বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে যে উথাল-পাথাল চলছে তাতে বাংলাদেশি টাকা ডলারের বিপরীতে তেজিভাব দেখিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে ভারতীয় রুপির তুলনায় টাকার দরও অনেক বেড়েছে। টাকা ক্রমেই ভারতীয় রুপির বিপরীতে শক্তিশালী হয়ে উঠছে। গত শনিবার ১০০ রুপির দাম নেমে দাঁড়ায় ১১৩ টাকা। যদিও রবিবার সেটা ১১৬ তে দাঁড়ায়। তারপরেও সাম্প্রতিককালে এত কম দামে রুপি পাওয়া যায়নি। রুপির এই পতনে ভুগছে ভারতের পুঁজিবাজারও। গত এক মাসে দেশটির বেঞ্চমার্ক সূচক সেনসেক্স আট শতাংশেরও বেশি পতনে নামে।
ইন্টারনেট মানি এক্সচেঞ্জ সূত্রে জানা যায়, গতকাল রবিবার এক ইউএস ডলারের বিনিময়ে ভারতীয় মুদ্রার মূল্য দাঁড়িয়েছে ৭৪.০৭ রুপি। চলতি বছরের শুরুতে যা ছিল ৬৩.৮৮ রুপি। এ হিসাবে ১০ মাসের ব্যবধানে রুপির মান কমেছে প্রায় ১৫ শতাংশ। যা রুপির ইতিহাসে সর্বনিম্ন দর।
এদিকে ডলারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রুপির বিপরীতে বাংলাদেশি মুদ্রা শক্তিশালী হয়েছে। গত শনিবারও প্রতি রুপিতে মান দাঁড়িয়েছে এক টাকা ১৩ পয়সা। অর্থাৎ ১০০ রুপিতে মিলেছে ৮৯ টাকা। অন্যদিকে প্রতি ডলারের বিপরীতে টাকার মান দাঁড়িয়েছে ৮৩.৭৯ টাকা। রাজধানীর ধানমন্ডি মানি এক্সচেঞ্জের স্বত্বাধিকারী মো. আরজু আজকালের খবরকে বলেন, তথ্য অনুয়ায়ী রবিবার এক ডলারের দাম ছিল ৮৩.৭৯ টাকা। তবে লোকাল বাজারের দাম একটু বেশি। সে হিসাবে রবিবার এক ডলার ক্রয় হয়েছে ৮৫.২০ টাকায়, আর বিক্রি ৮৫.৭০ টাকা দরে। ভারতীয় রুপির দর ছিল ১.১৫ টাকা। ইউরো বিক্রি হয় ৯৮.৫০ টাকা দরে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টাকা শক্তিশালী হলে পণ্য আমদানি-রফতানিতে তেমন বড় প্রভাব পড়বে না। তবে ভ্রমণ কিংবা চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশ থেকে যারা ভারতে যাবেন তারা লাভবান হবেন। কারণ রুপি কিনতে এখন আগের চেয়ে টাকা কম লাগবে। রুপির এ মান ধারাবাহিক কমতে থাকলে এক সময় টাকা আর রুপি সমান হয়ে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ভারতের রুপির অবমূল্যায়ন হওয়ায় ডলারের বিপরীতে রুপির মান কমেছে। তবে রুপির যে হারে অবমূল্যায়ন হয়েছে সেই হারে আমাদের টাকার অবমূল্যায়ন হয়নি। যার কারণে রুপির মান টাকার কাছাকাছি চলে এসেছে। এতে ভারত থেকে পণ্য আমদানিতে কিছুটা সুবিধা হলেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে রফতানিতে। তিনি আরও বলেন, রুপির দরপতনের কারণে সবচেয়ে লাভবান হবেন বাংলাদেশি ভ্রমণকারীরা। তারা এক ডলারে আগের তুলনায় বেশি রুপি পাবেন। এতে পণ্য কেনাকাটায় খরচ কম লাগবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই প্রবণতা বজায় থাকলে বাংলাদেশে ভারতের রফতানি আরও