পরীক্ষাকালীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আর বন্ধ নয়

পাবলিক পরীক্ষা চলাকালীন সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আর বন্ধ থাকবে না। যত্রতত্র পরীক্ষার কেন্দ্র ও ভেন্যু স্থাপনের সুযোগও থাকছে না।  প্রশ্নফাঁস ও নকলমুক্ত পরিবেশে পরীক্ষা নিতে প্রতিটি উপজেলা শহরে আলাদা ভবন নির্মাণ করা হবে। সেখানেই পাবলিকসহ অন্যান্য পরীক্ষা আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

বৃহস্পতিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে উচ্চপর্যায়ের একটি সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। স্বতন্ত্র পরীক্ষা কেন্দ্র বাস্তবায়ন হলে পরীক্ষা চলাকালীন পাঠদান কার্যক্রম থেকে বঞ্চিত হবেন না শিক্ষার্থীর। সংশ্লিষ্টরা এমনটাই দাবি করেছেন।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) মো. মহিউদ্দিন খানের সভাপত্বিতে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে গতকাল একটি সভা হয়েছে। তাতে, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের (ইইডি) প্রধান প্রৌকশলী দেওয়ান মোহাম্মদ হানজালা, উপসচিব (উন্নয়ন-১) নাসরীন মুক্তিসহ মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) এবং ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সভা সূত্রে জানা গেছে, প্রতিটি উপজেলায় একটি করে স্বতন্ত্র পরীক্ষা কেন্দ্র নির্মাণের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। প্রকল্পে সম্ভাব্যতা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে ইউডির প্রধান প্রকৌশলী দেওয়ান মোহাম্মদ হানজালাকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। কমিটিতে মাউশি ও শিক্ষাবোর্ডের প্রতিনিধি রাখা হয়েছে। কমিটির সদস্যদের দ্রত সময়ের মধ্যে একটি প্রকল্প প্রস্তাবনা তৈরি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সরকারের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে অনুমোদন হলেই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর তা বাস্তবায়ন করবে।

সূত্র আরও জানায়, কমিটিকে উপজেলা ভিত্তিক শিক্ষার্থীর সংখ্যা, অবকাঠামো, কতগুলো কেন্দ্রে ও ভেন্যুতে পরীক্ষা নেওয়া হয় এসব বিষয় পর্যালোচনা করে একটি প্রতিবেদন জমা দিতে হবে। বেশি জনসংখ্যা অধ্যুষিত মহানগর ও জেলা শহরের পরীক্ষা কেন্দ্রের চাহিদা। পরীক্ষার সময় পাঠদান বন্ধের প্রভাব প্রতিবেদনে তুলে ধরতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।  

সভার বিষয়ে জানতে চাইলে ইইডির প্রধান প্রকৌশলী দেওয়ান মোহাম্মদ হানজালা আজকালের খবরকে বলেন, ‘গত বছর ডিসি  জেলা প্রশাসক) সম্মেলনে এমন একটি প্রস্তাব তারা (ডিসি) দিয়েছিলেন। সে পরিপ্রেক্ষিতে আমরা প্রথম সভা করেছি। সভায় আমাকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। আমাদের প্রতিবেদনের আলোকে পরবর্তী কার্যক্রম অগ্রসর হবে।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সাপ্তাহিক ছুটি ছাড়া শিক্ষাবর্ষের ৩৬৫ দিনের মধ্যে ৮০ দিন নানা ছুটিতে পাঠদান বন্ধ থাকে। এছাড়া শিক্ষাবর্ষের শুরুতেই ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। মে থেকে জুন পর্যন্ত এইচএসসি ও সমমানের। শিক্ষাবর্ষের শেষের দিকে নভেম্বর মাসে জেএসসি ও সমমানের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষার কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা সারা দেশের কয়েক হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতি বছর পরীক্ষা চলাকালীন গড়ে ৪৫ দিন বন্ধ থাকে। এ সময়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় সারা বছরের শিক্ষাসূচি। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের থেকে পিছিয়ে পড়ে। এমন বাস্তবতায় প্রত্যেক উপজেলায় আলাদা পরীক্ষা কেন্দ্র করার সুপারিশ করেন জেলা প্রশাসকরা। তাদের প্রস্তাব বাস্তবায়ন করতে গতকাল সভায় বসেন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, জেএসসি, এসএসসি, এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ১০টি শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকরা সারা দেশে যত্রতত্র কয়েক পরীক্ষার কেন্দ্র ও ভেন্যুর অনুমোদন দিয়েছেন। দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা হাতিয়ে নিয়েছেন মোটা অঙ্কের টাকা। যত্রতত্র ভেন্যু অনুমোদনের কারণে প্রশ্নফাঁসের অন্যতম কারণ চিহ্নিত করেছে গোয়েন্দা সংস্থা। চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষা চলাকালীন রাজধানীর ট্রাস্ট কলেজে কেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান নানা অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছেন। কেন্দ্রের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ প্রায় আসে মন্ত্রণালয়ে।
 
