আলেম-উলামাদের পুরোপুরি সমর্থন শেখ হাসিনার প্রতি

সংসদে পাস হয়েছে কওমি সনদের সরকারি স্বীকৃতির বিল। গত মাসে পাস হওয়া এই বিলটির মাধ্যমে কওমি মাদ্রাসায় পড়ুয়া প্রায় ২০ লাখ শিক্ষার্থী উপকৃত হচ্ছে। এটি কওমি মাদ্রাসা-সংশ্লিষ্টদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল। সরকারিভাবে স্বীকৃতি পাওয়ায় সামাজিকভাবে পিছিয়ে থাকা লাখ লাখ আলেম ও মাদ্রাসা শিক্ষার্থী মূলধারায় আসার সুযোগ পাবে। একদিকে এর দ্বারা

কওমিপড়ুয়ারা উপকৃত হবে অপরদিকে সমৃদ্ধ হবে দেশ ও জাতি। মূলধারায় সুযোগ পাওয়ার ফলে তারাও দেশের কল্যাণে বিশেষভাবে কাজ করতে পারবে। এই স্বীকৃতি বাস্তবায়ন হওয়ায় এখন কওমি মাদ্রাসা অঙ্গনে খুশির আবহ বিরাজ করছে। ইসলামপন্থিদের মধ্যে যারা আওয়ামী লীগ সরকারের কঠোর সমালোচক ছিলেন তারাও এখন এই সরকারের প্রশংসায় পঞ্চমুখ।

কওমি সনদের স্বীকৃতি বিলটি পাস হওয়ার পেছনে মূল অবদান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। সরকারের ভেতরে-বাইরে নানা মহলের চাপ উপেক্ষা করে তিনি একক ক্ষমতায় এই স্বীকৃতিটি বাস্তবায়ন করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, একমাত্র মাদ্রাসাপড়ুয়াদের কল্যাণের কথা বিবেচনা করে তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এর পেছনে তার রাজনৈতিক কোনো হীনস্বার্থ নেই। তিনি ‘আল্লাহর ওয়াস্তে’ এই স্বীকৃতি দিয়েছেন। গত মাসে জাতীয় সংসদে কওমি সনদের স্বীকৃতি বিলটি ওঠার পর প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির কোনো কোনো সদস্য এর বিরোধিতা করেন। তারা বিলটি পাস হওয়ার আগে অধিকতর যাচাই-বাছাইয়ের প্রস্তাব করেন। তবে শিক্ষামন্ত্রী সংসদকে জানান, এই বিলটি পাস করার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ নির্দেশনা রয়েছে। এবারের অধিবেশনে পাস না হলে বিলটি আটকে যেতে পারে। পরে কয়েকজন সাংসদের ভেটো সত্ত্বেও স্পিকার তার বিশেষ ক্ষমতাবলে বিলটি সংসদে উত্থাপনের অনুমতি দেন এবং ১৯ সেপ্টেম্বর বিলটি পাস হয়। ২০১৭ সালের ১১ এপ্রিল গণভবনে দেশের শীর্ষ আলেমদের উপস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী এই স্বীকৃতির ঘোষণা দিয়েছিলেন। নানা ধাপ পেরিয়ে সংসদে বিল আকারে পাস হওয়ার পর তাতে রাষ্ট্রপতি সম্মতিও জানিয়েছেন। এই স্বীকৃতি বাস্তবায়নে এখন আর কোনো বাধা রইল না।

কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক আলেম-উলেমাদের মধ্যে নানা ব্যাপারে মতপার্থক্য থাকলেও এই স্বীকৃতির ব্যাপারে সবাই একমত পোষণ করেন। হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী, যিনি কওমি মাদ্রাসাগুলোর সর্বোচ্চ বোর্ডেরও চেয়ারম্যান তার নেতৃত্বেই মূলত এই স্বীকৃতি দিয়েছে সরকার। ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে হেফাজতের অবস্থানকে কেন্দ্র করে তাণ্ডবের কথা উল্লেখ করে সরকারের ভেতরে-বাইরে অনেকে এই স্বীকৃতির বিরোধিতাও করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে এই ব্যাপারে প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তবে বঙ্গবন্ধুকন্যা জানান, তিনি যা করেছেন তা বুঝেশুনেই করেছেন। হেফাজতে ইসলাম শাপলা চত্বরে কী করল না করল, এর সঙ্গে কওমি শিক্ষার্থীদের সনদের স্বীকৃতির বিষয়টি না জড়াতে তিনি আহ্বান জানিয়েছেন।

