![]() |
প্রতারণার অভিযোগে গাজীপুর সদর এলাকা থেকে মঙ্গলবার এই সাতজনকে গ্রেফতার করা হয় |
রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকায় ভুয়া কোম্পানি ও তার শাখা খুলে লোকজনকে চাকরি দেওয়ার নাম করে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে সাতজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ- সিআইডি।
২৯ অক্টোবর, সোমবার গাজীপুরের সদর এলাকার একটি ভবন থেকে ওই সাতজনকে গ্রেফতার করা হয়।
৩০ অক্টোবর, মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে রাজধানীর মালিবাগস্থ সিআইডির কার্যালয়ে এ তথ্য জানান সিআইডির ঢাকা মহানগর দক্ষিণের বিশেষ পুলিশ সুপার কবির হোসেন।
গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিরা হলেন- ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলার পাহাড়পুর গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে ইসমাইল হোসেন (৩০), পাবনার ইশ্বরদীর জয়নগর গ্রামের রেজাউল হকের ছেলে আরিফুল হক পলাশ (৩০), পাবনার একই গ্রামের আব্দুল সাদ্দাম হোসাইন (৩০), নাটোরের বড়াইগ্রামের গড়ামাটি গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে লিটন রনি (২৫), নাটোরের একই উপজেলার মাদ্রাসা মোড় গ্রামের মনতাজ আলীর ছেলে আবদুল কাদের (৩৫), সিরাজগঞ্জ কাজিপুরের জুমার খুকসিয়া গ্রামের আব্দুল হামিদের ছেলে আবদুস ছালাম (২৬) ও নেত্রকোনার কলমাকান্দার খারনৌ গ্রামের গিয়াস উদ্দিনের ছেলে মাসুদ রানা (৩১)।
সে সময় তাদোর কাছ থেকে ১০টি এলইডি টেলিভিশন, একটি রাইস কুকার, সিরামিক্সের ডিনারসেট, একটি ব্যাংকের বিভিন্ন হিসাব নম্বরের রশিদ বই, ডিজিটাল সিল উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ সুপার কবির হোসেন জানান, এই প্রতারক চক্রের সদস্যরা বেকার যুবকদের চাকরি দেওয়ার নাম করে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তারা ‘লাইভ ওয়ে’ নামে একটি ভুয়া কোম্পানিতে চাকরি দেওয়ার নাম করে টাকা হাতিয়ে নেয়।
কবির হোসেন আরও জানান, ওই নামে তারা ভুয়া কোম্পানি খোলার কয়েক বছর পর শেয়ার বাজারে ব্যবসার জন্য চেষ্টা করেছিল। চক্রটি ভুয়া কোম্পানির নামের লোগো দিয়ে বিভিন্ন কোম্পানির পণ্য তারা নিজের বলে চালিয়ে দিয়ে চাকরিপ্রত্যাশাীদের হাতে তুলে দিতো।
তিনি জানান, এই প্রতারক চক্রটি ২০১০ সাল থেকে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে লোকজন সংগ্রহ করতো। যারাই তাদের কাছে চাকরির জন্য আসতে, তাদের কাছে তারা ৪০-৫০ হাজার টাকা নিয়ে রাখতে। আর বলত, ‘তোমাদের চাকরি হয়ে যাবে, এজন্য একটি ১৫ দিনের ট্রেনিং করতে হবে’। চাকরিপ্রত্যাশীরাও তাদের কথামতো ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের কথিত ট্রেনিং করতো। আসলে তাদের ওইসব ট্রেনিংয়ে তেমন কিছু শেখানো হতো। নানা বিষয় আজগুবি বলে সময় কাটানো হতো।
পরে ট্রেনিং শেষ হলে চাকরিপ্রত্যাশীরা যখন চাকরি চাইত, তখন তারা বলত- ‘তোমাদের চাকরি দেওয়া হবে। তবে অবশ্যই দুই থেকে তিনজন নতুন করে আমাদের দিতে হবে। তোমরা লোকজন নিয়ে আসলে তারা যে টাকা দেবে, তার কমিশন তোমাদের দেওয়া হবে’। তাদের কথা মতো যারা লোকজন নিয়ে আসত, তারা কমিশনও পেত।
আর যারা চাকরি চাইত, তাদের ভুয়া কোম্পানির লোগো লাগানো বিভিন্ন পণ্য হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলা হতো- ‘এটার দাম এত টাকা’। এভাবে তারা গ্রাম থেকে আসা চাকরিপ্রত্যাশী সহজ-সরল মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করছিল। এ কাজটি তারা দীর্ঘদিন ধরে করলেও প্রকাশ পায়নি। তার কারণ হলো, তারা প্রত্যেকটি চাকরিপ্রত্যাশীর স্বাক্ষর সাদা কাগজে নিয়ে রাখতে, আর ভয় দেখিয়ে বলত- ‘যদি তোমরা এসব বিষয় কাউকে বলো, তবে বিপদে পড়বে’।
তাদের দেখানো ভয়ে অনেকে এতদিন মুখ বন্ধ করে থাকলেও সম্প্রতি কয়েকজন প্রতারিত যুবক সিআইডির কাছে বিষয়গুলো জানালে তারা অভিযান শুরু করে। প্রথম অভিযান করা হয় গত ২৫ সেপ্টেম্বর রাজধানীর দক্ষিণখান এলাকায়। সে এলাকায় তারা একটি এজেন্সির অফিস খুলে বসেছিল। সেই অফিস থেকে জসিম উদ্দিন, তপন কুমার মালো এবং রাকিবকে গ্রেফতার করা হয়।
পরে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে গাজীপুর থেকে সাতজনকে গ্রেফতার করা হয় বলে জানান ঢাকা মহানগর দক্ষিণের বিশেষ পুলিশ সুপার কবির হোসেন। তিনি জানান, এ ঘটনায় গত ২৬ সেপ্টেম্বর দক্ষিণখান থানায় একটি প্রতারণা মামলা হয়েছে। সেই মামলায় ১৬ আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।