আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশ বারবার আম্পায়ারদের ভুল সিদ্ধান্তের শিকার হয়েছে। বেশিরভাগ সময়ই বিতর্কিত সিদ্ধান্তগুলো এসেছে শিরাপা নির্ধারণী কিংবা পরবর্তী ধাপে ওঠার ম্যাচে। ২০১২ সালে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে বিতর্কিত স্ট্যাম্পিংয়ের শিকার হয়েছিলেন সাকিব, এবার দুবাইয়ে এশিয়া কাপের ফাইনালে লিটন দাস।
আম্পায়াররা যেন তাদের ভুল সিদ্ধান্তগুলো শক্তিশালী দলগুলোর বিপক্ষে ভুল করেও দেন না। প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক কোনো আসরে শিরোপার খুব কাছে গিয়েও স্বপ্নের ট্রফি ঘরে তুলতে পারলেন না মাশরাফিরা। আগের দুই আসরের মতো এবারও কূলে এসে তরী ডুবাল টাইগারদের। এবারও হলো না বাংলাদেশের এশিয়া কাপ জয় করা। দুবাইয়ে লো স্কোরিং উত্তেজনা ছড়ানো জিততে জিততে ফাইনালে হেরে গেল বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশকে হারিরে এশিয়া কাপ নিজেদের দখলেই রাখল ভারত। অপরদিকে তৃতীয়বারের মতো ফাইনালে উঠেও এশিয়া কাপ জয়ের স্বপ্ন ভেঙে গেল টাইগারদের।
এশিয়া কাপে এবার শ্রীলংকাকে প্রথমে হারিয়ে শুরু করা টাইগাররা সুপার ফোরে পাকিস্তান আর আফগানিস্তানকে হারিয়ে চমক দিয়ে ফাইনালে উঠেছিল। কিন্তু ফাইনাল ম্যাচে এসে হঠাৎ ছন্দপতন বাংলাদেশের। ব্যাট হাতে লিটন দাস সেঞ্চুরি করলেও অন্যারা ছিল ব্যর্থ। ফলে জয়ের জন্য ফাইনাল ম্যাচে ভারতকে ২২৩ রানের টার্গেট দেয় বাংলাদেশ। এত কম রান নিয়েও শেষ পর্যন্ত জয়ের জন্য কঠিন লড়াই করেছেন বোলাররা। তবু শেষ রক্ষা হয়নি। ভারত শেষ বল পর্যন্ত খেলে ম্যাচ জিতে নেয় তিন উইকেটে।
পুরো আসরে ওপেনাররা চরম ব্যর্থ। তার ওপর এক নম্বর ওপেনার তামিম ইকবাল প্রথম দিন শ্রীলংকার সঙ্গে ম্যাচে কব্জিতে বলের আঘাতে আহত হয়ে চিকিৎসার জন্য লন্ডনে। লিটন দাসের সঙ্গে নাজমুল হোসেন শান্ত আর সৌম্য সরকারকে দিয়ে ট্রাই করানো হয়েছে। দুজনই ব্যর্থতার ঘানি টেনেছেন। আগের পাঁচ ম্যাচে উদ্বোধনী জুটির সর্বোচ্চ সংগ্রহ ছিল ১৬। ফলে ফাইনালে চমক হিসেবে উদ্বোধনী জুটিতে পরবির্তনের চিন্তা। অধিনায়ক মাশরাফি আগের দিনই বলেছিলেন, কখনো ওপেন করেনি, এমন কেউ লিটন দাসের সঙ্গী হবে। লিটন দাসের সঙ্গে ব্যাট হাতে নতুন উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানের দেখা মিললো।
আগের পাঁচ খেলায় শুরুতে ব্যাকফুটে চলে গিয়ে মিডল অর্ডারের দৃঢ়তায় আবার খাদের কিনারা থেকে উঠে দাঁড়ানো দল ফাইনালে এসে পেল দুরন্ত সূচনা। মিডল অর্ডাররা দায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যাটিংয়ে স্কোরলাইনকে দীর্ঘ আর মোটাতাজা করা হলো না। যেখানে অনায়াসেই রান ২৬০ পেরিয়ে যাওয়ার কথা, সেখানে মাশরাফির দল থামলো ২২২ রানে। পরিকল্পনাহীন ব্যাটিংয়ে ভেস্তে গেল স্বপ্নিল সূচনা। ১২০ রানে প্রথম উইকেট খোয়ানো দল অলআউট ২২২ রানে। মানে ১০২ রানে পতন ১০ উইকেটের।
লিটনের বিতর্কিত আউট নিয়ে তোলপাড়!
