মোটামুটি খরচে দেশের বাইরে একটু বনে ঘেরা পাহাড়-পর্বতে ঘুরে-ফিরে, টলটলে সমুদ্রের পানিতে গোসল করে কিংবা একটু ভালো খাবার খেয়ে ভালো সময় কাটিয়ে আসতে চাইলে শ্রীলঙ্কা আপনার জন্য দুয়ার খুলে দাঁড়িয়ে আছে। শ্রীলঙ্কা ভারত মহাসাগরের একটি দ্বীপ রাজ্য। সেই পর্তুগীজ, ডাচ কিংবা ব্রিটিশ, সবাই তাদের শাসনকালে এই রাজ্যকে কাছে রেখেছে। মূলত এই অশ্রুফোঁটা আকৃতি দ্বীপটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর উর্বর জমির কারণে। তবে এখন শ্রীলঙ্কার মালিক দ্বীপটির বন্ধুসুলভ আদিবাসীগণ।
যাই হোক, শ্রীলঙ্কার পরিচয় দিয়ে নিলাম কিছুটা। এখন বলি কিভাবে যাবেন। শ্রীলঙ্কা এবং বাংলাদেশ দুটোই - সার্ক এর সদস্য হওয়ায়, আপনারা বাংলাদেশ থেকে অর্ধেক খরচে শ্রীলঙ্কার টুরিস্ট ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন। মাত্র ১৫ ডলারের বিনিময়ে ভিসার আবেদন করা যাবে, আর বেশ সহজেই ভিসা হাতে পেয়ে যাবেন অল্পদিনের মধ্যে। বিমান আপনাকে নামিয়ে দেবে শ্রীলঙ্কার কলম্বো বান্দারানাইকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। সেই থেকেই বলতে গেলে আপনার টুরিস্ট আকর্ষণ শুরু।
কোথায় যাবেন, কি করবেন?
আগেই বলেছি শ্রীলঙ্কার মালিক এখন তার আদি বন্ধুসুলভ জাতি। আপনার চলাফেরায় কোনো সমস্যা হবে না। অধিকাংশ মানুষ উচ্চশিক্ষিত এবং ভালো ইংরেজি বলতে পারে। ভাষা নিয়ে সমস্যা হবে না। তাছাড়া, বাংলাদেশি এক টাকার বিনিময় আপনি শ্রীলঙ্কান দেড় রুপি পাবেন, এর ফলে খরচ একদম বাংলাদেশের মতোই অনেকটা। বিমানবন্দরে কাউকে জিজ্ঞেস করলেও আপনাকে ঘোরার জায়গা বলে দিবে। লোকাল কোনো ট্যুর গাইডকে বললে ভালোভাবে দেশটিকে ঘুরে দেখাতে পারবেন। ইন্টারনেট থেকে ভালো টুরিস্ট প্যাকেজ নিয়েও চলে যেতে পারেন। আর আমি কিছু জায়গার নাম বলে দেই যেখানে না গেলেই নয়।
শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোতে গেলে হঠাৎ ঢাকার মতো বিরামহীন শহর মনে হতে পারে। হ্যাঁ, কিছুটা অবশ্য আমাদের রাজধানীর মতোই, তবে কলম্বোর কিছু অসাধারণ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। শহরের পাশেই দেহিওয়ালা বায়লজিক্যাল রিসার্ভ আছে। বাচ্চাদের নিয়ে জীবজন্তুর সমাহার দেখে আসতে পারেন। তাছাড়া আছে বিশ্বখ্যাত 'Ministry of Crabs' রেস্তোরাঁ। এবং রেস্তোরাঁটার মালিক দুজনও বিশ্বখ্যাত, কুমার সাঙ্গাকারা আর মাহেলা জাইওয়ারদানে। কাঁকড়া, স্কুইড, চিংড়ি, আর লাল কোরাল মাছ একবার খেলে আর ভুলতে পারবেন না। অল্প খরচে হোটেল মোটেল পেয়ে যাবেন শহরে।
