১৯৬৬ সালের পর আবারও বিশ্ব ফুটবলের শিরোপা জয়ে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিল ইংলিশরা। রাশিয়া বিশ্বকাপে সেমিফাইনালের ধাপ পার হওয়া গেল না। শেষ পর্যন্ত ভরসা ছিল তৃতীয় হয়ে দেশে ফেরার। তাও হয়নি। বেলজিয়ামের কাছে ২-০ গোলে হেরে চতুর্থ হয়েই দেশে ফিরতে হবে সাউথ গেটের শিষ্যদের। বেলজিয়ামের পক্ষে উভয় অর্ধে একটি করে গোল করেন মুনয়ের ও হ্যাজার্ড।
ম্যাচের শুরুতেই এগিয়ে যায় বেলজিয়াম, চতুর্থ মিনিটেই গোল আদায় করে নেয়। তবে গোলের জন্য ইংল্যান্ডের ডিফেন্সের ভুলই ছিল মুখ্য। নাসের চাদলির জন্য অনেক বেশি জায়গা ছেড়ে দেয় ইংলিশরা। তার বাড়ানো বল শেষ মুহূর্তে পা লাগিয়ে ইংল্যান্ডের জালে জড়িয়ে দেন থমাস মুনিয়ের (১-০)। ১১ মিনিটেই গোল শোধ করার সুযোগ পেয়েছিলো ইংল্যান্ড। রাহিম স্টার্লিং বা পায়ের দুর্দান্ত শট নিয়েছিলেন, বলটি চলে যায় পোস্টের বাইরে চলে যায়। পরের মিনিটেই গোল বাড়ানোর সুযোগ পেয়েছিলেন বেলজিয়ামের কেভিন ডি বরুয়েন। বক্সের মাঝ থেকেই ডান পায়ের দুর্দান্ত শট, বলটি বাম পাশ ঘেঁষে চলে যায়।
১৪ মিনিটে ইংল্যান্ডের ড্যানি রোজের কাছ থেকে বল পেয়ে ফ্যাবিয়ান ডেলফের ডান পায়ের শট বলে যায় বক্সের বাইরে। ১৫ মিনিটে কাইরণ ট্রিপারের কাছ থেকে বল পেয়ে লফটাস-চেক হেড নেন। কিন্তু বক্সের মধ্যে লাফিয়ে উঠে সেই বল ঠেকিয়ে দেন বেলজিয়ামের গোলরক্ষক কর্তোয়া। ২০ মিনিটে ইংল্যান্ডের হ্যারি ম্যাগুইরে আরও একবার হেড করে গোলের সম্ভাবনা তৈরি করেছিলেন। কিন্তু গোলরক্ষকের ক্ষিপ্রতায় এবারও বেঁচে যায় বেলজিয়াম। ২৩ মিনিটে হ্যারি কেইনের ডান পায়ের শট মিস হয়ে যান। সুযোগ পেয়েও বলটি জড়াতে পারলেন না জালে। ২৪ মিনিটে আরও একবার গোল মিস করলেন রাহিম স্টার্লিং। ৩৫ মিনিটে ইউরি তিয়েলম্যান্স সুযোগ পেয়েছিলেন গোল করার। ডান পায়ের শট মিস করেন তিনি। ৩৫ মিনিটে টবি অ্যালডারউইয়ারল্ড ডান পায়ের শট নেন। কিন্তু বক্স মিস করেন তিনি। এক গোলে এগিয়ে থেকেই বিরতিতে যায় বেলজিয়াম।
বিরতির পর দুদলই আক্রমণ অব্যাহত রাখলেও গোল আসেনি। ৭৬ মিনিটে নিশ্চিত গোল থেকে বঞ্চিত হয় ইংলিশরা। ইংল্যান্ডের এরিখ ডায়ারের শট গোলরক্ষক কর্তোয়াকে ফাকি দিয়ে জালে প্রবেশের মুহূর্তে গোল লাইন থেকে টবি অ্যালডারউইয়ারল্ড বল ক্লিয়ার করেন। ৮২ মিনিটে পাল্টা আক্রমণ থেকে ব্যবধান বাড়ায় বেলজিকরা। বা প্রান্ত দিয়ে জোড়ালো শটে ব্যবধান ২-০ তে নিয়ে যান ইডেন হ্যাজার্ড। ফলে ইংল্যান্ডের হার অনেকটাইড নিশ্চিত হয়ে যায়।
গুরুত্বহীন হলেও ম্যাচে বেলজিয়াম এবং ইংল্যান্ড দু’দলই মাঠে নামিয়েছিল শক্তিশালী একাদশ। ফলে খেলাটাও শুরু থেকে ছিল উপভোগ্য। যদিও ইংল্যান্ডের পায়েই ছিল সবচেয়ে বেশি বলের দখল। ইংল্যান্ডের ছিল ৫৭ ভাগ আর বেলজিয়ামের ছিল ৪৩ ভাগ।
সেমিতে হারের শোক কাটিয়ে তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে সেন্ট পিটার্সবার্গে মাঠে নামে ইংল্যান্ড ও বেলজিয়াম। ফ্রান্সের কাছে ১-০ ব্যবধানে হেরে বেলজিয়াম এবং ক্রোয়েশিয়ার কাছে ২-১ ব্যবধানে হেরে ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিলেও তাদের মাঠে নামতে হয় ফাইনালের আগের ম্যাচের জন্য।
বিশ্বকাপে ‘এইচ’ গ্রুপেই ছিল দু’দল। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে দুর্বল দল খেলিয়েছিল তারা। তবে তৃতীয় হওয়ায় লড়াইয়ে সে পথ ধরলেন না রবার্তো মার্টিনেজ এবং গ্যারাথ সাউথগেট। তৃতীয় নির্ধারণী ম্যাচে বেলজিয়াম একাদশে দুটি এবং ইংলিশ একাদশে পাচটি পরিবর্তন হয়। কোয়ার্টার ফাইনালে দুই হলুদ কার্ডের কারণে সেমিতে না খেলা থমাস মিউনিয়ার ফিরেছেন বেলজিয়ান একাদশে। তাছাড়া ফেলাইনির পরিবর্তে সুযোগ পেয়েছেন টাইলিমান্স।
এদিকে, ইংল্যান্ড একাদশে অনেকগুলো পরিবর্তন হয়েছে। ডিফেন্ডার কাইল ওয়াকারের পরিবর্তে সুযোগ পেয়েছেন ফিল জোনস। তাছাড়া ড্যানি রোজ, লফটাস-চেক, ফাবিয়েন ডেলফ, এরিক ডায়ারও ইংল্যান্ডের প্রথম একাদশে সুযোগ পেয়েছেন।