ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে দুদিনের সফরে আজ শুক্রবার পশ্চিমবঙ্গে সফরে আসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত শান্তিনিকেতনে বাংলাদেশ ভবন উদ্বোধনের পর আজ দুপুরে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে বসবেন। এটি প্রথাগত দ্বিপাক্ষিক সফর না হলেও দুই প্রধানমন্ত্রীর একান্ত আলোচনা ও দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে দুদেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হবে।
বাংলাদেশ ও ভারতের জাতীয় নির্বাচনের আগে এই সফরকে গুরুত্বপূর্ণ বলছে দুদেশে কূটনীতিক বিশ্লেষকরা। শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদির বৈঠকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। ২০১১ সালে অভিন্ন তিস্তা নদীর পানিবণ্টন চুক্তির খসড়া চূড়ান্ত হলেও মমতার বিরোধিতার কারণে ঝুলে আছে চুক্তি সই।
শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে বাংলাদেশ বিমানের একটি বিশেষ ফ্লাইটে শেখ হাসিনার কলকাতায় নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু বিমানবন্দরে অবতরণ করবেন। একই সময়ে নরেন্দ্র মোদি কলকাতা বিমানবন্দরে আসার কথা রয়েছে। পরে সেখান থেকে একইসঙ্গে শান্তিনিকেতনে যাবেন। পশ্চিমবঙ্গের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বিমাবন্দরে আসার কথা রয়েছে। বিমানবন্দর থেকে তারা হেলিকপ্টারে শান্তিনিকেতনে যাবেন। সেখানে বিশ্বভারতীতে নিয়মিত সমাবর্তনে সম্মানিত অতিথি হিসেবে যোগ দেবেন। এরপর দুই প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ ভবন উদ্বোধন করবেন। ভবন উদ্বোধনের পর দুই প্রধানমন্ত্রী কিছু সময় একান্তে আলোচনা করবেন এবং তারপর দু’দেশের প্রতিনিধি দল নিয়ে শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদি বৈঠক করবেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদির বৈঠকে বরাবরের মতো তিস্তা ইস্যুটি থাকবে। সেই বৈঠকে মমতা উপস্থিত থাকলে ভালো হবে। তবে মমতা দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে থাকবেন কিনা সেটা এখনো চূড়ান্ত করে বলা যাচ্ছে না। বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনের আগে এই সফরকে খুবই গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। নির্বাচনী বছরে বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ভারতের কাছেও গুরুত্বপূর্ণ। নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও রাজনীতি বিষয়ে কি আলোচনা হবে কিনা? এমন এক প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গত বুধবার ঢাকায় সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘নরেন্দ্র মোদি যদি শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনা করতে চান তবে কেন নয়? ভারত আমাদের বৃহত্তম ও প্রধান প্রতিবেশী’। বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোর সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি রোহিঙ্গা ইস্যুটি নিয়েও আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।
সফরসূচি অনুযায়ী শুক্রবার বিকালে শেখ হাসিনা কলকাতায় ফিরে প্রধানমন্ত্রী বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত জোড়াসাঁকের ঠাকুরবাড়ি পরিদর্শন করবেন। সন্ধ্যায় হোটেল তাজ বেঙ্গলে কলকাতা চেম্বার নেতারা বাংলাদেশের শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।
শনিবার পশ্চিমবঙ্গের আসানসোলে কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশেষ সমাবর্তনে শেখ হাসিনাকে সম্মানসূচক ডক্টর অব লিটারেচার (ডি. লিট) উপাধিতে ভূষিত করা হবে। নজরুলের সৃষ্টি কর্ম নিয়ে গবেষণা কেন্দ্র স্থাপনসহ গণতন্ত্র, নারীর ক্ষমতায়ন, দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং আর্থসামাজিক উন্নয়নের মাধ্যমে জনগণের জীবনমান উন্নয়নে অসাধারণ ভূমিকার স্বীকৃতিস্বরূপ প্রধানমন্ত্রীকে ওই উপাধি দেওয়া হচ্ছে। কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশেষ সমাবর্তনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও উপস্থিত থাকবেন। বিকেলে কলকাতায় ফিরে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের কিংবদন্তি বাঙালি নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর স্মৃতিবিজড়িত জাদুঘর পরিদর্শন করবেন। সফর শেষে শনিবার রাতে শেখ হাসিনা ঢাকায় ফিরবেন।