গাজীপুর সিটির সীমানা নিয়ে সুরুজ-জাহাঙ্গীর-রিটার্নিং কর্মকর্তার বক্তব্য

পাঁচ বছর আগে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন বর্তমান সীমানাতেই হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থগিত নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা রকিবউদ্দিন মণ্ডল।

২০১৩ সালের ১২ জানুয়ারি টঙ্গী ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন গঠনের পর ওই বছরের জুলাইয়ে প্রথম নির্বাচন হয়। আর দ্বিতীয় নির্বাচনে আগামী ১৫ মে ভোট হওয়ার কথা ছিল।

পাঁচ বছর আগে ভোট স্থগিত না হলে এখন কেন স্থগিত হবে সে নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন গাজীপুরে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় জানাচ্ছে, সাভারের শিমুলিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এ বি এম আজহারুল ইসলাম সুরুজ যে আপত্তি নিয়ে আদালতে গেছেন, সেটির মীমাংসা হয়ে গেছে আগেই।

তারপরও সুরুজ এবার ভোট ঠেকাতে তিনি যেন মরিয়া। গত ১০ এপ্রিলও বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদকে আইনজীবী নিয়োগ করেও নির্বাচন ঠেকানোর চেষ্টা করেন সুরুজ। কিন্তু তখন তিনি ব্যর্থ হলেও সেই তথ্য গোপন করে আবার ৬ মে অন্য একজনকে আইনজীবী নিয়োগ করে রিট আবেদন করেন। আর এইবার তিনি তিন মাসের স্থগিতাদেশ নিয়ে আসেন।

এই স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশন, আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম এবং বিএনপির প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারের আপিলের শুনানি হবে বৃহস্পতিবার।

রিটার্নিং কর্মকর্তা এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ২০১৩ সালের সীমানাতেই এবার নির্বাচনের তফসিল হয়েছে দাবি করলেও সুরুজের দাবি এটা ঠিক নয়। তিনি বলছেন, এমনটা হলে যে ছয় মৌজা নিয়ে বিরোধ সেই এলাকার ভোটাররা ২০১৬ সালে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তাকে কেন ভোট দেবেন।

অবশ্য এই প্রশ্নের জবাব অবশ্য আপাতত পাওয়া যাচ্ছে না। আর এই বিষয়টি নিয়েই সুরুজ আইনি লড়াই চালাচ্ছেন।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে নথিপত্র যা বলছে

শিমুলিয়ার ছয়টি মৌজা নিয়ে গত ২৫ মার্চ প্রজ্ঞাপন জারি করে স্থানীয় সরকার বিভাগ। এই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ছয় মৌজা নিয়ে হাইকোর্ট বিভাগে করা রিট আগেই নিষ্পত্তি করা হয়েছে।

স্থানীয় সরকার বিভাগের পদস্থ এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘গাজীপুর সিটি নির্বাচন নিয়ে খামাখা আইনি জটিলতা তৈরি করা হয়েছে। এটা অনেক অগেই নিষ্পত্তি করে প্রজ্ঞাপনও জারি করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। এটা নিয়ে আরও আগে হাইকোর্টে রিট হয়েছিল। সেটি নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। এখন অকারণে রিট করে নির্বাচনটা আটকানো হয়েছে।’

ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ২০১৩ সালের ১৬ জানুয়ারি গাজীপুর সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠা করা হয়। আর এই উক্ত প্রজ্ঞাপনের পর দক্ষিণ বারইবাড়ি, ডোমনা, শিবরামপুর, পশ্চিম পানিশাইল, দক্ষিণ পানিশাইল এবং ডোমনাগ মৌজা নিয়ে হাইকোর্টে রিট করা হয়।

এরপর হাইকোর্ট বিভাগ বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। স্থানীয় সরকার বিভাগ ২০১৭ সালের ১০ অক্টোবর এ বিষয়ে একটি কমিটি গঠন করে।

কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৭৮ সালের ২ ডিসেম্বরের এই ছয় মৌজা সাভার থানা থেকে গাজীপুরের জয়দেবপুরে অন্তর্ভূক্ত হয়।

১৯৯৬ সালের ১১ আগস্ট গাজীপুর সদর থানার নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় এই ছয় মৌজা কাশিমপুর ইউনিয়নের এক নং ওয়ার্ডভুক্ত করে।

২০১২ সালের ২২ জানুয়ারি কাশিমপুর ইউনিয়নকে গাজীপুর পৌরসভার অন্তর্ভূক্ত করা হয়। পরে স্থানীয় সরকার বিভাগ ২০১৩ সালে তৎকালীন টঙ্গী ও গাজীপুর পৌর এলাকা নিয়ে গাজীপুর সিপি করপোরেশন গঠন করে। এর পর ছয়টি মৌজার জনগণ জাতীয় সংসদ ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সিটি করপোরেশন এলাকার বাসিন্দা হিসেবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন।