লিটন কুমার দাসকে যখন বিতর্কিতভাবে আউট দেওয়া হলো থার্ড আম্পায়ার রড টাকারের পক্ষ থেকে, তখন বাংলাদেশের রান ছিল ১৮৮। তখনও ৫৪ বল বাকি ছিল বাংলাদেশের হাতে। তার সঙ্গে জুটিতে তখন ছিলেন সৌম্য সরকার। দুজন মিলে তখন ৩৭ রানের জুটি গড়ে ফেলেছিলেন। টিভি আম্পায়ার নানা অ্যাঙ্গেল থেকে দেখলেন লিটনের পা লাইন স্পর্শ করেছে কি না। বারবারই দেখা যাচ্ছিল, স্ট্যাম্প ভাঙার আগেই লাইন স্পর্শ করে ফেলেছিল। এর আগে ইমরুল কায়েসকে এলবি দেওয়ার সময় রিভিউ নেওয়া হলে মাত্র দুবার দেখে সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছিল। বল আউটসাইড লাইনে থাকার পরও আম্পায়ার্স কল বহাল রাখা হলো শুধু আম্পায়ারের সম্মান রক্ষার্থে। অথচ লিটনের পায়ের পজিশন শেষ পর্যন্ত ফোর এক্স জুম ক্যামেরা দিয়ে দেখা হলো। জুম ক্যামেরা দিয়ে প্রথমবার দেখার পরই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
তবু টিভি আম্পায়ার রড টাকার তিনবার দেখলেন জুম ক্যামেরা দিয়ে, ম্যাগনিফাইং গ্যসের মতো করে। স্ট্যাম্পে রাখা ক্যামেরা দিয়েও দেখা হলো। সব জায়গাতেই দেখা গেলো লিটনের পা বিহাইন্ড দ্য লাইন ছিল না। লিটন আরেকটু সময় মাঠে থাকতে পারলে যে রানটা বেশি করতেন, হয়তো বা শেষ পর্যন্ত সে রানের ব্যবধানেই জিততো বাংলাদেশ। হতে পারতো এশিয়া কাপের নতুন চ্যাম্পিয়ন। নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথম কোনো ট্রফি জয়ের স্বাদ পেতো মাশরাফিরা। কোনোটাই হলো না, লিটনকে বিতর্কিতভাবে আউট করে দেওয়ার কারণে। যদিও লিটন ছাড়া বাংলাদেশের আর কোনো ব্যাটসম্যানই দাঁড়াতে পারেনি। বড় কোনো স্কোর করতে পারেননি। লিটনের বিতর্কিত আউটের পর বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরাও এ পরাজয়ের জন্য তীরে এসে তরি ডোবা কিংবা শেষ মুহূর্তে স্বপ্ন ভঙ্গের জন্য অন্যতম দায়ী।
তবু টিভি আম্পায়ার ঘোষণা করলেন এটা আউট। বেনিফিট অব ডাউট সবসময় যায় ব্যাটসম্যানের পক্ষে। অথচ এ ম্যাচে গেলো সেটা বোলারের পক্ষে। ভারতের কল্যাণে আইসিসিও পুরনো আইন পরিবর্তন করে নতুন নতুন রূপে উপস্থাপন করছে। স্যাটেলাইটের কল্যাণে গোটা ক্রিকেট বিশ্ব দেখল কীভাবে আরেকবার নোংরামির শিকার হলো বাংলাদেশ।
লিটন দাসকে বিতর্কিত সিদ্ধান্ত দিয়ে আউট দেওয়ার পরই সোশ্যাল মিডিয়ায় এ নিয়ে ঝড় ওঠে। পক্ষে-বিপক্ষে শুরু হয় অনেক কথা লেখা। আইসিসির টুইটেই রিটুইট হয়েছে অসংখ্য। নেহা নামে একজন টুইটার ব্যবহারকারী লিখেছেন, আমরা বাংলাদেশ বনাম ভারত ম্যাচ দেখতে চাই, বাংলাদেশ বনাম আইসিসি ম্যাচ নয়।’
পরে আরও একটি টুইটে তিনি লিখেন, যদি এখানে আউট কিংবা নট আউট সম্পর্কে কোনো সন্দেহ থাকে, তাহলে বেনিফিট অব ডাউট নিয়মে সিদ্ধান্তটা ব্যাটসম্যানের পক্ষেই যায় সবসময়। নিয়মটা কোনোভাবেই ভারতের একার জন্য নয়। মিরাজ রহমান নামে একজন লিখেছেন, এটা কোনোভাবেই আউট নয়। রড টাকারের খুবই বাজে আম্পায়ারিং। আম্পায়ারের পক্ষ থেকে একটা বাজে আউটের সিদ্ধান্তের শিকার হলো বাংলাদেশ এবং এটা গেলো ভারতেরই পক্ষে। এটা কি ইনজাস্টিস নয়? লোকেশ বাট নামে একজন লিখেছেন, বেশ কয়েকটি অ্যাঙ্গেল থেকে দেখেই তো বোঝা যাচ্ছে পা লাইনের বাইরে ছিল না। আম্পায়ার কি কোনোভাবে অন্য কোনো অ্যাঙ্গেল দিয়ে দেখে প্রমাণ করতে পারবেন যে পা লাইনের বাইরে ছিল?