মা ইলিশের প্রজনন মৌসুম শেষ হওয়ায় সোমবার থেকে সারাদেশের নদীগুলোতে ইলিশ ধরা শুরু হয়েছে। এর আগে ৭ অক্টোবর থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত মোট ২২ দিন প্রজননক্ষেত্রের ৭ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকায় সকল প্রকার মাছ আহরণ, পরিবহন, মজুদ, বাজারজাতকরণ এবং ক্রয়বিক্রয় সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করেছিল সরকার।
জানা যায়, বর্তমান সরকার দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর ‘মাছে-ভাতে বাঙালি’র হারানো ঐতিহ্য পুনরুদ্ধারে মৎস্য খাতের উন্নয়নে ব্যাপক পদক্ষেপ নিয়েছে। “মৎস্য সংরক্ষণ আইন” অনুযায়ী ইলিশ সম্পদ সংরক্ষণে প্রতিবছরের মতো ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে সকল প্রকার মাছ আহরণ, পরিবহন, মজুদ, বাজারজাতকরণ এবং ক্রয়বিক্রয় সরকার সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।
এ সময় নিষেধাজ্ঞা অমান্য করলে ১-২ বছর মেয়াদে জেল কিংবা ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা করার নির্দেশ দেওয়া হয়। একই অপরাধ ২ বার করলে শাস্তি দ্বিগুণ হবে।
সূত্র জানায়, দেশের ১১ শতাংশের অধিক লোক প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মাছ ধরার ওপর নির্ভরশীল অর্থাৎ ৫ লাখ লোক ইলিশ আহরণে সরাসরি জড়িত এবং ২০-২৫ লাখ মানুষ ইলিশের পরিবহন, বিক্রয়, জাল ও নৌকা তৈরি, বরফ উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, রপ্তানি ইত্যাদি কাজে নানাভাবে জড়িত।
এর আগে ইলিশের জাটকা ধরা প্রতিরোধে প্রতিবছর নভেম্বর মাস থেকে ৮ জুন পর্যন্ত ২৫ সেন্টিমিটার বা ১০ ইঞ্চি সাইজের ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরে ৭০০০ বর্গক্ষেত্রবিশিষ্ট প্রজনক্ষেত্রসমূহ ছিল- মীরসরাই উপজেলার শাহের খালী হতে হাইতকান্দী পয়েন্ট, তজুমুদ্দীন উপজেলার উত্তর তজুমুদ্দীন হতে পশ্চিম সৈয়দপুর আওলিয়া পয়েন্ট, কলাপাড়া উপজেলার লতা চাপালি পয়েন্ট এবং কুতুবদিয়া উপজেলার উত্তর কুতুবদিয়া হতে গণ্ডামার পয়েন্ট। এ ছাড়াও চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, শরীয়তপুর, ঢাকা, মাদারীপুর, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, জামালপুর, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, মানিকগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, টাঙ্গাইল, মুন্সীগঞ্জ, খুলনা, সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, নাটোর, পাবনা, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও গোপালগঞ্জ জেলার সকল নদ-নদী।
উল্লেখ্য, ইলিশের জাটকাকে বড় ইলিশে পরিণত করার লক্ষ্যে দেশে ৬টি ইলিশের অভয়াশ্রম ঘোষণা করেছে সরকার। তা হচ্ছে- চাঁদপুর জেলার ষাটনল হতে লক্ষীপুর জেলার আলেকজান্ডার (মেঘনানদীর নিম্ন অববাহিকার ১০০ কিলোমিটার) পর্যন্ত, ভোলা জেলার মদনপুর/চর ইলিশা হতে চর পিয়াল (মেঘনানদীর শাহবাজপুর শাখানদীর ৯০ কি.মি.) পর্যন্ত, ভোলাজেলার ভেদুরিয়া হতে পটুয়াখালী জেলার চর রুস্তম (তেতুলিয়া নদীর ১০০ কি.মি.) পর্যন্ত, পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার সমগ্র আন্ধারমানিক নদীর ৪০ কি.মি. পর্যন্ত, শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া ও ভেদরগঞ্জ উপজেলা এবং চাঁদপুর জেলার মতলব উপজেলাস্থ পদ্মানদীর ২০ কি.মি. পর্যন্ত এবং বরিশাল জেলার হিজলা, মেহেন্দীগঞ্জ ও বরিশালসদর উপজেলার কালাবদর, গজারিয়া ও মেঘনানদীর প্রায় ৮২ কি.মি. পর্যন্ত এলাকা।