বাড়বে। এ সপ্তাহে মার্কিন ডলারের বিপরীতে ভারতীয় রুপির দাম একটা সময় ১৫ শতাংশ পর্যন্ত পড়ে অথচ সেই একই সময়ে বাংলাদেশি টাকার পতন হয়েছে যৎসামান্য। এর ফলে রুপির বিপরীতে টাকার দাম এক লাফে অনেকটা বেড়েছে। আর এতে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যেও তার সরাসরি প্রভাব পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত পাকিস্তানি মুদ্রা রুপির বিপরীতে বাংলাদেশের মুদ্রা টাকার মান অনেক বেড়েছে। আর রুপির মান কমেছে। সার্বিকভাবে পাকিস্তানের অর্থনীতি খারাপের দিকে গেছে আর বাংলাদেশ একটু এগিয়ে রয়েছে। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হার ছিল ৭.৩০ টাকা। বর্তমানে এ হার ৮৪ টাকা। ওই সময়ে ডলারের বিপরীতে পাকিস্তানি রুপির বিনিময় হার ছিল ৪.২০ রুপি। এখন ১১৪ রুপি। ডলারের বিনিময় হারে পাকিস্তানি রুপির দাম কমেছে ১১০ টাকা। আর টাকার দাম কমেছে ৭৭ টাকা।
এছাড়া বাংলাদেশের চেয়ে যেসব দেশের মুদ্রার মান কম সেগুলো হলো- ১০ হাজার টাকার বদলে পাওয়া যায় ১৭ লাখ ৪৭ হাজার ৩৬০ ইন্দোনেশিয়ান রুপিয়াহ। নেপালি রুপির দামও অনেক কম। বাংলাদেশি ১ টাকার বিনিময়ে ১.৩৪ নেপালি রুপি পাওয়া যায়। সার্কভুক্ত দেশ শ্রীলংকায় বাংলাদেশি ১ টাকার বিনিময়ে পাওয়া যায় ১.৯২ শ্রীলংকান রুপি। মধ্যপ্রাচ্যের আঞ্চলিক রাজনীতিতে প্রভাবশালী দেশ ইরান। সেখানে বাংলাদেশি ১ টাকার বিনিময়ে পাওয়া যায় ৫৭১.৭২ ইরানিয়ান রিয়াল। ইরাকে বাংলাদেশি ১ টাকার বিনিময়ে পাওয়া যায় ১৪.২২ ইরাকি দিনার। দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপের দেশ আলবেনিয়ায় বাংলাদেশি ১ টাকার বিনিময়ে পাওয়া যায় ১.৩২ আলবেনিয়ান লিক। আলজেরিয়া হলো আফ্রিকা মহাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রাষ্ট্র। বাংলাদেশি ১ টাকার বিনিময়ে পাওয়া যাবে ১.৪২ আলজেরিয়ান দিনার। পশ্চিম এশিয়ার দেশ আর্মেনিয়ায় বাংলাদেশি ১ টাকার বিনিময়ে পাওয়া যায় ৫.৭৭ আর্মেনিয়ান ড্রাম। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ কম্বোডিয়ায় বাংলাদেশি ১ টাকার বিনিময়ে পাওয়া যায় ৪৮.৫৯ কম্বোডিয়ান রিয়েল। দক্ষিণ আমেরিকার দেশ চিলিতে বাংলাদেশি ১ টাকার বিনিময়ে পাওয়া যায় ৭.৯৮ চিলিয়ান পেসো। ইয়েমেনে বাংলাদেশি ১ টাকার বিনিময়ে পাওয়া যায় ২.৯৯ ইয়েমেনি রিয়াল। লেবাননে বাংলাদেশি ১ টাকার বিনিময়ে পাওয়া যায় ১৮.২ লেবানিজ পাউন্ড। উজবেকিস্তানে বাংলাদেশি ১ টাকার বিনিময়ে পাওয়া যাবে ৯৩.১ উজবেকিস্তানি সমান। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ ভিয়েতনামে বাংলাদেশি ১ টাকার বিনিময়ে পাওয়া যায় ২৭৮.১৩ ভিয়েতনামিজ ডং। পূর্ব আফ্রিকার দেশ বুরুন্ডিতে বাংলাদেশি ১ টাকার বিনিময়ে পাওয়া যায় ২১.৩ বুরুন্ডিয়ান ফ্রাঙ্ক।