২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের একাদশ শ্রেণিতে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মূল আসনে শতভাগ মেধার ভিত্তিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। কোটায় আবেদনকারী শিক্ষার্থীরা মেধায় ভর্তির সুযোগ না পেলে তাদের বিশেষভাবে ভর্তি করা হবে। এছাড়া তিন দফায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পছন্দের সুযোগ পাবেন শিক্ষার্থীরা। প্রতিবারই শিক্ষার্থীদের বোর্ড নির্ধারিত ফি দিয়ে অনলাইনে আবেদন করতে হবে।
সোমবার সকালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত উচ্চপর্যায়ের এক সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইনের সভাপতিত্বে মন্ত্রণালয়ের সব বিভাগের অতিরিক্ত সচিব, সব বোর্ডের চেয়ারম্যান, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক, বুয়েটের তিনজন অধ্যাপক উপস্থিত ছিলেন। সভায় অংশ নেওয়া সবার মতামতের ভিত্তিতে ‘একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি নীতিমালা’ চূড়ান্ত করা হয়েছে।
সভা শেষে নীতিমালার বিষয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্ত সচিব (কলেজ) ড. মোল্লা জালাল উদ্দিন আজকালের খবরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী কোটা তুলে দেওয়া হয়েছে। শতভাগ মেধার ভিত্তিতে ভর্তি করা হবে।’ তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘একটি কলেজে ৩০০ আসন থাকলে শতভাগ মেধায় ভর্তি করা হবে। আবেদনকারীদের মধ্যে কোটাধারীদের কেউ সুযোগ না পেলে তাদের মূল আসনের বাইরে সংশ্লিষ্ট কলেজ নির্ধারিত কোটায় ভর্তি করতে পারবে। বিগত দিনে দেখা গেছে, ১১ শতাংশ কোটা সংরক্ষণ থাকায় অনেক কলেজে আসনশূন্য থাকে। মেধাবীরা বঞ্চিত হয়।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আগে একবার আবেদন ফি দিয়ে তিনবার কলেজ পছন্দ করতে পারত। এই সুযোগের কারণে অনেকেই বিষয়টি অবজ্ঞা করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিশ্চয়ন করত না। আবার অনেকে পছন্দের তালিকার নিচের কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েও ভর্তি না হয়ে আবার নতুন কলেজ নিশ্চয়ন করত। এতে অর্থ অপচয় হতো। মেধাবীরা বঞ্চিত হতো। এবার কলেজ নিশ্চয়ন শেষে ভর্তি করা হবে। প্রতিবারই আবেদন ফি দিতে হবে।’
নীতিমালায় বলা হয়েছে, আগামী ১৩ থেকে ২৪ মে পর্যন্ত অনলাইনে (www.xiclassadmission.gov.bd) এবং টেলিটক মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে পাঁচ থেকে ১০টি প্রতিষ্ঠানে ভর্তির আবেদন করা যাবে। এর মধ্য থেকে একটি কলেজ নির্ধারণ করে দেবে বোর্ড। অনলাইনে আবেদনের জন্য ১৫০ টাকা এবং মোবাইলে আবেদনে প্রতিটি কলেজের জন্য ১২০ টাকা ফি দিতে হবে। ভর্তি কার্যক্রম ২৭ জুন থেকে শুরু হয়ে ৩০ জুন শেষ হবে। ১ জুলাই থেকে ক্লাস শুরু হবে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তিতে পাঁচ হাজার টাকা, আংশিক এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে নয় হাজার টাকা (বাংলা মাধ্যম) ও ১০ হাজার টাকা (ইংরেজি মাধ্যম) ভর্তি ফি নিধারণ করা হয়েছে। উন্নয়ন ফি তিন হাজার টাকার বেশি কোনো প্রতিষ্ঠান নিতে পারবে না। এছাড়াও মফস্বল ও পৌর এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তিতে এক হাজার টাকা, জেলা সদরে দুই হাজার টাকা, ঢাকা ছাড়া অন্যান্য মেট্রোপলিটন এলাকায় তিন হাজার টাকা ভর্তি ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। সরকারি কলেজে সরকার নির্ধারিত প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ভর্তি ফি নিতে হবে। গত বছরের মতো এবারও শিক্ষার্থীরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিশ্চয়ন করার সময়ে বোর্ডে ১৮৫ টাকা নিবন্ধন ফি জমা দিতে হবে। ভর্তি কার্যক্রম শেষ হলে বিভাগ পরিবর্তন করতে পারবে। ভর্তির ক্ষেত্রে নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার দিতে হবে।
ভর্তির যোগ্যতায় নীতিমালায় বলা হয়েছে, ভর্তিতে এবারও কোনো পরীক্ষা হবে না। এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফলে ভিত্তিতে ভর্তি করা হবে। সমমান জিপিএ-প্রাপ্তদের ক্ষেত্রে মোট প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে মেধাক্রম নির্ধারণ করা হবে। বিজ্ঞান বিভাগে গণিত ও উচ্চতর গণিত বা জীববিজ্ঞানের প্রাপ্ত নম্বর বিবেচনা করা হবে।
নীতিমালায় বলা হয়েছে, শতভাগ আসন সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। মেধার ভিত্তিতে ভর্তি করা হবে। তবে বিশেষ অগ্রাধিকারের (কোটা) আবেদনকারী থাকলে মোট আসনের অতিরিক্ত (মুক্তিযোদ্ধা-পাঁচ শতাংশ, বিভাগীয় ও জেলা সদর-তিন শতাংশ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধস্তন দফতরসমূহ দুই শতাংশ, বিকেএসপি-শূন্য পাঁচ এবং প্রবাসী-শূন্য পাঁচ শতাংশ) শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। ভর্তি নীতিমালা লঙ্ঘন করলে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠাদান অনুমতি বা এমপিওভুক্তি বাতিল করা হবে এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।