অভিযোগ রয়েছে, রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভাড়া বাসায় পরিচালিত অনেক স্কুল-কলেজে শিক্ষার পরিবেশ নেই। অথচ এসব প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা কেন্দ্রের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে ঢাকা বোর্ডের অধীন রাজধানীতে ব্যানিজ্যিক ভিত্তিতে পরিচালিত অসংখ্য স্কুল, কলেজ ও মাদ্রসায় কেন্দ্র ও ভেন্যুর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। পাসের হার ও জিপিএর সংখ্যা বাড়াতে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা নিজেদের মধ্যে অলিখিত চুক্তি করেন। চুক্তি অনুযায়ী পরীক্ষার হলে শিক্ষার্থীদের বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়।

চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষায় মহামারি আকারে প্রশ্নফাঁস হয়। তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন শিক্ষামন্ত্রী। এ পরিপ্রেক্ষিতে গত ৬ ফেব্রুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আলমগীরকে আহ্বায়ক করে আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়। কমিটি যত্রতত্র ভেন্যুর অনুমোদন প্রশ্নফাঁসের অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। কমিটির সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে আগামী নভেম্বর মাসে শুরু হতে যাওয়া জেএসসি পরীক্ষায় সব ভেন্যু বাতিল করেছে আন্তঃশিক্ষাবোর্ড সমন্বয় সাব কমিটি। কেন্দ্রের সংখ্যাও কমিয়ে আনা হয়েছে।

গত মে মাসে সুষ্ঠুভাবে পাবলিক পরীক্ষা আয়োজনে জাতীয় আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের উপস্থিতে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার শেখ নাজমুল আলম অভিযোগ করেন, ‘প্রশ্নফাঁসের কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে যে কয়টি কারণ পেয়েছি তার মধ্যে বিতর্কিত কেন্দ্র ও ভেন্যুগুলো দায়ী। এবার এইচএসসি পরীক্ষায় ২৫ মিনিট আগে লটারির মাধ্যমে সেট নির্ধারণ হওয়ার এসব ভেন্যু নিয়ে আরও ঝামেলা হয়েছে। কারণ ২৫ মিনিটে কেন্দ্র প্রশ্ন পৌঁছানো যায়নি। এর আগে এসএসসি পরীক্ষায় ভেন্যুতে প্রশ্ন পৌঁছানো সময় প্রশ্নফাঁসের ঘটনা ঘটেছে।’ এই পুলিশ কর্মকর্তার বক্তব্যের প্রেক্ষিতে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব সোহরাব হোসাইন বলেছিলেন, ‘আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে। বাংলাদেশের অনেক জায়গায় এখনও রাজনৈতিক বিবেচনায় পরীক্ষার কেন্দ্র নির্ধারণ হয়। এটা বন্ধ করতে হবে।’

শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, অনেকে পরীক্ষা কেন্দ্রে পর্যাপ্ত বেঞ্চ নেই। থাকলেও নির্ধারিত মাপের বেঞ্চে পরীক্ষা নেওয়া হয় না। অনেক পরীক্ষা কেন্দ্রের নিজস্ব ভবন ও সীমানা দেওয়াল নেই। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ নেই। মূল কেন্দ্র থেকে ভেন্যু কেন্দ্রের দূরত্ব অনেক। এসব কেন্দ্রে প্রশ্ন নেওয়ার সময় ফাঁস হয়ে যায়। পরীক্ষার হলে পরীক্ষার্থীরা বিশেষ সুবিধা পেয়ে থাকেন।

