উঠেন উঠেন বলে- মাহমুদা বীথি: বারিধারায় একটা বেসরকারি গণমাধ্যমে চাকরি করি। থাকি ফার্মগেট এলাকায়। কর্মস্থলে আসতে প্রতিদিন বাসে যাতায়াত করতে হয়। কিন্তু ফার্মগেট থেকে অফিসের এই রুটে হাতে গোনা দু’একটি বাস আসা-যাওয়া করে।
যার একটি হলো মতিঝিল বনানী ট্রান্সর্পোটের ছয় নম্বর, অন্যটি দেওয়ান পরিবহন। কিছুদিন আগে দেওয়ান পরিবহনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী যৌন হয়রানির শিকার হয়েছিল।
ওই ঘটনায় ভিকটিম ছাত্রীটি এ নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাসও দেয়। সেই থেকে দেওয়ান বাসে উঠা বাদ দিয়েছিলাম। অগত্যা ছয় নম্বরেই উঠতে হয়। আর ছয় নম্বরের কথা সবাই হয়তো জেনে থাকবেন।
একদিনের ঘটনা… আমি মহিলা সিটের দ্বিতীয় সারির পাশে দাঁড়িয়ে আছি। হঠাৎ এক মেয়ের চিৎকার, ‘তোর ঘরে মা বোন নাই’। কথায় কথায় বেশ কথা কাটাকাটি।
আশপাশ থেকে শোনা যাচ্ছে, পাবলিক পরিবহনে একটু আধটু হাত লাগবেই। সহ্য করতে না পারলে বাসে চড়েন কেন? মেয়েটি আমার পাশে এসে দাঁড়ালো।
জিজ্ঞেস করলাম আপু কী হয়েছিল? তিনি যা বললেন আমি রীতিমত চমকে গেলাম। আরও বেশি চমকে গেলাম এই শুনে যে, ভদ্রবেশী এক যাত্রীর দ্বারাই নাকি তিনি যৌন হেনস্তার শিকার হয়েছেন।
শুধু ওই মেয়েটিই নয়, গণপরিবহনে প্রতিদিন কোনো না কোনো মেয়ে এ ধরনের হয়রানির শিকার হরহামেশাই হয়ে থাকেন। সামাজিকতার ভয়ে যার অধিকাংশ ঘটনায় প্রকাশ করেন না নির্যতিত নারীরা।
সম্প্রতি কয়েকজন নারী লোকলজ্জ্বার ভয় আর কলঙ্ক উপক্ষো করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সেই সব অপ্রীতিকর ঘটনা প্রকাশ করেছেন।
আর তা দেখে যারা উদ্বেগ প্রকাশ করছেন তারা হয়তো জানেনই না যে, গণপরিবহনে নারীরা প্রতিনিয়তই হয়রানির শিকার হন। হয় পুরুষ যাত্রী দ্বারা নয়তো পরিবহন শ্রমিকদের দ্বারা।
তিতুমীর কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের ছাত্রী পুষ্পিতা (ছদ্মনাম) বলেন, ‘বাসে উঠতে গেলে আজকাল খুব ভয় লাগে। উঠার সময় দেখা যায় উঠেন উঠেন বলে গায়ে হাত দেয় হেলপাররা, হাত ধরে, উঠার সময় পিঠেও হাত দেয়। যদি বলি মামা হাত ধরা লাগবে না। তখন হাসাহাসি করে। কেমন অশ্লীল চাহনি দিয়ে তাঁকায়, যা দেখতেই খুব বাজে লাগে।’
বাংলা কলেজের ইতিহাস বিভাগের ছাত্রী রুখসানা বলেন, ‘শুধু বাসের হেলপারদের দ্বারা নয়, পুরুষ যাত্রীদের দ্বারাও হয়রানির শিকার হতে হয়। বাসে মেয়েরা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলে তো কথাই নেই। ছোঁক ছোঁক করে শরীরের সঙ্গে শরীর লাগিয়ে দিতে চায়।’
তিনি বলেন, তাছাড়া পুরুষ যাত্রীর পাশে বসলে সারাক্ষণ তটস্থ হয়ে থাকতে হয়, কোনো ছুতো পেলেই গায়ের সঙ্গে গা লাগাতে চায়।আর যাত্রার সময় বাস একটু এদিক ওদিক করলেই গায়ের ওপর এসে পড়তে চায়।
তিনি বলেন, অনেক সময় তাল সামলাতে না পেরে এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে। কিন্তু ওইসব পরিস্থিতিতে মেয়েরা ঠিকই বুঝতে পারে। আর সহযাত্রীর লোভী চোখের চাহনিও মেয়েরা সহজে চিনে ফেলে।
