কোটা সংস্কার আন্দোলন একটা যৌক্তিক পর্যায়ে এলে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ছাত্রলীগের নতুন কমিটি ঘোষণা করতে পারেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কোটা আন্দোলনে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক কয়েকটি চক্র জড়িয়ে যাওয়ার কারণেই ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণায় বিলম্ব হচ্ছে।
সূত্র জানায়, চলমান কোটা আন্দোলন সরকারবিরোধী আন্দোলনের প্রেক্ষাপট তৈরি করছে। সরকারের কাছে তথ্য রয়েছে, বিরোধী মহল তাদের সর্বশেষ আন্দোলনটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই করতে চায়। এই সময়ে ছাত্রলীগের কমিটি হলে ছাত্রলীগকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করা হবে বিভিন্নভাবে; নিজেদের মধ্যে কোন্দলের চেষ্টায় চতুর্মুখী ইন্ধন আসবে বিভিন্নভাবে। আবার নেতৃত্ব বঞ্চিত কোনো পক্ষ কোটা আন্দোলনেও জড়িয়ে পড়তে পারে। এজন্য ছাত্রলীগের কমিটি গঠনে প্রধানমন্ত্রী সময় নিচ্ছেন।
জানা গেছে, বিভিন্ন সংস্থার জরিপের আলোকে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ১০ জনের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা তৈরি করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়মী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী যেমন প্রার্থী খুঁজছেন, তার সব যোগ্যতা পূরণ করতে পারে তেমন কোনো প্রার্থীই পাচ্ছেন না তিনি। তবে মন্দের ভালো হিসেবে ১০ জনের এ তালিকা থেকেই সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করা হবে।
প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো বলছে, যোগ্যতার মাপকাঠিতে সার্বিকভাবে উত্তীর্ণ না হলেও; মেধাবী কয়েকজন শিক্ষার্থীকে ছাত্রলীগের নেতৃত্বের জন্য প্রধানমন্ত্রী পছন্দ করেছেন। যারা বিশ^বিদ্যালয়ে ভালো বিষয়ে পড়াশুনা করছেন, এসএসসি ও এইচএসসিতে ভালো ফলাফলধারী এবং যাদের পারিবারিক ঐতিহ্য রয়েছেÑ এদের মধ্যে থেকেই কাউকে ছাত্রলীগের দায়িত্ব তুলে দেবেন শেখ হাসিনা। কিন্তু তার আগে তিনি নিশ্চিত হতে চাইছেন, এরা কেউ লোভে বিক্রি হবে না। আদর্শে অটল থাকবে। যারা মূল স্রোতের বাইরে কোনো সিন্ডিকেটে জড়াবে না।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, দীর্ঘ দিন সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের একটি অংশের তত্ত¡াবধানে ছাত্রলীগের কমিটি হয়েছে। এবার আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপে কমিটি হচ্ছে। কিছু চমক তো থাকবেই। সব মিলিয়ে প্রধানমন্ত্রী চান, ছাত্র রাজনীতিতে যাদের ভালো অবস্থান ও আওয়ামী লীগ ও মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তির পরিবারের মধ্য থেকেই ছাত্রলীগের নেতৃত্ব নির্বাচিত হোক। যার ফলে সব কিছু মেলাতে গিয়ে একটু সময় লাগছে।
আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানায়, গত বুধবার ছাত্রলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের গণভবনে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পদপ্রার্থীদের নিজেদের মধ্যকার হট্টগোলে বিব্রত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি হতাশ হয়েছেন, পদপ্রত্যাশীদের কেউ দৃঢ়তার সঙ্গে নিজেদের হট্টগোল থামাতে পারেনি। সরকারি বাহিনীর হস্তক্ষেপ লেগেছে।
আগামীকাল ১১ জুলাই, ছাত্রলীগের সম্মেলনের দুই মাস পূর্তি হবে। পদপ্রত্যাশীসহ অন্য নেতাকর্মীদের রুদ্ধশ্বাস অবস্থা। কে হবেন আগামী দিনের ছাত্রলীগের কাণ্ডারি তা নিয়ে উত্তেজনা সারাদেশের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে। সবাই জানেন, ছাত্রলীগের নতুন কমিটি এখন প্রধানমন্ত্রীর টেবিলে। তবে চূড়ান্ত ঘোষণার আগ পর্যন্ত কেউ কিছু বলতে পারছে না। না ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতত্ব; না আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। এরই মধ্যে ছাত্রলীগের কাণ্ডারি কারা হচ্ছেন এ নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে কৌত‚হল বাড়ছে। শীর্ষ দুই পদে কারা আসছেন তা নিয়ে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা ও গুঞ্জন। চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। আওয়ামী লীগের নেতাদেরও মুখ বন্ধ। ছাত্রলীগ নিয়ে কেউ ‘টুঁ’ শব্দও করতে চান না। সবাই বলছেন বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার।
গত বুধবার পদপ্রত্যাশী ছাত্রলীগ নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘আমি সবার ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়েছি। আমি যে নেতৃত্ব নির্বাচন করব তোমরা সবাই তা মেনে নেবে এবং আগামী নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে।’ পদপ্রত্যাশী নেতারা সমস্বরে জানান, প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।
এদিকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের আংশিক কমিটির পাশাপাশি ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়, ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণের কমিটিও ঘোষণা হবে। বিভিন্ন জেলা, মহানগর ছাত্রলীগের বিষয়ে একটি গাইডলাইনও নতুন নেতাদের দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।
ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন ২০১৫ সালের ২৬ ও ২৭ জুলাই সংগঠনটির ২৮তম জাতীয় সম্মেলনে তারা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এর প্রায় ২ বছর ৯ মাস পর গত ১১ মে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ২৯তম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। পরদিন ১২ মে দ্বিতীয় অধিবেশনে ভোটের পরিবর্তে সমঝোতার মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের কথা থাকলেও তা সম্ভব হয়নি। বিষয়টি গড়ায় প্রধানমন্ত্রীর টেবিলে।