এটি বাচ্চাদের লজেন্স ক্যান্ডি নয়। শ্রীলঙ্কার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর হচ্ছে ক্যান্ডি। এই শহরে কলম্বোর মতো উচু দালান কিংবা মানুষের ভিড় নেই। বরং আছে হাজার বছরের পুরানো চোখ ধাঁধানো সুন্দর কিছু প্রাসাদ। ক্যান্ডি সিনহালা রাজ্যের শেষ রাজধানী ছিল। সিনহালি রানির প্রাসাদ আছে শহরে। রানির প্রাসাদ অবশ্যই রাজকীয় হালেই তৈরি। কয়েকশ বছর কেটে গেলেও এই প্রাসাদের বলতে গেলে কিছুই হয়নি। আরেকটি হচ্ছে ‘দন্ত্য প্রাসাদ’। না, দাঁত দিয়ে তৈরি নয়, তবে এই প্রাসাদের ভেতর সুরক্ষিত আছে গৌতম বুদ্ধের একটি দন্ত্য। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা এই স্থানে প্রার্থনা করে থাকে। ক্যান্ডিতে, ক্যান্ডিয়ান আর্ট এসোসিয়েশন দ্বারা পরিচালিত শ্রীলঙ্কার ঐতিহ্যবাহী নৃত্য, সুর আর লাঠিখেলা দেখে আসবেন। ‘আদম চূড়া’ ঘুরে আসতে পারবেন ক্যান্ডি থেকে বাসে করে গিয়ে। ধর্মগ্রন্থে বলা আছে এই চূড়ার উপরেই স্বর্গ থেকে এসেছিল প্রথম মানব, আদম (আ.)। পর্বত চূড়ায় একটি সুবিশাল মানব পায়ের ছাপ রয়েছে।
হিক্কাদুয়া শ্রীলঙ্কার দক্ষিণে সোনালি বালুর সমুদ্র সৈকত। স্কুবা ডাইভিং, সার্ফিং কিংবা স্বচ্ছ কাচের নৌকায় চরে মাছ ধরা এবং সি-ফুড, সব একসঙ্গে পাবেন হিক্কাদুয়াতে। গালে শহরের পাশের এই সমুদ্র সৈকত আপনাকে মালদ্বীপ অথবা মরিশাসের ভাব এনে দিবে। গালে শহরে ঘুরে দেখতে পারবেন ডাচদের নির্মিত দুর্গ।
নুয়ালা এলিয়া একটি ছোট্ট পাহাড়ি শহর শ্রীলঙ্কার মাঝখানে। চা চাষের জন্য এই এলাকাটি ব্রিটিশদের অনেক পছন্দের স্থান ছিল। তারা অবকাশ কাটানোর উদ্দেশ্যে এখানে নির্মাণ করেছে বহু টি-রিসোর্টস। প্রাসাদ আকৃতির এসব দালানে এখন টুরিস্টরা থাকতে পারে টি-গার্ডেনের মালিকদের সঙ্গে চুক্তি করে। সকালে আপনাকে দিয়ে যাবে টাটকা চা, সঙ্গে লোকাল খাবারদাবার। শ্রীলঙ্কার চা এবং নারকেল কিন্তু বিশ্বখ্যাত। এলিয়ায় এই দুটোরই সমাহার বলতে গেলে।
উষ্ণপ্রধান দেশ হওয়ায় শ্রীলঙ্কাতে মাঝে-মধ্যে বৃষ্টির সঙ্গে স্যাঁতসেঁতে গরম থাকে। তবে বাঙালির জন্য সেটা ব্যাপার না। দেশের আবহাওয়া প্রায় একই। আমি আপনাদের কিছু টুরিস্ট হট স্পটের কথা বলে দিলাম। তবে হাতে সময় এবং ইচ্ছা থাকলে শ্রীলঙ্কার আর সব অভয়ারণ্য কিংবা প্রার্থনার মন্দির ঘুরে দেখতে পারেন, যেসব রয়েছে পুরো দেশটাজুড়ে। বাজেটের মধ্যে, অল্প সময়ে এবং অবশ্যই একটি ভালো বিদেশ ভ্রমণ করে আসতে চাইলে আপনি শ্রীলঙ্কার দিকে তাকাতে পারেন। বেশ ভালো হবে পরিবার কিংবা বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে ঘুরে আসলে।
- কাজী মাহ্দী আমিন