ডেস্ক: খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থীর পরাজয়ের পর গাজীপুর নিয়েও দুশ্চিন্তা শুরু হয়েছে দলটিতে। যদিও দলের সিনিয়র নেতারা মনে করছেন, ভোট কারচুপি, কেন্দ্র দখল ও জাল ভোটের ঘটনায় আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচনে তাদের ‘নির্দলীয় সরকারের দাবির যৌক্তিকতা আরও জোরদার হয়েছে। তবে বিএনপির মেয়র প্রার্থীর পরাজয়ের নেপথ্যে দলীয় কারণগুলোও তাদের ভাবিয়ে তুলছে।
তাদের মতে, খুলনায় বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল, কিছু দলীয় কাউন্সিলর প্রার্থীর বিরুদ্ধাচরণ, পুলিশের ধরপাকড় এবং পোলিং এজেন্টরা ‘পালিয়ে যাওয়ায়’ বিএনপি প্রার্থী পরাজিত হয়েছেন। আর এজন্য গাজীপুর নির্বাচন নিয়েও নতুন করে ভাবতে হচ্ছে দলটিকে। তবে নতুন এই ভাবনায় নির্বাচন বর্জনের দিকে যাবে না দলটি। প্রয়োজনে প্রচার-প্রচারণায় ও ভোটের দিন নতুন কৌশল প্রয়োগের চিন্তা-ভাবনা রয়েছে বিএনপির নীতি নির্ধারকদের।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও গাজীপুর সিটি নির্বাচনের প্রধান সমন্বয়ক ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন গতকাল বৃহস্পতিবার আজকালের খবরকে জানান, ‘নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের সহযোগিতায় নির্বাচনে ভোট কারচুপির মাধ্যমে তাদের প্রার্থীর বিজয় ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। এ সরকারের অধীনে যে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়, তা আবারও প্রমাণিত হয়েছে। পাশাপাশি আগামী জাতীয় নির্বাচনে তাদের নির্দলীয় সরকারের দাবির যৌক্তিকতা জোরদার হয়েছে। গাজীপুর সিটি নির্বাচনেও সরকার একই দায়দায় বিএনপি প্রার্থীর পক্ষে যে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে তা কেড়ে নেবে বলে তাদের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।’
খুলনার অভিজ্ঞতা থেকে গাজীপুরে নতুন কী ধরনের কৌশল নেওয়া হবে? এর জবাবে তিনি বলেন, ‘ভিন্ন প্রেক্ষাপটে নতুন কৌশল হতে পারে। সেটি আমরা চিন্তা-ভাবনা করছি। তবে সেটি দলীয় ফোরামে আলোচনা করে ঠিক করা হবে।’ আর এই মুহূর্তে বিএনপি স্থানীয় নির্বাচন বর্জনের দিকে যাবে না বলেও জানান বিএনপির এই সিনিয়র নেতা।
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও গাজীপুর জেলার সভাপতি ফজলুল হক মিলন বলেন, ‘নির্বাচন স্থগিত হওয়ার পর থেকেই আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা বন্ধ রয়েছে। তবে ইসির নির্দেশে ১৮ জুন থেকে আবারও আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরু হবে। তবে এর আগেও বিএনপি নানাভাবে ভোটারদের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করবে। রমজান মাসে তো এমনিতেই ইফতার পার্টিসহ কিছু রাজনৈতিক কর্মসূচি থাকে। এবার হয়তো নির্বাচন উপলক্ষে সেটি আরও বাড়বে। এছাড়াও দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়সহ দলীয় অন্যান্য কর্মসূচি পালন করা হবে।’
খুলনায় হারের পর গাজীপুরে এর প্রভাব কতটা পড়বে? এর জবাবে তিনি বলেন, ‘খুলনার পরিস্থিতি গাজীপুরে চাইলেই আওয়ামী লীগ তৈরি করতে পারবে না। সেখানে যেভাবে কেন্দ্র দখল করে ভোট জালিয়াতের মহাৎসব হয়েছে গাজীপুরের জনগণ সেটি করতে দেবে না। আর আমাদের সাংগঠনিক দিক থেকেও আরও ঐক্যবদ্ধভাবে শক্তিশালী অবস্থান তৈরির জন্য করণীয় নিয়ে কাজ করব।’
দলীয় সূত্রগুলো বলছে, গাজীপুরের প্রেক্ষাপটকে খুলনার পরিস্থিতিতে আলাদা করে দেখা হচ্ছে। এজন্য বিএনপি নেতাদের মতে দুটিকে এক করে দেখার সুযোগ নেই। দলটির নেতারা বলছেন, গাজীপুর রাজধানীর লাগোয়া হওয়ায় এখানে খুলনার মতো ক্ষমতাসীনদের ব্যাপক ও কারচুপির সুযোগ খুব কম। কেননা দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকসহ গণমাধ্যমের দৃষ্টি থাকবে বেশি। অন্যদিকে গাজীপুরে প্রতিপক্ষের প্রার্থীর চেয়ে বিএনপির প্রার্থীর জনপ্রিয়তাও বেশি। দল ও জোটের নেতাদের সক্রিয়ভাবে মাঠে নামাতে পারলে ফলাফল অনুক‚লে আসবে এমন সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সূত্রগুলোর দাবি, খুলনায় সব কিছুর বাইরেও মাঠের সাংগঠনিক চিত্র নিয়ে সন্তুষ্ট নয় দলের নীতিনির্ধারকরা। তাদের মূল্যায়ন খুলনায় ক্ষমতাসীনরা জয়ের জন্য মরিয়া হয়ে প্রশাসনকে ব্যবহার করতে পারে। সেই আশঙ্কা দলের মধ্যে ছিল। কিন্তু জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা সেটি প্রতিহত করতে সর্বশক্তি নিয়োগ করবে এমন প্রত্যাশা ছিল তাদের। কিন্তু নির্বাচনের দিন কোনো ক্ষেত্রেই দলটির নেতাকর্মীরা প্রতিরোধ গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়েছে। সেটিও তাদের ভাবাচ্ছে।
এমতাবস্থায় গাজীপুরের দলীয় সাংগঠনিক বিষয়টি নিয়েও পুর্ণমূল্যায়ন করছে দলটি। কিন্তু দলীয়ভাবে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, খুলনার তুলনায় গাজীপুরে বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। গাজীপুর মহানগর হওয়ার পর থেকে সেখানে বিএনপির কমিটি নেই। জেলা কমিটিই মহানগরের দায়িত্ব পালন করছে। একইভাবে উপজেলা ও পৌরসভার ওয়ার্ড কমিটিকেই নির্বাচনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
সাংগঠনিক বিষয়ে জানতে চাইলে গাজীপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী সায়্যেদুল আলম বাবুল বলেন, ‘গাজীপুর মহানগর হওয়ার পর থেকেই মহানগর বিএনপির কমিটি দেওয়া হয়নি। কেন সেটি দলের হাইকমান্ড বলতে পারবে। তবে এজন্য নির্বাচনের কাজে কোনো সমস্যা হবে না। আমরা জেলা ও উপজেলার নেতাদের নিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে নির্বাচনী দায়িত্ব ভাগ করে দিয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমান জেলা কমিটির তত্ত্বাবধানেই ২০১৩ সালে বিএনপির মেয়র প্রার্থী গাজীপুরে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেছিল। তাই আমরা মনে করছি নির্বাচন সুষ্ঠু হলে ও জনগণ সঠিকভাবে তাদের ভোটদানের সুযোগ পেলে আবারও বিএনপি জয়ী হবে।’