কওমি সনদের স্বীকৃতি দেওয়ার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আলেম-উলেমাদের বিশেষ আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন। দেশের শীর্ষ আলেম হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা আহমদ শফী শেখ হাসিনার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। প্রকাশ্য অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, এতদিন শেখ হাসিনা সম্পর্কে তাকে ভুল বোঝানো হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের কাছ থেকে স্বীকৃতি নেওয়ায় যারা তার সমালোচনা করছে তাদের উদ্দেশে আল্লামা শফী বলেছেন, আমি আওয়ামী লীগ হইনি, আর আওয়ামী লীগ হয়ে গেলেও দোষের কিছু নেই। এ সময় তিনি জানান, আওয়ামী লীগ সরকার ইসলাম ও আলেম-উলেমাদের পক্ষে অনেক কাজ করেন। দেশের কওমি মাদ্রাসাগুলোতে আওয়ামী লীগের লোকেরা মোটা অঙ্কের অর্থ দিয়ে থাকেন।

এই স্বীকৃতি পাওয়ায় কওমি মাদ্রাসার আলেম-উলেমারা শেখ হাসিনা ও তার সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞ। এর স্বীকৃতিস্বরূপ তারা প্রধানমন্ত্রীকে সংবর্ধনা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। আল্লামা আহমদ শফীর নেতৃত্বে গত ২২ অক্টোবর একটি প্রতিনিধি দল গণভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে দাওয়াত করেন। তবে প্রধানমন্ত্রী জানান, এই কাজের জন্য স্বীকৃতি নেওয়া তার জন্য বিব্রতকর। তিনি আল্লাহকে খুশি করতেই এই স্বীকৃতি বাস্তবায়ন করেছেন। তিনি সংবর্ধনা চান না, শুধু আলেম-উলেমা এবং লাখ লাখ মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর দোয়া চান। তবে আলেমদের পীড়াপীড়িতে অবশেষে সিদ্ধান্ত হয়েছে, কওমি স্বীকৃতি বাস্তবায়ন হওয়ায় আগামী ৫ নভেম্বর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শোকরিয়া মাহফিল হবে। সেখানে প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত থাকবেন। ইতিমধ্যে এই অনুষ্ঠান বাস্তবায়নে প্রস্তুতি শুরু হয়েছে।

তবে আওয়ামী লীগ সরকার কওমি মাদ্রাসার এই স্বীকৃতি বাস্তবায়ন করায় বিএনপি-জামায়াতের পক্ষে তা মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে। তারা কওমি আলেম-উলেমা ও আল্লামা শফীর বিরুদ্ধে নানা প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আল্লামা শফীকে আওয়ামী লীগের ‘দালাল’ হিসেবে চিহ্নিত করার এক চেষ্টা অব্যাহত আছে। আওয়ামী লীগ সরকার শাপলা চত্বরে ‘শত শত লোককে মেরেছে’, তাদের কাছ থেকে কীভাবে স্বীকৃতি নিলেন আলেমরা সেই প্রশ্নও তুলেছে কেউ কেউ। তবে হেফাজতে ইসলামের পক্ষ থেকে স্পষ্ট করা হয়েছে, এই স্বীকৃতির সঙ্গে শাপলা চত্বরের ঘটনার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। স্বীকৃতি কওমিপড়ুয়া লাখো শিক্ষার্থীর অধিকার, সেই অধিকার যে সরকার দেবে তার কাছ থেকেই নেওয়া হবে।

মূলত ২০০৬ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া কওমি সনদের স্বীকৃতির ঘোষণা দিয়েছিলেন। সেই সময় সরকারের সহযোগী ছিল জামায়াতে ইসলামী। যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত এই দলটির সঙ্গে কওমি আলেমদের বিরোধ দীর্ঘদিনের। বরাবরই জামায়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা আবুল আল মওদুদির ভ্রান্ত চিন্তাধারার কড়া সমালোচক কওমি আলেমরা। এজন্য জামায়াতে ইসলামী কওমিপড়ুয়াদের ভালো কিছু চায় না বলে অভিযোগ আছে। বিএনপি কওমি সনদের স্বীকৃতি দিতে চাইলেও জামায়াতের চাপের কারণে তা বাস্তবায়ন হয়নি। এই ইস্যুতে সেই সময় চারদলীয় জোটে থাকা কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক দলগুলোর সঙ্গে বিএনপির দূরত্ব তৈরি হয়।

বিএনপির সঙ্গে আলেমদের সেই দূরত্ব দিন দিন শুধু বেড়েছেই। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে সেই সুযোগটি কাজে লাগাতে চায়। ২০১২ সালে কওমি সনদের স্বীকৃতির উদ্যোগ নেয় সরকার। তবে কওমি মাদ্রাসা-সংশ্লিষ্টদের পারস্পরিক বিরোধের কারণে এক পর্যায়ে সেই উদ্যোগ থমকে যায়। এর মধ্যেই ২০১৩ সালে ১৩ দফা ইস্যুতে আন্দোলনে নামে হেফাজতে ইসলাম। ঘটে শাপলা চত্বরের ঘটনা। এতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলেম-উলেমার বেশ দূরত্ব সৃষ্টি হয়। তবে সরকার সেই বিরোধ আর বাড়তে দেয়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতা এবং কৌশলের কারণে আস্তে আস্তে সব তিক্ততা ভুলে আলেমরা সরকারের ঘনিষ্ঠ হতে থাকেন। কওমি সনদের স্বীকৃতি বাস্তবায়ন হওয়ায় সেই ঘনিষ্ঠতা আরও বেড়েছে।




জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকারও চাচ্ছে ইসলামপন্থিদের নিজেদের পক্ষে রাখতে। ভোটের হিসাবে এদেশে ইসলামপন্থিদের তেমন কোনো অবস্থান না থাকলেও সাধারণ ভোট প্রভাবিত করার ক্ষেত্রে তারা একটি বড় ফ্যাক্টর। যে কয়বার নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভরাডুবি হয়েছে প্রায় সবখানেই ‘অপপ্রচার’ ছিল বলে মনে করে আওয়ামী লীগ। আর এই ‘অপপ্রচারে’ বড় ভূমিকা পালন করে ইসলামপন্থিরা। এজন্য আগের চেয়ে অনেক বেশি কৌশলী শেখ হাসিনা চান না এই শ্রেণিটি তার বিপক্ষে থাকুক। এই শ্রেণিটি নৌকায় ভোট না দিলেও অন্তত বিপক্ষে যেন ভোটারদের উস্কে না দিতে পারে সেদিকে তার বিশেষ নজর। আর এই কৌশলে বঙ্গবন্ধুকন্যা পুরোপুরিই সফল বলতে হবে। সবশেষ কওমি সনদের স্বীকৃতি বাস্তবায়ন করে তিনি ইতিহাসের অংশ হয়ে রইলেন। এই মুহূর্তে ইসলামপন্থিরা শেখ হাসিনার প্রতি যতটা আস্থাশীল তা অতীতে কখনো ছিল না। এই আস্থাটি আগামী নির্বাচনের বৈতরণী পার হওয়ার ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার জন্য বিশেষ সহায়ক হবে বলেই মনে করেন বিশ্লেষকরা।







নাম

অর্থ ও বাণিজ্য,235,আন্তর্জাতিক,731,কাপাসিয়া,342,কালিয়াকৈর,417,কালীগঞ্জ,253,খেলা,644,গাজীপুর,3936,চাকরির খবর,33,জয়দেবপুর,1581,জাতীয়,2958,টঙ্গী,911,তথ্যপ্রযুক্তি,512,ধর্ম,196,পরিবেশ,136,প্রতিবেদন,310,বিজ্ঞান,55,বিনোদন,697,ভিডিও,58,ভিন্ন খবর,142,ভ্রমন,115,মুক্তমত,27,রাজধানী,829,রাজনীতি,1055,লাইফস্টাইল,283,শিক্ষাঙ্গন,398,শীর্ষ খবর,10757,শ্রীপুর,481,সাক্ষাৎকার,12,সারাদেশ,649,স্বাস্থ্য,212,
ltr
item
GazipurOnline.com: আলেম-উলামাদের পুরোপুরি সমর্থন শেখ হাসিনার প্রতি
আলেম-উলামাদের পুরোপুরি সমর্থন শেখ হাসিনার প্রতি
https://3.bp.blogspot.com/-lImSs6DU2AA/W9rzy5uvxsI/AAAAAAAAZ6M/GWApiyT1TIoIxmPYBOGlJC-DXYHp5BvAQCLcBGAs/s400/Sheikh-hasina-hefajot.jpg
https://3.bp.blogspot.com/-lImSs6DU2AA/W9rzy5uvxsI/AAAAAAAAZ6M/GWApiyT1TIoIxmPYBOGlJC-DXYHp5BvAQCLcBGAs/s72-c/Sheikh-hasina-hefajot.jpg
GazipurOnline.com
https://www.gazipuronline.com/2018/11/alemolama.html
https://www.gazipuronline.com/
https://www.gazipuronline.com/
https://www.gazipuronline.com/2018/11/alemolama.html
true
13958681640745950
UTF-8
Loaded All Posts Not found any posts VIEW ALL Read More Reply Cancel reply Delete By প্রচ্ছদ PAGES POSTS View All RECOMMENDED FOR YOU LABEL ARCHIVE SEARCH ALL POSTS Not found any post match with your request Back Home Sunday Monday Tuesday Wednesday Thursday Friday Saturday Sun Mon Tue Wed Thu Fri Sat January February March April May June July August September October November December Jan Feb Mar Apr May Jun Jul Aug Sep Oct Nov Dec just now 1 minute ago $$1$$ minutes ago 1 hour ago $$1$$ hours ago Yesterday $$1$$ days ago $$1$$ weeks ago more than 5 weeks ago Followers Follow THIS PREMIUM CONTENT IS LOCKED STEP 1: Share. STEP 2: Click the link you shared to unlock Copy All Code Select All Code All codes were copied to your clipboard Can not copy the codes / texts, please press [CTRL]+[C] (or CMD+C with Mac) to copy