সংবিধানের বাইরে গিয়ে কিছুই করা হবে না- ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে সাফ জানিয়ে দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সাড়ে তিন ঘণ্টার সংলাপ শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ ওবায়দুল কাদের রাত ১১টার দিকে এ কথা জানান গণমাধ্যমকর্মীদেরকে।
এর আগে সন্ধ্যা সাতটা থেকে রাত ১০টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত কথা হয় দুই পক্ষে। সংলাপ শেষে বেরিয়ে যাওয়ার সময় কামাল হোসেন বলেন, ‘ভালো আলোচনা হয়েছে।’
ওবায়দুল কাদেরও বলেন, ‘অত্যন্ত খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। ড. কামাল হোসেনসহ সবার কথা আমাদের নেত্রী অখ- মন নিয়ে শুনেছেন। একজন দুইবার তিনবার চারবার কথা বলেছেন। তিনি একবারও অধৈয্য হননি।’
‘আমাদের পক্ষ থেকেও আমাদের সিনিয়র নেতারা বক্তব্য দিয়েছেন।’
ঐক্যফ্রন্টের দাবি ছিল সাত দফা। তবে প্রধান দাবি ছিল সংসদ ভেঙে দিয়ে সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা সংবিধানের বাইরে যাব না।’
‘একটা ব্যাপার পরিস্কারভাবে বলেছি, ড. কামাল হোসেন সাহেবের চিঠির উত্তরেও একটা কথা লেখা ছিল সেখানে। বলা ছিলম, সংবিধান সম্মত সকল বিষয়ে আলোচিত হবে, গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখার বিষয়। কাজেই উই কেন নট গো বিয়ন্ড দ্য কনস্টিটিউশন।’
নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে আলোচনা হয়েছে কি না- জানতে চাইলে কাদের বলেন, ‘না, এসব কোনো বিষয়ে আলোচনা হয়নি। আমার মনে হয় প্রাইম মিনিস্টার যেসব যুক্তি দিয়ে কথা বলেছেন, তাদের নেতৃবৃন্দ অনেকেই কনভিনসড হয়েছেন বলে আমরা মনে করি।’
সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচনের দাবি সংলাপে নাকচ হয়েছে। কাদের বলেন, ‘পৃথিবীর কোনো গণতান্ত্রিক দেশে সংসদ ভেঙে নির্বাচন হয় না। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতের উদাহরণ দেয়া হয়েছে। আসলে নির্বাচন সব দায় দায়িত্ব নির্বাচন কমিশন। শিডিউল ঘোষণার পরই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান ইলেকশন কমিশনের ওপর ন্যস্ত হবে। কাজেই এসব বিষয়ে তাদের ভয়ের কোনো কারণ নেই, তাদের শঙ্কার কোনো কারণ নেই।’
‘প্রধানমন্ত্রী তাদেরকে অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের নিশ্চয়তা আমাদের সরকারের পক্ষ থেকে দিয়েছে। নির্বাচন কমিশন কর্তৃত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে। সরকার হস্তক্ষেপ করবে না।’
আলোচনার বিষয়বস্তু সম্পর্কে কাদের বলেন, ‘কিছু কিছু বিষয়ে আলোচনা হয়েছে, কিছু কিছু বিষয়ে অভিযোগ করা হয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকেও ভদ্রতার সঙ্গে শালীনতার সঙ্গে জবাব দেয়া হয়েছে।’
‘আলোচনা অব্যাহত থাকবে। এখানে কিছু কিছু বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি। আমাদের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরিস্কারভাবে বলে দিয়েছেন, সভা সমাবেশ তথা মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকবে।’
কাদের বলেন, সভা সমাবেশে বাধা না দেয়ার নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে ঐক্যফ্রন্টকে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রয়োজনে একটি কর্ণার করে দেয়ার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।
রাজনৈতিক মামলার বিষয়ে সংলাপে ড. কামাল হোসেন এবং মির্জা ফখরুলের কাছ থেকে তালিকা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। আশ্বাস দিয়েছেন সেই তালিকা দেখে যেটা রাজনৈতিক মামলা মনে হবে, সেটা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
নির্বাচনে বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে সেনাবাহিনী মোতায়েনের বিষয়টিও কার্যত নাচক করেছেন প্রধানমন্ত্রী। ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ড. কামাল হোসেনকে আমাদের নেতৃবৃন্দ বলেছেন, আপনিই বলুন, আপনিও তো ইলেকশন করেছেন। স্বাধীনতার পর থেকে বহু নির্বাচনই হয়েছে এই দেশে। এসব নির্বাচনের মধ্যে কেবল মাত্র ২০০১ সালেই একবার সেনাবাহিনীকে এই দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। এছাড়া কোনো নির্বাচনে বাংলাদেশে সেনাবহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার ছিল না। কাজেই এখন কেন চান?’
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি নিয়ে আশ্বাস মেলেনি। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এটা আইনের ব্যাপার, আদালতের বিষয়। আইন আদালতের বিষয়ের সঙ্গে সংলাপে কোনো বিষয় সংলাপের মধ্যে আসতে পারে না। কাদের বলেন, ‘যে দুটি মামলায় তার দ- হয়েছে, এটা কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মামলা। আমাদের নেত্রী এটাই বলেছেন, এটা আমি ফাইল করিনি। এটা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মামলা। সে সরকারের দায়িত্বে যারা ছিলেন, তারা বিএনপির লোক।’
‘আমাদের নেত্রীর বিরুদ্ধে ১৬টি মামলা ছিল। সেগুলো তদন্ত করে রিপোর্ট হয়েছে, কোনো মামলা প্রত্যাহার হয়নি।’
নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করার দাবিও মানেননি প্রধানমন্ত্রী। কাদের জানান, সরকার প্রধান বলেছেন,‘ইভিএম আধুনিক পদ্ধতি, সাপোর্ট করি। তবে এবার ইভিএম হয়ত নির্বাচন কমিশন সীমিতভাবে ব্যবহার করবে। এতে আমাদের সমর্থন থাকবে।’
তবে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের ভোট পর্যবেক্ষণে সকারের কোনো আপত্তি থাকবে না বলে জানান কাদের।
এই আলোচনায় ঐক্যফ্রন্ট সন্তুষ্ট কি না, জানতে চাইলে কাদের বলেন, ‘তারা খুশি কি অখুশি এটা তারা বলবে। হাউ ক্যান আই সে?’
‘ড. কামাল হোসেন প্রাইম মিনিস্টারকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। তিনি মন্তব্য করেছেন, আপনি যে সব বক্তব্যগুলো দিয়েছেন, তার অনেক কিছু আমি জানতাম না।’
‘ছোট পরিসরে বসার ব্যাপারে আমাদের নেত্রী বলেছেন, আমার দ্বার উন্মুক্ত। আগামী ৮ তারিখ পর্যন্ত আরও কয়েকটি সংলাপ আছে। তারা এলেই হবে। তারা যদি মনে করেন আসা দরকার। আমাদের ইনফরমেশন দিলেই চলবে।’
বিএনপি নির্বাচনে আসবে কি না- জানতে চাইলে কাদের বলেন, ‘সে কথা তাদেরই জিজ্ঞেস করুন।’