ডেস্ক: ভাওয়াল রাজার রাজধানী খ্যাত গাজীপুর ইতিহাস ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ একটি জেলা। ঢাকার খুব পাশপাশি হওয়ায় এ জেলা শিল্প-কারখানায় খুবই উন্নত। ভৌগলিক কারণে এ জেলার রাজনীতি সারাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
গাজীপুর জেলায় রয়েছে মোট পাঁচটি সংসদীয় আসন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সারাদেশের মতো গাজীপুরেও বইছে নির্বাচনী হাওয়া। এ জেলার পাঁচটি আসনে মূলত আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতেই মূল প্রতিদ্বন্বিতা হবে। বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদের জন্মভূমি হওয়ায় গাজীপুরে আওয়ামী লীগের ঘাঁটি।
গাজীপুর-১: গাজীপুর-১ সংসদীয় আসন কালিয়াকৈর উপজেলা এবং গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ০১ হতে ১৮ নং ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত। বর্তমানে এ আসনের সাংসদ আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আকম মোজোম্মেল হক।
আকম মোজোম্মেল হক এবারও আওয়ামী লীগের টিকিটে নির্বাচন করবেন। তার বিপরীতে এ আসনে নির্বাচনী লড়াই করবেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সাবেক সদস্য চৌধুরী তানভীর আহমেদ সিদ্দিকী। বিএনপি থেকে অব্যাহতি পাওয়া চৌধুরী তানভীর আহমেদ সিদ্দিকীকে বিএনপিতে ফিরিয়ে এনে মনোনয়ন দিল বিএনপি।
এ আসনে ২০০৮ সালেও নির্বাচিত হয়েছিলেন আকম মোজাম্মেল হক।
গাজীপুর-২: গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ১৯ থেকে ৩৮ নং ওয়ার্ড ও ৪৩ থেকে ৫৭ নং মোট ৩৫টি ওয়ার্ড এবং গাজীপুর ক্যান্টনমেন্ট এলাকা নিয়ে গঠিত গাজীপুর-২ সংসদীয় আসনটি গঠিত। সিটি করপোরেশনের অধিকাংশ এলাকা ও ক্যান্টনমেন্ট এলাকা নিয়ে এ আসন গঠিত হওয়ায় গাজীপুরের রাজনীতিতে এ আসনের গুরুত্ব অনেক।
গাজীপুর-২ আসনের বর্তমান সাংসদ আওয়ামী লীগের জাহিদ আহসান রাসেল। এবারও তিনি নৌকার হয়ে নির্বাচন করছেন। তরুণ সাংসদ জাহিদ আহসান রাসেলের বিপরীতে বিএনপির প্রার্থী সালাউদ্দিন সরকার।
যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. জাহিদ আহসান রাসেলের বাবা আহসান উল্লাহ মাষ্টার এ আসনের সাংসদ ছিলেন। আহসান উল্লাহ মাষ্টার সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হলে জাহিদ আহসান রাসেল সাংসদ হন। আহসান উল্লাহ মাষ্টার শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ছিলেন।
অন্যদিকে, সালাউদ্দিন সরকার জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি।
এ আসনে ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে সাংসদ হন আহসান উল্লাহ মাষ্টার। তিনি মারা যাওয়ার পর উপ-নির্বাচনে সাংসদ হন তার ছেলে জাহিদ আহসান রাসেল। ২০০৮ সালেও জিতেন জাহিদ আহসান রাসেল।
গাজীপুর-৩: গাজীপুর-৩ সংসদীয় আসনটি শ্রীপুর উপজেলা এবং সদর উপজেলার মির্জাপুর, ভাউয়ালগর ও পিরুজালী ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। বর্তমানে এ আসনের সাংসদ আওয়ামী লীগের মো. রহমত আলী।
মো. রহমত আলী এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাননি। আওয়ামী লীগের হয়ে এবার নির্বাচনী দৌড়ে আছেনমোহাম্মদ ইকবাল হোসেন সবুজ। তার বিপরীতে ঐক্যফ্রন্ট থেকে এ আসন থেকে লড়বেন ইকবাল সিদ্দকী।
মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন সবুজ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও শ্রীপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। অন্যদিকে, ইকবাল কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং ও ইশতেহার কমিটির সদস্য।
এ আসন থেকে ২০০৮ সালেও নির্বাচিত হয়েছিলেন মো. রহমত আলী।
গাজীপুর-৪: গাজীপুর উপজেলার কাপাসিয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসন। বর্তমান এ আসনের সাংসদ তাজউদ্দিন আহমেদের কন্যা সিমিন হোসেন রিমি।
সিমিন হোসেন রিমি এবারও এ আসনে নৌকার হয়ে নির্বাচনে লড়ছেন। তার বিপরীতে এ আসনে ধানের শীষ নিয়ে লড়ছেন রিয়াজুল হান্নান। তিনি প্রয়াত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য হান্নান শাহর ছেলে।
২০০৮ সালে এ আসন থেকে সাংসদ হয়েছিলেন তাজউদ্দিন আহমেদের ছেলে তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ। তিনি সাংসদ হয়ে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বও পেয়েছিলেন। কিন্তু নবম জাতীয় সংসদের মাঝপথে তিনি পদত্যাগ করেন। তিনি পদত্যাগ করলে উপ-নির্বাচনে তার বোন সিমিন হোসেন রিমি এ আসনের সাংসদ হন।
গাজীপুর-৫: গাজীপুর-৫ আসনটি গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলা, সদর উপজেলার বাড়িয়া ইউনিয়ন এবং গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন ৩৯, ৪০, ৪১ ও ৪২ নং ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত। বর্তমানে এ আসনের সাংসদ মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী।
আওয়ামী লীগের হয়ে মেহের আফরোজ চুমকি এবারও নির্বাচন করছেন। এ আসনে নৌকার মনোনয়ন চেয়েছিলেন চিত্রনায়ক ফারুক। তাকে অবশ্য ঢাকা-১৭ আসনে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে।
মেহের আফরোজ চুমকির বিরুদ্ধে এ আসনে ধানের শীষ নিয়ে লড়বেন ফজলুল হক মিলন। তিনি গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সাংসদ।
এ আসনে ২০০৮ সালেও নির্বাচিত হয়েছিলেন মেহের আফরোজ চুমকি।