রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে বিভিন্ন পর্যায় থেকে মিয়ানমারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সিডনি সফরের প্রথম দিন অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী জুলি বিশপের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে প্রধানমন্ত্রীর এই আহ্বান আসে।
অস্ট্রেলিয়ার স্থানীয় সময় শুক্রবার সকালে জুলি বিশপ সিডনির ইন্টারকন্টিনেন্টালে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত করেন।
পরে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী চাপ বজায় রাখার কথা বলেছেন। তাদের ওপর চাপ বজায় রাখতে হবে একসঙ্গে, বিভিন্ন পর্যায়ে, বিভিন্নভাবে। পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের সহায়তা অব্যাহত রাখার কথাও বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।’
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের গ্রামে গ্রামে নির্বিচারে হত্যা, জ্বালাও-পোড়াওয়ের মধ্যে গত বছরের ২৫ অগাস্ট থেকে এ পর্যন্ত সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।
রাখাইনে সেনাবাহিনীর ওই অভিযানকে জাতিসংঘ বর্ণনা করেছে ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ হিসাবে। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে মিয়ানমারের নাগরিক এই রোহিঙ্গারা তাদের আবাসভূমি ছেড়ে বাংলাদেশে পালিয়ে চলে আসতে বাধ্য হয়েছে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশে আছে প্রায় এগারো লাখ রোহিঙ্গা।
মিয়ানমার তাদের এই নাগরিকদের রাখাইনে ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশের সঙ্গে একটি চুক্তিও করেছে।
প্রথম দফায় প্রত্যাবাসনের জন্য আট হাজার ৩২ জনের একটি তালিকা দেওয়া হয়েছিল মিয়ানমারকে। ওই তালিকা যাচাই-বাছাই করে ৩৭৪ জনকে রাখাইনের বাসিন্দা হিসেবে চিহ্নিত করার কথা জানিয়ে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ বলেছিল, যে কোনো সময় তাদের ফিরিয়ে নিতে তারা প্রস্তুত।
ওই চুক্তির কথা উল্লেখ করে জুলি বিশপকে শেখ হাসিনা বলেন, মিয়ানমার চুক্তি করলেও এখনও তার বাস্তবায়ন হয়নি।
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের বলেন, “চুক্তি হয়েছে, সফর হয়েছে এবং তারা অস্বীকারও করে না। কিন্তু এটার এখনো কোনো বাস্তবায়ন নাই। এটা প্রধানমন্ত্রী বলেছেন।”
বাংলাদেশে এই বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ায় শেখ হাসিনার সরকারের প্রশংসা করেন জুলি বিশপ।
রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে অস্ট্রেলিয়ার জোরালো অবস্থানের কথাও তিনি প্রধানমন্ত্রীর সামনে তুলে ধরেন।
পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক বলেন, ‘জুলি বিশপ জানতে চেয়েছেন, কী করলে এই সমস্যার সমাধান হবে।’
গ্লোবাল সামিট অন উইমেনে যোগ দিতে তিন দিনের সফরে শুক্রবার সকালে সিডনি পৌছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম টার্নবুলের আমন্ত্রণে এই সফরে তিনি নারী নেতৃত্বে সফলতার স্বীকৃতি স্বরূপ সম্মানজনক ‘গ্লোবাল উইমেনস লিডারশিপঅ্যাওয়ার্ড’ গ্রহণ করবেন।
শহীদুল হক বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করে অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘নারীমুক্তি ও নারীর ক্ষমতায়নে আপনি বিশ্বে প্রেরণার নেত্রী।’
বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় শেখ হাসিনার সাহসী নেতৃত্বেরও প্রশংসা করেন জুলি বিশপ।
বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় কাজে নারীর অংশগ্রহণ ও নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা বৈঠকে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বিচার বিভাগ, প্রশাসন ও সংসদে নারীর নেতৃত্বের পর্যায়ে থাকার কথাও তিনি বলেন।
অন্যদের মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।