শুধু বিশ্বকাপ নয়, যেকোনো আসরের তৃতীয় স্থানের জন্য খেলা যেকোনো দলের জন্যই বেদনার। তারপরও ফাইনাল খেলতে না পারার দুঃখ ভুলে মাঠে নামতে হয় নিয়মরক্ষার জন্য। এবারের বিশ্বকাপের তৃতীয় হওয়ার লড়াইয়ে শনিবার মাঠে নামছে ইংল্যান্ড ও বেলজিয়াম। সেন্টপিটার্সবার্গে তৃতীয়স্থান নির্ধারণী ম্যাচ শুরু হবে বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায়। ফাইনাল খেলতে না পারলেও ম্যাচ জিতে ভালোভাবে বিশ্বকাপ শেষ করার কথা জানালেন ইংল্যান্ডের কোচ গ্যারেথ সাউথগেট ও বেলজিয়ামের ম্যানেজার রবার্তো মার্টিনেজ।
এবারের বিশ্বকাপ ফুটবলে ‘জি’ গ্রুপেই ছিল ইংল্যান্ড ও বেলজিয়াম। সেখানে অন্য দুই দল তিউনিশিয়া ও পানামা। তিউনিশিয়া-পানামার বিপক্ষে নিজেদের প্রথম দুই ম্যাচে জয় তুলে নিয়ে বিশ্বকাপের শেষ ষোলো নিশ্চিত করে ইংল্যান্ড ও বেলজিয়াম। যে কারণে গ্রুপ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচটি গুরুত্বহীন হয়ে পড়ায় ইংল্যান্ড ও বেলজিয়াম উভয় দলই ব্যাপক পরিবর্তন এনে মাঠে নামে। ম্যাচে ইংল্যান্ড আটটি ও বেলজিয়াম নয়টি পরিবর্তন নিয়ে মুখোমুখি হয়েছিল। যেহেতু শেষ ষোলো নিশ্চিত হয়ে গেছে, তাই রিজার্ভ বেঞ্চ ঝালিয়ে নিতেই এমন পরিকল্পনা করেন ইংল্যান্ড ও বেলজিয়ামের কোচ। দলের মূল খেলোয়াড়দের ছাড়া খেলতে নেমে ১-০ গোলে জয় পায় বেলজিয়াম। হারের ক্ষত খুব বেশি গভীর ছিল না ইংল্যান্ডের।
তবে ইতোমধ্যে কষ্টের সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছে ইংল্যান্ড। কারণ সেমিফাইনালে গিয়ে ফাইনালে খেলার স্বাদ থেকে বঞ্চিত হন তারা। ক্রোয়েশিয়ার কাছে ২-১ গোলে হেরে বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল থেকে বিদায় ঘটে ইংলিশদের। বিশ্বকাপ ফুটবল ইতিহাসে নিজেদের দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনালে উঠতে ব্যর্থ ইংল্যান্ড। বিশ্বকাপ আসরে সর্বশেষ ১৯৬৬ সালে ফাইনাল খেলেছিল ইংলিশরা। ওইবার শিরোপা জিতেছিল তারা।
তবে দ্বিতীয়বারের বিশ্বকাপ জয়ের লক্ষ্য নিয়ে এবারের আসর শুরু করে ইংল্যান্ড। তিউনিশিয়া ও পানামাকে হারানোর পর শেষ ষোলোর টিকিট পায় তারা। বেলজিয়ামের কাছে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচ হারলেও তেমন ক্ষতি হয়নি ইংলিশদের। কারণ শেষ ষোলোতে আগেই পা দিয়ে রেখেছিল তারা।
শেষ ষোলোতে কলম্বিয়ারকে প্রতিপক্ষ হিসেবে পায় ইংল্যান্ড। ১২০ মিনিটের লড়াই ১-১ গোলে ড্র করে টাইব্রেকারে ৪-৩ ব্যবধানে জয় পায় ইংলিশরা। বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো টাইব্রেকারে জয় পায় হ্যারি কেইনের দল। এর আগে তিনবার টাইব্রেকারে হেরে নক-আউট পর্বে নিজেদের মিশন শেষ করে ইংল্যান্ড।
শেষ ষোলোর ম্যাচ জিতে কোয়ার্টার ফাইনালে সুইডেনের মুখোমুখি হয় ইংল্যান্ড। হেসেখেলেই জয় তুলে নেয় তারা। ২-০ গোলে জিতে সেমিতে পা রাখে হ্যারি কেইনরা দল। তবে শেষ চারে এসে ধূলিসাৎ হয়ে গেল ইংল্যান্ডের স্বপ্ন। ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ১২০ মিনিটের লড়াইয়ের ম্যাচে ২-১ গোলে হার মানে ইংলিশরা। ফলে ১৯৬৬ সালের পর আবারও ফাইনাল খেলা থেকে বঞ্চিত হয় ইংল্যান্ড। তবে তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে জয়ী হয়ে এসব দুঃখ কিছুটা হলেও ভুলতে চায় ইংল্যান্ড। জয় দিয়ে বিশ্বকাপ শেষ করার লক্ষ্য তাদের। সেই সঙ্গে তৃতীয়স্থান নিয়ে বিশ্বকাপ শেষ করার কথা বললেন ইংল্যান্ডের কোচ সাউথগেট, আমাদের স্বপ্ন ভঙ্গ হয়েছে। এটি বলার অপেক্ষা রাখে না এটি কত বড় কষ্টের। কিন্তু আমাদের সামনে এখনও একটি ম্যাচ রয়েছে। এই ম্যাচ দিয়ে আমরা কোনো স্বপ্নপূরণ করতে পারব না। তারপরও এ ম্যাচটি অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ, কারণ ম্যাচটি বিশ্বকাপের। বিশ্বকাপে একটি ম্যাচ জয় করা মানে, অনেক বড় কিছু। তাই তৃতীয় স্থানের ম্যাচ জিতে আমরা ভালোভাবে বিশ্বকাপ শেষ করতে চাই। ছেলেদের মনের অবস্থা মোটেও ভালো নয়। তবে তারা বাস্তবতার সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিয়েছে। বেলজিয়ামের বিপক্ষে খেলার জন্য মুখিয়ে আছে পুরো দল। আশা করব, তৃতীয় হয়েই বিশ্বকাপ শেষ করতে পারব আমরা।
ইংল্যান্ডের মতো তৃতীয়স্থান চায় বেলজিয়ামও। তবে কাজটি কঠিন হবে বলে মনে করেন বেলজিয়ামের কোচ মার্টিনেজ। তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য ছিল সেমিফাইনাল খেলা। আমরা আমাদের লক্ষ্যপূরণ করতে পেরেছি। তারপরও ছেলেদের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে আমাদের ফাইনালে যাওয়ার ভালো সুযোগ তৈরি হয়েছিল; কিন্তু ভাগ্য আমাদের সঙ্গে ছিল না। তাই সেমিফাইনালের গণ্ডি আমরা পেরোতে পারলাম না। তবে বিশ্বকাপের শীর্ষ চারের মধ্যে আমরা থাকতে পারব। আমার মনে হয়, এটি আমাদের জন্য দুর্দান্ত অর্জন। এই অর্জনকে আরও ভালোভাবে শেষ করার উপায় এখন আমাদের সামনে। তৃতীয়স্থান নির্ধারণী ম্যাচে জিততে পারলে আমরা চ্যাম্পিয়ন-রানার্সআপ দলের পরই থাকতে পারব। তাই এই সুযোগটা আমরা নিতে চাই। তবে কাজটি বেশ কঠিন হবে। ইংল্যান্ড পুরো টুর্নামেন্টে ভালো খেলেছে। তাদের হারানো সহজ হবে না। তবে আমরা তৃতীয় হওয়ার লক্ষ্য নিয়েই মাঠে নামব।
গ্রুপ পর্বের দুরন্ত ফুটবল খেলে বেলজিয়াম। শেষ ষোলোতে এশিয়ার দল জাপানের বিপক্ষে ৫২ মিনিটের মধ্যে দুই গোল হজম করে টুর্নামেন্ট শেষ করার অবস্থা তৈরি হয় বেলজিয়ামের সামনে। কিন্তু ভড়কে যায়নি বেলজিয়াম। ৬৯ থেকে ৯৪ মিনিটের মধ্যে তিন গোল করে এবারের আসরের সবচেয়ে চমকপ্রদ জয় তুলে কোয়ার্টার ফাইনালে পা রাখে বেলজিয়াম।
শেষ আটে আরও বড় চমক দেখায় দেশটি। পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিলকে উড়িয়ে দেয় তারা। ৩১ মিনিটের মধ্যে ২-০ গোলে এগিয়ে গিয়ে সেমিফাইনালের পথ পরিষ্কার করে ফেলে বেলজিয়াম। শেষ পর্যন্ত ২-১ গোলে ম্যাচ জিতে ১৯৮৬ সালের পর আবারও সেমিফাইনালে উঠে তারা। কিন্তু সেখানে ফ্রান্সের কাছে মাত্র এক গোলে হারে বেলজিয়াম। ফাইনালে উঠতে না পারলেও জয় দিয়ে বিশ্বকাপ শেষ করার দারুণ এক সুযোগ এখন বেলজিয়ামের সামনে। ১৯৮৬ বিশ্বকাপেও তৃতীয় হয়ে টুর্নামেন্ট শেষ করেছিল বেলজিয়াম। তখন ফ্রান্সের কাছে ৪-২ গোলে হেরে চতুর্থ হয়েছিল বেলজিয়াম। বেলজিয়ামের অভিজ্ঞতা থাকলেও বিশ্বকাপে কখনও তৃতীয়স্থান নির্ধারণী ম্যাচ খেলেনি ইংল্যান্ড।
ইংল্যান্ড ও বেলজিয়াম এ পর্যন্ত ২২ বার মুখোমুখি হয়েছে। এর মধ্যে জয়ের পাল্লা ভারী ইংল্যান্ডের। ইংলিশরা ১৫ বার ও বেলজিয়াম তিনবার জয় পায়। চার ম্যাচ ড্র। এবারের আসরে গ্রুপ পর্বের আগে বিশ্বকাপে আরও দুইবার দেখা হয়েছিল ইংল্যান্ড ও বেলজিয়ামের। ১৯৫৪ ও ১৯৯০ সালে। ১৯৫৪ সালে ইংল্যান্ড-বেলজিয়ামের ম্যাচটি ৪-৪ গোলে ড্র হয়। ১৯৯০ সালে বেলজিয়ামকে ১-০ গোলে হারায় ইংল্যান্ড।