শিক্ষকরা জানিয়েছেন, পরীক্ষা কেন্দ্রে বেঞ্চ সংকটের কারণে কম দূরত্বের প্রতিষ্ঠান থেকে বেঞ্চ আনা হয়। এতে ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠদানে প্রভাব পরে। পরীক্ষার সময় পাঠদান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা প্রাইভেট ও কোচিংয়ে ঝুকে পরে। অনেক অভিভাবকরা নিরুপায় সন্তানকে কোচিংয়ে পাঠান। কিন্তু দরিদ্র অভিভাবকরা এ দৌড়ে পিছিয়ে পড়েন। ফলে ঝরে পড়ে অনেক শিক্ষার্থী।



আন্তঃশিক্ষাবোর্ড সমন্বয় সাব কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মু. জিয়াউল হক সরকারের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে আজকালের খবরকে বলেন, ‘আমাদের দীর্ঘ দিনের দাবি ছিল পরীক্ষার জন্য আলাদা ভবন নির্মাণের। গ্রাম-গঞ্জে পরীক্ষা নিতে আমাদের নানা ধরনের সমস্যায় পড়তে হয়। সেসব সমস্যা আর হবে না। পরীক্ষার মধ্যে স্বচ্ছতা চলে আসবে। এছাড়া কেন্দ্রীয়ভাবে ডিজিটাল পদ্ধতিতে প্রশ্ন ছাপিয়ে অনলাইনে কেন্দ্রে প্রশ্নপত্র পাঠানের উদ্যোগটি বাস্তবায়ন সহজ হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘পরীক্ষা চলাকালীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে না। যে যার মতো পরীক্ষা ও ক্লাসে অংশ নিবে।’





নাম

অর্থ ও বাণিজ্য,235,আন্তর্জাতিক,731,কাপাসিয়া,342,কালিয়াকৈর,417,কালীগঞ্জ,253,খেলা,644,গাজীপুর,3936,চাকরির খবর,33,জয়দেবপুর,1581,জাতীয়,2957,টঙ্গী,911,তথ্যপ্রযুক্তি,512,ধর্ম,196,পরিবেশ,136,প্রতিবেদন,310,বিজ্ঞান,55,বিনোদন,697,ভিডিও,58,ভিন্ন খবর,142,ভ্রমন,115,মুক্তমত,27,রাজধানী,829,রাজনীতি,1055,লাইফস্টাইল,283,শিক্ষাঙ্গন,398,শীর্ষ খবর,10756,শ্রীপুর,481,সাক্ষাৎকার,12,সারাদেশ,649,স্বাস্থ্য,212,
ltr
item
GazipurOnline.com: পরীক্ষাকালীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আর বন্ধ নয়
পরীক্ষাকালীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আর বন্ধ নয়
https://3.bp.blogspot.com/-Hn3thZRbvFI/W0eTRkq21OI/AAAAAAAAZBs/AAEuSM-DWDgtpfvVQ7sWZTpxLKrwSAipACLcBGAs/s400/edu.jpg
https://3.bp.blogspot.com/-Hn3thZRbvFI/W0eTRkq21OI/AAAAAAAAZBs/AAEuSM-DWDgtpfvVQ7sWZTpxLKrwSAipACLcBGAs/s72-c/edu.jpg
GazipurOnline.com
https://www.gazipuronline.com/2018/07/exam.html
https://www.gazipuronline.com/
https://www.gazipuronline.com/
https://www.gazipuronline.com/2018/07/exam.html
true
13958681640745950
UTF-8
Loaded All Posts Not found any posts VIEW ALL Read More Reply Cancel reply Delete By প্রচ্ছদ PAGES POSTS View All RECOMMENDED FOR YOU LABEL ARCHIVE SEARCH ALL POSTS Not found any post match with your request Back Home Sunday Monday Tuesday Wednesday Thursday Friday Saturday Sun Mon Tue Wed Thu Fri Sat January February March April May June July August September October November December Jan Feb Mar Apr May Jun Jul Aug Sep Oct Nov Dec just now 1 minute ago $$1$$ minutes ago 1 hour ago $$1$$ hours ago Yesterday $$1$$ days ago $$1$$ weeks ago more than 5 weeks ago Followers Follow THIS PREMIUM CONTENT IS LOCKED STEP 1: Share. STEP 2: Click the link you shared to unlock Copy All Code Select All Code All codes were copied to your clipboard Can not copy the codes / texts, please press [CTRL]+[C] (or CMD+C with Mac) to copy