বরিশাল সিটি করপোরেশন (বিসিসি) নির্বাচনে মেয়র পদের ভুয়া ব্যালট পেপারে নৌকা মার্কার প্রার্থীর পক্ষে সিল মেরে কে বা কাহার বিভিন্ন কেন্দ্রের সামনে ফেলে রেখেছে। নির্বাচন কমিশন থেকে সরবরাহকৃত ব্যালট পেপারের সাথে এই ব্যালটের বেশ অমিল। এই ব্যালটে হাত পাখা প্রতীক অনুপস্থিত।
বরিশাল ল’ কলেজ নৈশ বিদ্যালয় কেন্দ্রের ভোটার গৌতম ঢালী জানান, নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে এবং স্থানীয় সাধারণ ভোটারদের ক্ষেপিয়ে তুলতে নৌকার মার্কার প্রার্থীর বিরুদ্ধে এই ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।
গৌতম বলেন, বরিশাল ল’ কলেজ নৈশ বিদ্যালয় কেন্দ্রের সামনে আমি নিজেই অসংখ্য এরকম ব্যালট পেপার দেখেছি। প্রথমে আমিও রাগ করে ভোট না দিয়ে চলে যেতে চেয়েছিলাম। পরে একটি ব্যালট তুলে ভালো করে পরীক্ষা করে দেখি এসব ব্যালটে হাতপাখা প্রতীক নেই।
বরিশাল কলেজ কেন্দ্রে ভোট দিতে আসা মো. জামাল জানান, নৌকা মার্কার প্রার্থীর বিরুদ্ধে চরমোনাই প্রার্থীকে ক্ষেপিয়ে তুলতেই মেয়র পদের ভুয়া ব্যালট পেপারে নৌকা মার্কার প্রার্থীর পক্ষে সিল মেরে বিভিন্ন কেন্দ্রের সামনে ছড়িয়ে রেখেছে যে ব্যালটে হাত পাখা প্রতীক নেই।
অমৃত লাল দে কলেজ কেন্দ্রের ভোটার শোভন দাস জানান, বিসিসি নির্বাচনে কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলেও মোটের উপর নির্বাচনটি সুষ্ঠুই হয়েছে। তবে যারা নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে নানা অনিয়মের অভিযোগ এনেছে তারাই নিজেরাই এসব ঘটনার সাথে জড়িত।
এদিকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মাওলানা ওবায়দুর রহমান মাহবুব ভোট কারচুপি ও কেন্দ্র দখলের অভিযোগে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। ৩০ জুলাই (সোমবার) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সাংবাদিক সম্মেলন করে তিনি এই ঘোষণা দেন।
এ সময় তিনি সাংবাদিকদের জানান, সকাল ৮টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার পর থেকে সাড়ে আটটা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ স্বাভাবিক ছিল। এর পর শুরু হয় গণ্ডগোল, কেন্দ্র থেকে আমাদের এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়েছে, এমনকি ব্যালটে আমাদের প্রতীক হাতপাখাও দেখা যাচ্ছে না।
বরিশালে মেয়র পদে সাতজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও মাঠে রয়েছেন ছয়জন প্রার্থী। স্বতন্ত্র প্রার্থী বশিরুল হক ঝুনু নির্বাচন থেকে সরে গিয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে সমর্থন দিয়েছেন। এছাড়া ৩০টি সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ৯৩ জন ও ১০টি সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে আরও ৩৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
বরিশালে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন কাস্তে প্রতীকে সিপিবির মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ, নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ, ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির মেয়র প্রার্থী মজিবর রহমান সরওয়ার, লাঙল প্রতীকে জাতীয় পার্টির (বহিষ্কৃত) মেয়র প্রার্থী ইকবাল হোসেন (তাপস), মই মার্কায় বাসদের মেয়র প্রার্থী ডা. মনীষা চক্রবর্তী, হাত পাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থী মূফতি ওবাইদুর রহমান (মাহবুব)।
বরিশাল সিটিতে ৩০টি সাধারণ ওয়ার্ডের মধ্যে তিনটিতে ও একটি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। বাকি ২৭টি সাধারণ ওয়ার্ডে ৯১ জন ও নয়টি সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৩৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। বরিশাল সিটি নির্বাচনে মোট দুই লাখ ৪২ হাজার ১৬৬ জন ভোটারের মধ্যে এক লাখ ২০ হজার ৭৩০ জন নারী ও এক লাখ ২১ হাজার ৪৩৬ জন পুরুষ রয়েছেন। এখানে ১২৩টি ভোট কেন্দ্রের ৭৫০টি ভোট কক্ষ।