হাবীব রহমান: গাজীপুর সিটিতে আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দল কিছুটা কমে এলেও দলীয় প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমের বেশকিছু দুর্বলতা ধরা পড়েছে দলের হাইকমান্ডের চোখে। এর কিছুটা জাহাঙ্গীর আলমের প্রচারণা সংক্রান্ত। অন্যগুলো ব্যক্তিগত।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা জাহাঙ্গীর আলমের প্রচারণার ভুলগুলো শুধরে দিয়েছেন। বলেছেন, দলীয় নেতাদের প্রচারণায় আরও বেশি সম্পৃক্ত করতে। আর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর তুলনায় জাহাঙ্গীরের ব্যক্তিগত দুর্বলতাগুলো নিজের ক্যারিশমায় দৃঢ়তা ও সতর্কতার সঙ্গে উতরে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। এক্ষেত্রে মূল ভিত্তি হতে হবে দলীয় ঐক্য ও উন্নয়নের প্রচার।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় এক ঝাঁক নেতা সম্প্রতি এসব বিষয় নিয়ে গাজীপুরের এমপি জাহিদ আহসান রাসেলের বাসায় রুদ্ধদ্বার বৈঠক করে এসব নির্দেশনা দিয়েছেন। এর পাশাপাশি প্রতিনিয়ত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় হাইকমান্ড এ সিটি নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করছে।
খুলনা সিটি জয়ের ইতিবাচক প্রভাব কাজে লাগিয়ে গাজীপুর সিটির জয় ঘরে তুলতে মরিয়া আওয়ামী লীগ। প্রধানমন্ত্রীর ও দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার কড়া নির্দেশনার পর দলের নেতারা গাজীপুর সিটিতে নিজেদের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে ছক কষছেন। তারা চাইছেন ব্যাপক প্রচার প্রচারণার মাধ্যমে নৌকার পক্ষে একটি গণজোয়ার তৈরি করতে।
সংশ্লিষ্ট নেতাদের পর্যবেক্ষণ, গাজীপুর সিটিতে শুরুতে দলীয় প্রার্থীর সাফল্যের বড় বাধা ছিল অভ্যন্তরীণ কোন্দল। আওয়ামী লীগ হাইকমান্ডের তৎপরতা, দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কড়া নির্দেশনায় কোন্দল কিছুটা কমে এসেছে। তবে মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে গিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের চিন্তা বেড়েছে দলীয় প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমের কিছু দুর্বলতায়।
বড় দুর্বলতা পারিবারিক। জাহাঙ্গীর আলমের চেয়ে বিএনপি প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারের পারিবারিক ঐতিহ্য বেশি। টঙ্গীতে সরকার পরিবার প্রভাবশালী দীর্ঘদিন থেকেই। তাদের পারিবারিক উদ্যোগে এলাকায় অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এক্ষেত্রে জাহাঙ্গীর আলমের বংশের জোর কিছুটা কম। তবে আওয়ামী লীগ নেতাদের দাবি, এক্ষেত্রে ভোটারদের কাছে টানতে আওয়ামী লীগ প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমের ব্যক্তি ক্যারিশমা ও নিজের চলমান সামাজিক কর্মকাণ্ড কিছুটা কাজে লাগবে।
এছাড়া রাজনৈতিক অভিজ্ঞতায়ও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী থেকে পিছিয়ে জাহাঙ্গীর আলম। অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। গাজীপুর সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস- প্রেসিডেন্ট ছিলেন তিনি। উপজেলা পরিষদ থেকে পদত্যাগ করে ২০১৩ সালে অনুষ্ঠিত সিটি নির্বাচনে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী হয়েছিলেন জাহাঙ্গীর। প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার এর আগে টঙ্গী পৌরসভার দুইবারের মেয়র, গাজীপুর জেলা পরিষদের প্রতিষ্ঠাকালীন চেয়ারম্যান এবং দুইবারের সংসদ সদস্য হয়েছেন। তিনি বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংকের চেয়ারম্যানও ছিলেন।
তবে দলীয় নেতারা দাবি করছেন, রাজনৈতিক অভিজ্ঞতায় পিছিয়ে থাকা জাহাঙ্গীর আলম উতরে যেতে পারেন তার বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে। তিনি নিজের নামে প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘জাহাঙ্গীর আলম শিক্ষা ফাউন্ডেশন’। এর অধীনে নগরিকে যানজটমুক্ত রাখতে অনেকে কাজ করেন। এ ফাউন্ডেশনের অধীনে ২২ হাজারের মতো শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম বয়সেও যেমন তরুণ, এক পুরুষ আগেও জাহাঙ্গীর আলমের পূর্বপুরুষদের পারিবারিক বসতি ছিল সিটির বাইরে। এছাড়া গাজীপুর সিটিতে জাহাঙ্গীর আলমের সমসাময়িক যেসব ছাত্রনেতা ছিলেন তাদের সঙ্গে রয়েছে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর অনেক দূরত্ব।
গাজীপুর সিটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, এ সিটিতে দলীয় প্রার্থীর দুর্বলতাই আওয়ামী লীগের বড় দুর্ভাবনা। তারা বলছেন, কেন্দ্রীয় হাইকমান্ডের তৎপরতায় ও প্রধানমন্ত্রীর কড়া নির্দেশনায় দলীয় কোন্দল কাটিয়ে উঠতে পারলেও; নেতারা মাঠে কাজ করতে গিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর তুলনায় আওয়ামী লীগ প্রার্থীর এসব দুর্বলতা টের পেয়েছেন হাতেনাতে। তবে সূত্র জানায়, দলীয় কোন্দল একেবারে শেষ হয়ে যায়নি। প্রধানমন্ত্রীর কড়া নির্দেশে নেতারা মাঠে নামলেও এমপি, মন্ত্রীরা তাদের আগামী জাতীয় নির্বাচনের প্রচারণায় মনোযোগী বেশি।
এরপরও জয়ের গাজীপুরে জয়ের ধারাবাহিকতা চায় আওয়ামী লীগ। ক্ষমতাসীন দলের মূল লক্ষ্য হলো- খুলনার মতো গাজীপুরেও জয়ের জন্য স্থানীয় নেতাদের আরো ঐক্যবদ্ধ করা। কোনোভাবেই যেন এ ঐক্যে ফাটল না থাকে। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকদের বিশ্বাস, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা ঐক্যবদ্ধভাবে জাহাঙ্গীরের পক্ষে কাজ করলে, মাঠে নেমে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরতে পারলে গাজীপুর সিটি করপোরেশনেও জয় সুনিশ্চিত।
আওয়ামী লীগের এক সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বলেন, আওয়ামী লীগ যে উন্নয়ন করতে পারে, সেটা দেশের মানুষ জানে। মানুষ এটাও জানে যে, আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিজয়ী হলে এলাকার উন্নয়ন হবে, মানুষ কিছু পাবে। এ কারণে সাধারণ মানুষ আওয়ামী লীগের প্রার্থীকেই ভোট দেবে। কারণ এর আগের বিএনপি সমর্থিত মেয়র গাজীপুর সিটির উন্নয়নে কিছুই করতে পারেনি।