
সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের বিষয়ে প্রজ্ঞাপনের দাবিতে আবারও কর্মসূচি দিয়েছে আন্দোলনকারী সংগঠন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। দ্রুত প্রজ্ঞাপনের দাবিতে বুধবার দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে মানববন্ধনের ঘোষণা দিয়েছে তারা।
মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে এক সংবাদ সম্মলনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক রাশেদ খাঁন।
জানানো হয়, বুধবার বেলা ১১টায় এই কর্মসূচি পালিত হবে। কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য থেকে জাতীয় জাদুঘর পর্যন্ত হবে মানববন্ধন।
সরকারি চাকরিতে কোটা ৫৬ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবিতে গত ফেব্রুয়ারি থেকে আন্দোলনে নামে সংগঠনটি।
তবে কোটা নিয়ে বাংলাদেশে আন্দোলনের শুরু ৯০ দশকের মাঝামাঝি থেকে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর মুক্তিযোদ্ধা কোটার আওতায় আনা হয় তাদের সন্তানদেরকেও। পরে নাতি-নাতনিদেরকেও এই সুবিধার আওতায় আনা হয়।
১৯৯৭ সালে জামায়াতপন্থীরা মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। তখন ব্যর্থ হলেও নানা সময়ই এই দাবি নিয়ে মাঠে নামে তারা। তবে এবার কোটা আন্দোলনকারীরা কোনো বিশেষ কোটার নাম নেয়নি।
আর গত ৮ এপ্রিল রাজধানীর শাহবাগে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষের পর দেশের সব সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। পরে নামে সরকারি চাকরিতে অনীহা দেখানো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাও। আর ১২ এপ্রিল সংসদে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কোনো কোটার দরকার নেই।’
এরপর ছাত্ররা ক্লাসে ফিরে গেলেও গত ২৬ এপ্রিল দ্রুত প্রজ্ঞাপন না হলে আবার আন্দোলনে নামার ঘোষণা আসে। পরদিন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবীর নানক আলোচনায় বসেন কোটা আন্দোলনের নেতাদের সঙ্গে। জানান, প্রথানমন্ত্রী দেশে ফিরলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রজ্ঞাপন হবে।
প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরে ২ মে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, তিনি কোটা বাতিলের বিষয়ে যে কথা বলেছেন, সেটা পাল্টাবে না।
এর মধ্যে ০৭ মে মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলম জানান, কোটা নিয়ে প্রজ্ঞাপনের বিষয়ে এখনও কোনো অগ্রগতি হয়নি। এরপর দিনই কর্মসূচি ঘোষণা করল ছাত্ররা।
ধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খাঁন বলেন, ‘ছাত্র সমাজের সঙ্গে চক্রান্ত শুরু হয়েছে। আমরা বলে দিতে চাই ছাত্র সমাজ কোনো চক্রান্ত মেনে নেবে না। আপনি (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) অতি দ্রুত প্রজ্ঞাপন জারি করে ছাত্র সমাজকে শান্ত করুন। তারা এখন ক্ষুব্ধ। নতুবা তারা আবার রাজপথে নেমে আসবে।’
‘আমাদের আন্দোলন সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ ও অহিংস। সামনে যে আন্দোলন চলবে সেটিও শান্তিপূর্ণ হবে। আমরা বঙ্গবন্ধুর অহিংস আন্দোলনের চেতনায় বিশ্বাসী।’
আন্দোলনকারীদের আরেক যুগ্ম-আহ্বায়ক নূরুল হক নূর বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের ২৭ দিন পার হলেও এখনো প্রজ্ঞাপন জারি হয়নি। প্রধানমন্ত্রী দুই দুইবার কোটা বাতিলের ঘোষণা দেওয়ার পরও এখনো প্রজ্ঞাপন জারি হয়নি। আমরা প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই আমরা প্রধানমন্ত্রীকে বলবো আপনি অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারি করে ছাত্র সমাজের মধ্যে যে অস্থিরতা বিরাজ করছে তাদের শান্ত করুন।’