এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদারের বিরুদ্ধে উঠা মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ তদন্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির নতুন মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা। তিনি বলেন, শুধু সাবেক মহাসচিবই নয়, মনোনয়ন বাণিজ্যের সঙ্গে কারও জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে জাতীয় পার্টির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সোমবার বিকেলে রাজধানীর বনানীতে দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন রাঙ্গা।
একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে এরশাদ ‘অসুস্থ হয়ে’ হাসপাতালে ভর্তি থাকার মধ্যে তার ও মহাসচিব হাওলাদারের বিরুদ্ধে মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ তোলেন জাতীয় পার্টির বেশ কয়েকজন মনোনয়ন প্রত্যাশী। এরপর পটুয়াখালী-১ আসনে হাওলাদারের মনোনয়নপত্র বাতিলের পর সোমবার আকস্মিকভাবেই জাতীয় পার্টির মহাসচিব পরিবর্তনের ঘোষণা আসে। এরশাদ দলীয় চেয়ারম্যানের ক্ষমতাবলে হাওলাদারকে সরিয়ে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য রাঙ্গাকে মহাসচিব করেছেন বলে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের প্রেস সচিব সুনীল শুভ রায় জানান।
রংপুরের এমপি রাঙ্গা আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীর বর্তমান সরকারে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে রয়েছেন; তিনি রংপুর জেলা ও মহানগর জাতীয় পার্টির সভাপতি তিনি। পরিবহন মালিকদের সবচেয়ে বড় সংগঠন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতিতে সভাপতির দায়িত্বেও রয়েছেন রাঙ্গা। মহাসচিবের দায়িত্ব নিয়ে প্রথম সংবাদ সম্মেলনে রাঙ্গা মনোনয়ন বাণিজ্য নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে বলেন, এই অভিযোগের প্রসঙ্গে সত্যতা, অসত্যতা রয়েছে। নানা বক্তব্য আছে। আমরা জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্যরা গত রাতে আলোচনা করেছি। অভিযোগ প্রমাণিত হলে জাতীয় পার্টির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জাতীয় পার্টির মনোনয়নপত্র বিতরণের শেষে বেশকজন নেতা অভিযোগ করেন, মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে মনোনয়ন বাণিজ্য হয়েছে। এই অভিযোগকে অস্বীকার করে আসছিলেন জাতীয় পার্টির সাবেক মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার। তিনি বলছিলেন, অভিযোগকারীরা কোনো একটি পক্ষ থেকে টাকা খেয়ে তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করছে।
এই প্রসঙ্গে মসিউর রহমান রাঙা বলেন, মনোনয়ন নিতে এসে যারা লাঞ্চিত হয়েছেন, যারা টাকা-পয়সা নেয়ার অভিযোগ এনেছেন, তারা যদি আমাদের কাছে লিখিত অভিযোগ জানান, তবে আমরা ব্যবস্থা নেব। আমরা একটা কমিটি করে দেব। তারপর প্রেসিডিয়াম সদস্যরা তদন্ত করব। দোষী হলে আমরা গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।
হাওলাদারকে ঠিক কোন কারণে মহাসচিবের পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে, সে সম্পর্কে স্পষ্ট করে কিছু না বললেও রাঙা বলেন, আপনারা জানেন, ঋণখেলাপি হওয়ার কারণে তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারছেন না। তার মনোনয়ন গৃহীত হয়নি। তবে মাননীয় চেয়ারম্যান তাকে কেন অব্যাহতি দিয়েছেন, তা তিনি বলবেন।
মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগের সময়ে জাপার বেশকজন কেন্দ্রীয় নেতার পদত্যাগের বিষয়ে রাঙা বলেন, যেসব সংসদ সদস্য ও নেতা দল থেকে পদত্যাগ করেছেন, তাদের বলব আপনারা ফিরে আসুন। চেয়ারম্যান স্যার আপনাদের সন্তানের মতো ভালোবাসেন। পিতাইতো ধমক দেন অভিমান নাকরে ফিরে আসুন আপনারা। আমাকে জাপা থেকে তিন বার বহিস্কার করে দেয়া হলেও আমি দল ছেড়ে চলে যাইনি।
সংবাদ সম্মেলনে রাঙা অভিযোগ করেন, জাতীয় পার্টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে যখন সংগঠিত হয়ে উঠে, তখন একটি অশুভ শক্তি দলের মধ্যে ঢুকে পড়ে। মহাজোটের সঙ্গে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে যাওয়া জাপার নেতারা এখনও জানেন না মহাজোট থেকে জাপা প্রকৃতপক্ষে কতটি আসন পাবে। এ নিয়ে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়।
তিনি বলেন, অন্তত তিন মাস আগে জানা উচিৎ ছিল, কারা আমাদের প্রার্থী হবেন। এখন পর্যন্ত প্রার্থী হিসেবে অর্থকড়ি খরচ করেছেন অনেকে। তাদের মানসম্মানের ক্ষতি হোক, এটা তো আমরা চাই না।