ছেন।
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তাদের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমের নাম। অন্যদিকে গত ৯ এপ্রিল সন্ধ্যায় গুলশানের দলীয় কার্যালয়ে বিএনপি তাদের প্রার্থী হিসেবে দলটির নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান উদ্দিন সরকারের নাম ঘোষণা করে।
নির্বাচনী হাওয়া শুরু হওয়ার আগেই আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতারা মনোনয়ন পেতে মাঠে নেমে পড়েন। ব্যাপক প্রচার প্রচারণায় নেমে পড়েন দুই দলের একাধিক প্রার্থী। মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সবাই স্থানীয় রাজনীতিতে শক্তিশালী মুখ হিসেবে পরিচিত । তাদের কেউ সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে, কেউ তারুণ্যে, কেউ জনমতে আবার কেউ ত্যাগে- এগিয়ে থাকায় গাজীপুরে সাধারণ কর্মী সমর্থকদের মধ্যে ছিল ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা। কে হতে পারেন দলীয় প্রার্থী, বা শেষ পর্যন্ত কে পাচ্ছেন দলীয় টিকিট, তা নিয়ে আলাপ-আলোচনা ও কৌতুহলের কমতি ছিলনা।
অবশেষে সেই কৌতুহলের অবসান ঘটিয়ে নির্বাচনী লড়াই মোড় নিল একদিকে। সেই হিসেবে আগামী ১৫ মে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী হিসেবে জাহাঙ্গীর আলম ও বিএনপি প্রার্থী হিসেবে হাসান উদ্দিন সরকার নির্বাচনী লড়াইয়ে মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন। দু`জনই এবারের নির্বাচনে নতুন মুখ। তবে নির্বাচনে নতুন মুখ হলেও দুজনের-ই রয়েছে তুমুল জনপ্রিয়তা।
আওয়ামী লীগে মনোনয়ন প্রত্যাশী বেশ কয়েকজন থাকলেও মনোনয়ন পেতে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা আজমত উল্লাহ খান ও সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম এর মধ্যে। এর মধ্যে আজমত উল্লাহ খান ইতঃপূর্বে পরপর তিনবার টঙ্গী পৌরসভার চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও তিনি ছিলেন সফল। তবে গত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে তিনি বিএনপি প্রার্থী এমএ মান্নানের কাছে হেরে যান।
আজমত উল্লাহকে তখন আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দিলেও ভাইস চেয়ারম্যান পদ ছেড়ে নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নিজের নাম ঘোষণা করেন জাহাঙ্গীর আলম। আদালত তার প্রার্থীতাকে বৈধ ঘোষণা করলে বিপাকে পড়ে আওয়ামীলীগ। ওই বছরের ১৮ জুন দুর্বৃত্তরা জাহাঙ্গীর আলমকে অপহরণ করে ঢাকায় নিয়ে যায়। পরে ২৩ জুন জাহাঙ্গীর আলম গণমাধ্যমের সামনে হাজির হয়ে মনোনয়ন প্রত্যাহার করেন। এরপরই জাহাঙ্গীর আলমের জনপ্রিয়তায় জোয়ার আসে। নির্বাচনে আজমত উল্লাহ খান হেরে যাওয়ার পর স্থানীয় আওয়ামী লীগও ঝুঁকে জাহাঙ্গীর আলমের দিকে। তখন দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে গাজীপুর মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয় জাহাঙ্গীর আলমকে। মাত্র ৩৪ বছর বয়সে এতো বড় দায়িত্ব নিয়ে দলকে সংগঠিত করতে চষে বেড়িয়েছেন গাজীপুরের প্রতিটি ওয়ার্ড।
জাহাঙ্গীর আলমের সেই শ্রম ও অর্থ বৃথা যায়নি। অবশেষে প্রধানমন্ত্রী নিজেই জাহাঙ্গীর আলমের হাতে দলীয় প্রতীক `নৌকা` তুলে দিলেন। এদিকে আজমত উল্লাহ খানও মেনে নিয়েছেন দলীয় প্রধানের আদেশ। দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা তাকে পোড় খাওয়া মানুষে পরিণত করেছে। তিনি বলেন, নেত্রীর নির্দেশ আমার কাছে বড় বিষয়। মেয়র পদের চেয়ে নেত্রীর আদেশই আমার কাছে বড় বিষয়।
গাজীপুরের বর্তমান মেয়র বিএনপির এমএ মান্নান। গত নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী আজমত উল্লাহকে পরাজিত করে রাজনৈতিক ময়দানে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু পুরো মেয়াদে অর্ধেকেরও বেশী সময় তিনি দায়িত্ব পালন করতে পারেননি। বিভিন্ন মামলার আসামি হয়ে কখনো ফেরারি জীবন, আবর কখনো জেলে কাটিয়েছেন বিএনপির এই নেতা। তবে রাজনৈতিক ময়দানে এবার বিএনপিও পরিচিত ও নন্দিত মুখ বেঁচে নিয়েছেন। তাই বাদ পড়েছেন এই নেতা।
হাসান উদ্দিন সরকার তরুণ বয়সে টঙ্গী পৌরসভার চেয়ারম্যান, ৮০’র দশকে দু`বার সংসদ সদস্য এবং পরবর্তী সময়ে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৩ সালের সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন, আহসান উল্লাহ মাষ্টার মারা নিহত হলে উপ নির্বাচন ও ১৯৯১ সালে সংসদ নির্বাচনে তিনি এমএ মান্নানকে সমর্থন দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। দীর্ঘ দিনের ত্যাগ ও সমাজসেবামূলক কাজ তাকে স্থানীয় রাজনীতিতে করে তুলেছে জনপ্রিয়।
এদিকে সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ১৫ মের নির্বাচনে মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন এ দুই নেতা। কেমন হবে সেই নির্বাচন, কে হচ্ছেন গাজীপুরের নতুন নগরপিতা তার জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে আগামী ১৫ মে পর্যন্ত।