গত সপ্তাহে সুপ্রভাত পরিবহনের বাসে চড়ে ভয়াবহ অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছে ভিকারুন্নিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের এক ছাত্রী। আব্দুল্লাহপুর থেকে মায়ের সঙ্গে রামপুরা আসার জন্য সুপ্রভাত পরিবহনের বাসে চড়ে সে।
মাঝপথে বাসটির বাতি নিভিয়ে দেয়া হয়। রামপুরায় জ্যামে পড়লে মা-মেয়ে বাস থেকে নামতে চান। কিন্তু মা সহজে নামতে পারলেও ওই ছাত্রী হেনস্থার শিকার হন।
সে নামতে চেষ্টা করলে তার হাত টেনে ধরে ওই বাসের হেলপার। তখন হাতে থাকা টিফিন বক্স দিয়ে পরিবহন কর্মীকে আঘাত করে বাস থেকে লাফিয়ে নামে ওই ছাত্রী। বাসটি ৪/এ নম্বর রুটে সদরঘাট থেকে গাজীপুর অবধি চলাচল করে।
সেদিন ওই ছাত্রীর হাতে থাকা একটা স্টিলের টিফিন তাকে বাঁচিয়ে দিলেও প্রতিনিয়ত পরিবহন কর্মীদের হাতে হয়রানির শিকার হচ্ছে হাজারও নারী। কিন্তু এর প্রতিরোধ বা প্রতিকার কী জানা আছে কারও?
কড়া অবস্থানে রয়েছে প্রশাসন। তারপরেও দিনদিন বেড়ে চলা এ হয়রানি কিছুতেই কমিয়ে আনা যাচ্ছে না। আর বিষয়টি দেখেও যেন না দেখার ভান করছেন পরিবহন মালিকরা।
যদিও বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, রেডিও ও টেলিভিশনে ব্যাপক সচেতনতা সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে। তারপরেও কী এর কোনো সুফল পাওয়া যাচ্ছে? নাকি উসকে দেয়া হচ্ছে অপরাধীদের। এ নিয়েও নানা জনের রয়েছে নানামত।
গলাকাটা এক বন্ধু পড়েছিল মেঝেতে, রশিতে ঝুলছিল আরেকজন!
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে দুই যুবকের গলাকাটা ও রশিতে ঝুলানো লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহতরা দুজনই বন্ধু বলে জানা গেছে। বৃহস্পতিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে সোনারগাঁওয়ের কাঁচপুরের কাজীপাড়া এলাকার একটি মেস থেকে দুজনের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
নিহত দুজন হলেন- নীলফামারীর ডোমার জোড়াবাড়ির এরশাদুল ইসলামের ছেলে মিনারুল (২৭) এবং একই থানার কামানিয়া গ্রামের দিলু মিয়ার ছেলে মজনু (৩০)। এরা দুজন বন্ধু বলে জানা গেছে। এদের মধ্যে মিনারুলের গলাকাটা ছিল এবং মজনুর লাশ রশিতে ঝুলানো ছিল।
এর আগে সকাল ১০টায় প্রতিবেশিরা লাশ দেখতে পেয়ে পুলিশকে জানালে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে। ঘটনার পর সকাল থেকেই বাড়ির মালিক হাসিনা বেগম ও নিহতদের আত্মীয় বাদশা মিয়া পলাতক রয়েছেন।
জানা গেছে, বুধবার রাতে দুই বন্ধু বেড়াতে আসে সোনারগাঁওয়ে সোনাপুর কলাবাগান এলাকার হাসিনা বেগমের বাড়িতে। এ বাড়িতে ভাড়া থাকেন তাদের আত্মীয় ও বন্ধু বাদশা মিয়া। নীলফামারীর রোমানিয়ার গোপনাথ গ্রামে বাদশা মিয়ার বাড়ি।
এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে সোনারগাঁ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ফরিদ হোসেন জানান, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
পুলিশের ধারণা, বেড়াতে এসে রাতে দুজনের মধ্যে কোনো কিছু নিয়ে কথা কাটাকাটি হয় এবং একপর্যায়ে মিনারুলকে হত্যার পর অনুশোচনা থেকে নিজেই আত্মহত্যা করেন মজনু।