২০১৫ সালে এ বিষয়ে উচ্চ আদালতে করা রিট আবেদনের সঙ্গে সাভারের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার একটি পত্র আদালতে দাখিল করা হয়।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর প্রতিবেদনটি ‘স্থানীয় কতিপয় ব্যক্তিবর্গের’ বক্তব্যের ওপর ভিত্তি করে প্রণীত। কিন্তু এর পক্ষে ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ, ভূমি হস্তান্তর, ক্রয় বিক্রয় এর মতো দালিলিক প্রমাণ ছিল না।

ওই ছয়টি মৌজা গাজীপুর প্রশাসিনক জেলা এবং গাজীপুর সিটি করপোরেশনের অন্তর্ভুক্ত মর্মে তখন তদন্ত প্রতিবেদনে মতামত দেয়া হয়।

২০১৭ সালের ২০ ডিসেম্বরও আবার তদন্ত কমিটি গঠন করে স্থানীয় সরকার বিভাগ। এতে বলা হয়, ডোমনা, ডোমনাগ ও দক্ষিণ বারইবাড়ী মৌজার কতিপয় ব্যক্তি শিমুলিয়া ইউনিয়নের কলতাসুতী মৌজার বাসিন্দা পরিচয় দিয়ে সাভার উপজেলা থেকে বিভিন্ন নাগরিক সুবিধা গ্রহণ করে থাকেন।

রিট আবেদনকারীর ভোটার তালিকায়ও তার ঠিকানা কলতাসুতী, উপজেলা, সাভার, জেলা ঢাকা মর্মে উল্লেখ রয়েছে। তিনি নিজেকে ডোমনাগ মৌজার অধিবাসী হিসেবে দাবি করলেও এর সঠিকতা পাওয়া যায়নি।

এই ছয়টি মৌজার ভূমির নামজারি, ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ এবং সাবরেজিস্ট্রি অফিসের কার্যক্রম গাজীপুর জেলাতেই হয়। এ প্রতিবেদনেও সুস্পষ্ট করে বলা হয় যে ছয়টি মৌজা গাজীপুর সিটি করপোরেশনের অন্তর্ভুক্ত।

সুরুজ-জাহাঙ্গীর-রিটার্নিং কর্মকর্তার বক্তব্য

সুরুজ বলছেন, ২০১৬ সালে শিমুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে এই ছয়টি মৌজার ভোটারদের ভোটে পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন। তাই এই ছয়টি মৌজাকে সিটিতে অন্তর্ভূক্ত করার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা হয়।

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘২০১৩ সালের গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এই ছয়টি মৌজার ভোটাররা ভোট দেয়। আমরা সেখানে গণশুনানি করেছিলাম। ওই ছয় মৌজার ভোটাররা তখন আমাদেরকে বলেছে, তারা সিটি করপোরেশনের আওতাধীন থাকতে চায়। তারা সিটি করপোরেশনের নাগরিক সুযোগ সুবিধা পেতে চায়।’

জাহাঙ্গীর বলেন, ‘শিমুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শুধুমাত্র ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের জন্য গাজীপুরের প্রায় ৩০ লক্ষ মানুষের ক্ষতি করেছে। গাজীপুরের জনগণকে ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে। আমি ইতোমধ্যে আপিল করেছি। ইনশাআল্লাহ নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী যথাসময়ে গাজীপুর সিটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’

তবে সুরুজের দাবি, এই ছয় মৌজার ভোটাররা ২০১৩ সালে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে ভোট দেয়নি।

সুরুজ বলেন, ‘তখন গণশুনানি হয়েছিল কিন্তু গণশুনানিতে তারা কাগজ আনল না কেন? প্রথম সিটি নির্বাচনের সময়ও আমরা শিমুলিয়া-সাভারের বাসিন্দা, এখনো আমরা শিমুলিয়া-সাভারের বাসিন্দা। শিমুলিয়া ইউনিয়ন এখনও আশুলিয়া থানা, সাভার উপজেলার আওতাধীন। চৌকিদারি ট্যাক্স ও ট্রেড লাইসেন্স শিমুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদ দেয়। আর ২০১৬ সালে এই ছয় মৌজার ভোটারদের ভোটেই আমি চেয়ারম্যান হই। এই ভোটেই ডা. এনাম (এনামুর রহমান) এমপি নির্বাচিত হয়েছেন।’

২০১৩ সালের নির্বাচনের আগে কেন রিট করেননি, জানতে চাইলে সুরুজ বলেন, ‘২০১৩ সালের নির্বাচনের আগেও আমি আদালতে রিট করেছি। আদালত বারবার রিট খারিজ করে দেয়। আমিও বার বার আপিল করি, এভাবেই চলছে।’

ভোটের মাত্র নয়দিন আগে কেন রিট করলেন এমন প্রশ্নে সুরুজ বলেন, ‘আমার ফাইল/কাগজ তৈরি হতে সময় লেগেছে, তাই দেরি হয়েছে। এছাড়া অন্য কোন কারণ নাই।’

২০১৩ সালের সিটি নির্বাচনে ওই ছয় মৌজায় ভোট হয়নি বলে সুরুজের দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে এবার নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা রকিব উদ্দিন মণ্ডল বলেন, ‘২০১৩ সালের নির্বাচনেও এই ছয়টি মৌজা গাজীপুর সিটি করপোরেশনের আওতায় ছিল। সে নির্বাচনে এই ছয় মৌজার ভোটাররাও ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন।’

তাহলে ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত শিমুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে ওই ছয় মৌজার ভোটাররা কীভাবে সেখানে ভোট দিল- এমন প্রশ্ন এড়িয়ে রকিব মণ্ডল এ বিষয়ে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।

গাজীপুরের জেলা প্রশাসক দেওয়ান মোহাম্মদ হুমায়ুন কবিরের মোবাইল ফোন একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।



- মহিউদ্দিন মাহী ও ইফতেখার রায়হান, ঢাকাটাইমস




নাম

অর্থ ও বাণিজ্য,235,আন্তর্জাতিক,731,কাপাসিয়া,342,কালিয়াকৈর,417,কালীগঞ্জ,253,খেলা,644,গাজীপুর,3936,চাকরির খবর,33,জয়দেবপুর,1581,জাতীয়,2958,টঙ্গী,911,তথ্যপ্রযুক্তি,512,ধর্ম,196,পরিবেশ,136,প্রতিবেদন,310,বিজ্ঞান,55,বিনোদন,697,ভিডিও,58,ভিন্ন খবর,142,ভ্রমন,115,মুক্তমত,27,রাজধানী,829,রাজনীতি,1055,লাইফস্টাইল,283,শিক্ষাঙ্গন,398,শীর্ষ খবর,10757,শ্রীপুর,481,সাক্ষাৎকার,12,সারাদেশ,649,স্বাস্থ্য,212,
ltr
item
GazipurOnline.com: গাজীপুর সিটির সীমানা নিয়ে সুরুজ-জাহাঙ্গীর-রিটার্নিং কর্মকর্তার বক্তব্য
গাজীপুর সিটির সীমানা নিয়ে সুরুজ-জাহাঙ্গীর-রিটার্নিং কর্মকর্তার বক্তব্য
https://2.bp.blogspot.com/-KOqevVunFMs/WvOISh2O8jI/AAAAAAAAYck/dZLIKMwehzE4LjYtoGbfJbYUGhkzzNAZACLcBGAs/s400/suruz.jpg
https://2.bp.blogspot.com/-KOqevVunFMs/WvOISh2O8jI/AAAAAAAAYck/dZLIKMwehzE4LjYtoGbfJbYUGhkzzNAZACLcBGAs/s72-c/suruz.jpg
GazipurOnline.com
https://www.gazipuronline.com/2018/05/gcc-suruz.html
https://www.gazipuronline.com/
https://www.gazipuronline.com/
https://www.gazipuronline.com/2018/05/gcc-suruz.html
true
13958681640745950
UTF-8
Loaded All Posts Not found any posts VIEW ALL Read More Reply Cancel reply Delete By প্রচ্ছদ PAGES POSTS View All RECOMMENDED FOR YOU LABEL ARCHIVE SEARCH ALL POSTS Not found any post match with your request Back Home Sunday Monday Tuesday Wednesday Thursday Friday Saturday Sun Mon Tue Wed Thu Fri Sat January February March April May June July August September October November December Jan Feb Mar Apr May Jun Jul Aug Sep Oct Nov Dec just now 1 minute ago $$1$$ minutes ago 1 hour ago $$1$$ hours ago Yesterday $$1$$ days ago $$1$$ weeks ago more than 5 weeks ago Followers Follow THIS PREMIUM CONTENT IS LOCKED STEP 1: Share. STEP 2: Click the link you shared to unlock Copy All Code Select All Code All codes were copied to your clipboard Can not copy the codes / texts, please press [CTRL]+[C] (or CMD+C with Mac) to copy